স্টাফ রিপোর্টার:
মহালয়া শেষ, এখন দেবী অভিষেকের পর্ব। সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার আনন্দে মেতে ওঠার অপেক্ষায় দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। কাল বাদে পরশু ষষ্ঠী, সেদিনই মণ্ডপে অভিষেক হবে দুর্গাপ্রতিমার। তাই শেষ মুহূর্তে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমাশিল্পীরা। পাশাপাশি সমানতালে চলছে মণ্ডপসজ্জার কাজও।
সরেজমিনে রবিবার (৬ অক্টোবর) পুরান ঢাকার মণ্ডপগুলো ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশই মণ্ডপের প্রতিমা এবার অর্ডার দিয়ে বানানো হচ্ছে। তাই এখনও মণ্ডপগুলো প্রতিমাশূন্য। তবে চলছে অন্য সাজসজ্জার কাজ। মণ্ডপগুলোর পাশাপাশি তৈরি করা হচ্ছে সুসজ্জিত তোরণ। এ ছাড়া উৎসবের মাত্রা বাড়াতে করা হচ্ছে লাইটিং। টানা বৃষ্টির কারণে সাজসজ্জার এসব কাজ আটকে থাকায় এদিন ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে সংশ্লিষ্টদের।
অন্যদিকে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমাশিল্পীরাও। প্রতিমাগুলোর ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বৃষ্টির কারণে কাজে বাধা পড়েছে তাদেরও। তাই রোদ উঠতেই কাজে নেমে পড়েছেন তারাও। প্রতিমার আকৃতি দেওয়ার কাজ শেষ হয়েছে আগেই। এখন প্রতিমা সাজসজ্জা ও রঙের কাজ চলছে।
কোথাও চলছে রং-তুলির আঁচড়ে দেবীকে রাঙিয়ে তোলার কাজ। আবার কোথাও চলছে রং করার প্রস্তুতি। মনের মাধুরী মিশিয়ে ফুটিয়ে তুলছেন দুর্গা দেবীকে। দেবীদুর্গার প্রতিমা ছাড়াও কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী ও সরস্বতীসহ অন্যান্য প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন তারা।
বাংলাবাজারে লক্ষ্মী নারায়ণ জিউ ঠাকুর মন্দিরে প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন শিল্পী দিলীপ পাল। এ বছর খুব বেশি কাজ নেই তার হাতে। পাঁচটি কাজের ডেলিভারি সম্পন্ন করেছেন। এখন বাকি আছে দুটি।
দিলীপ পাল বলেন, ‘এ বছর কাজ কম, তাই ব্যস্ততাও কম। গত বছর ১৪টি কাজ করেছিলাম। এবার সাতটি কাজ করছি। দেশের পরিস্থিতি খারাপ থাকায় অনেকেই পরে যোগাযোগ করেছে। তাদের কাজ নিতে পারিনি। ইতোমধ্যে পাঁচটি কাজ শেষ। বাকি আছে দুটি। বৃষ্টির কারণে রঙের কাজ করা হয়নি। এখন রং শুরু করবো। তারপর সাজসজ্জা।’
এই মন্দিরের পূজা উদযাপন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল সাহা বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে এ কয়দিন কাজ করাতে পারিনি আমরা। ষষ্ঠী চলে আসছে, তাই একটু ব্যস্ততা যাচ্ছে। আজ প্যান্ডেল আর লাইটিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে। নিরাপত্তা নিয়ে একটা শঙ্কা কাজ করছে। তবে সেনাবাহিনী-বিজিবি নিয়মিত আসছে। আমাদের সঙ্গে কথা বলছে। সরকার আনসার নিয়োগ দিয়েছে। আশা করছি সুন্দরভাবইে এবার পূজা শেষ হবে।’
পাশেই শিরিস দাস লেনের প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শিল্পী বলাই চন্দ্র পাল। প্রায় ৪৫ বছর ধরে এই পেশায় আছেন তিনি। এবার ৯টি প্রতিমার কাজ করছেন তিনি। গত বছর করেছিলেন ১২টি প্রতিমার কাজ। তার সব প্রতিমার কাজই শেষ। এখন চলছে রংতুলির আঁচড়ে সাজিয়ে তোলা আর অন্যান্য সাজসজ্জার কাজ।
বলাই চন্দ্র পাল বলেন, ‘এবার মানুষের হাতে টাকা কম, জিসিপত্রের দাম বেশি। তাই এবার কাজ কম পেয়েছি। বুধবার ষষ্ঠী, তাই অভিষেকের আগে কাজ শেষ করতে হবে; দিন-রাত কাজ করতে হচ্ছে। এখন রং আর সাজসজ্জার কাজ একসঙ্গে করছি। আমরা ৯ জন আছি এবার। দিন-রাত কাজ করেও কুলাতে পারছি না।’
প্রতিমা তৈরির অনুষঙ্গের দাম বাড়লেও শিল্পীর দাম বাড়েনি জানিয়ে আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘প্রতিমা তৈরির সব জিনিসের দাম দুই থেকে তিন গুণ বেড়েছে। বিচালি, বাঁশ-কাঠ, তারকাঁটা, এঁটেল মাটি, বেলে মাটি—সবকিছুর দামই বেশি। বিচালি গত বছর কিনেছি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা মুঠি। এবার কিনতে হচ্ছে ৩৫০ টাকা করে। এরপরও যারা অর্ডার দিয়েছেন, তারা বলছেন কম নেওয়ার কথা। ব্যবসা না থাকার অজুহাত সবার। কিন্তু আমাদের শ্রমের দামই কমেছে।’
শাঁখারি বাজারের প্রতিমাশিল্পী সুশীল নন্দীর মৃত্যুর পর কাজ করছেন তার মেয়ে অনামিকা নন্দী। তিনি ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজে অনার্সে পড়াশোনা করছেন।
অনামিকা বলেন, ‘এবার দুটা বড় প্রতিমা অর্ডার আছে, যথাক্রমে ৮০ হাজার ও ৬০ হাজার টাকা করে বিক্রি করা হবে। তবে প্রতিমাগুলোয় লাভ খুব সীমিত হয়ে থাকে। আর সারা বছর অর্ডার অনুযায়ী দোকানে আমাদের প্রতিমা বানানোর কাজ চলে।’