ডেস্ক রিপোর্ট:
অবশেষে উত্তরাঞ্চলবাসীর দীর্ঘ প্রায় এক যুগ প্রতীক্ষার অবসান হয়েছে। গাইবান্ধার বোনারপাড়া-দিনাজপুর রুটে দীর্ঘ ১১ বছর বন্ধ থাকা রামসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি পুনরায় চালু হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) দুপুর দেড়টার দিকে গাইবান্ধার বোনারপাড়ায় ট্রেনটির উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। এ সময় গাইবান্ধা-৫ (ফুলছড়ি-সাঘাটা) আসনের সংসদ সদস্য মাহামুদ হাসান রিপন এবং জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের জনগণ উপস্থিত ছিলেন।
এবার বোনারপাড়া-দিনাজপুর নয়, মেইল ট্রেনটি চলবে বোনারপাড়া থেকে উত্তরের শেষ জেলা পঞ্চগড় পর্যন্ত। পরিবর্তন আনা হয়েছে সময়সূচিতেও।
বোনারপাড়া রেলস্টেশন সংশ্লিষ্টরা জানান, আগে রামসাগর এক্সপ্রেস বোনারপাড়া থেকে দিনাজপুর পর্যন্ত চললেও এবার ট্রেনটি চলবে বোনারপাড়া রেলস্টেশন থেকে পঞ্চগড় বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম (বী.মু.সি.ই) রেলস্টেশন পর্যন্ত। বোনারপাড়া রেলস্টেশন থেকে সকাল সাড়ে ৫টায় ছেড়ে গিয়ে ট্রেনটি বী.মু.সি.ই স্টেশনে পৌঁছাবে দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে। এই নয় ঘণ্টা ২০ মিনিটে ট্রেনটি ২৪টি রেলস্টেশন অতিক্রম করে পাড়ি দিবে ২৬৪ কিলোমিটার রেলপথ। যার প্রত্যেকটি স্টেশনেই ওঠানামা করবে যাত্রীরা। সর্বোচ্চ ৯০ টাকায় যাত্রীরা বোনারপাড়া থেকে পঞ্চগড় পর্যন্ত যেতে পারবে। আর সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ টাকা। দশটি কোচের (বগি) এই ট্রেনটি যাত্রী বহন করতে পারবে ৬৭৮ জন। এটি বন্ধ থাকবে বৃহস্পতিবার (বি.মু.সি.ই-বোনারপাড়া), শুক্রবার (বোনারপাড়া-বি.মু.সি.ই)।
বোনারপাড়া রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, নানা রঙের ফুল-বেলুনে সাজানো রামসাগর ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে স্টেশনের এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে। এ সময় পুরো এলাকাজুড়ে মানুষজন উপস্থিত ছিলেন। ট্রেনের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণি-পেশার নারী-পুরুষ।
গাইবান্ধা ও বোনারপাড়া রেলস্টেশন সূত্রে জানা গেছে, রংপুর বিভাগের বিশেষ করে গাইবান্ধা, রংপুর ও দিনাজপুরের মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে ২০১০ সালের ১২ নভেম্বর চালু করা হয় আন্তঃনগর রামসাগর এক্সপ্রেস ট্রেন। সেসময় গাইবান্ধার বোনারপাড়া থেকে রংপুরের কাউনিয়া ও রংপুর হয়ে দিনাজপুর পর্যন্ত চলাচল করতো ট্রেনটি। সকাল সাড়ে ৬টায় বোনারপাড়া স্টেশন থেকে ছেড়ে গিয়ে মাত্র সাড়ে চার ঘণ্টায় দিনাজপুর পৌঁছাত। কম ভাড়া এবং নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছানোর কারণে ট্রেনটি গাইবান্ধার মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠে। গাইবান্ধাসহ এই রুটের মানুষ রংপুর হয়ে দিনাজপুর এবং দিনাজপুরের যাত্রীরা এই ট্রেনে করে বিভাগীয় শহর রংপুরে চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও দাপ্তরিক কাজকর্ম শেষ করে সন্ধ্যায় একই ট্রেনে ফিরতেন। কিন্তু জনবল সংকটসহ নানা অজুহাতে ২০১২ সালের ২৪ আগস্ট বন্ধ করে দেওয়া হয় এই ট্রেনটি।
ট্রেনটি বন্ধ হওয়ার পর থেকেই যোগাযোগ সংকট উত্তরণে আন্দোলন করে আসছিলেন গাইবান্ধা-রংপুরের নাগরিক সমাজ থেকে শুরু করে সর্বস্তরের জনগণ। ট্রেনটি চালুর দাবিতে জোরালো আন্দোলনের অংশ হিসেবে ২০২০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বোনারপাড়া রেলস্টেশনে ঢাকাগামী লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেন ৩০ মিনিট অবরোধ করে রাখে স্থানীয়রাসহ আন্দোলনকারী।
অন্যদিকে, গাইবান্ধা-৫ আসনের সংসদ সদস্য ও ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার মৃত্যুর পর শূন্য আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত এমপি প্রার্থী মাহামুদ হাসান রিপন প্রচারণায় বন্ধ থাকা রামসাগর ট্রেন চালুর প্রতিশ্রুতি দেন। ট্রেন চালুর দাবিতে রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক, নাগরিক সমাজসহ সর্বস্তরের মানুষের আন্দোলন এবং মাহমুদ হাসানের প্রচেষ্টায় আজ ২৯ আগস্ট পুনরায় চালু হলো রামসাগর ট্রেন।
বন্ধ এ ট্রেনটি চালু হওয়ায় বোনারপাড়া-পঞ্চগড়গামী যাত্রীদের কমবে ভোগান্তি ও অতিরিক্ত ব্যয়। প্রসার ঘটবে এ অঞ্চলের মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্যের। বিশেষ করে সুবিধা ভোগ করবে শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি সহজ হবে কর্মজীবীদের যোগাযোগও।
সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ট্রেনটি চালু হওয়ায় আমরা অনেক খুশি। কেননা, আমরা গাইবান্ধার মানুষ চিকিৎসার জন্য প্রতিনিয়ত রংপুর যাই। রংপুর যোগাযোগে আমাদের যাত্রা সহজ হলো।
সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য শামসুজ্জোহা ঢাকা পোস্টকে জানান, ট্রেনটি চালুর জন্য দীর্ঘদিন আন্দোলন করা হয়েছে। তবে ট্রেনের সময়সূচির পরিবর্তন চান তিনি।
এদিকে, ট্রেন উদ্বোধনের পর ওই ট্রেনেই জেলার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের নলডাঙ্গা রেলস্টেশনের আধুনিকায়ন কাজের উদ্বোধন করতে রওনা হন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।এর আগে ট্রেন পুনরায় চালু উপলক্ষ্যে সাঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় যোগ দেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। এ সময় গাইবান্ধা সদর আসনের সংসদ সদস্য মাহাবুব আরা বেগম গিনিসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।