Date: December 22, 2024

দৈনিক বজ্রশক্তি

Header
collapse
...
Home / অর্থনীতি / ফেব্রুয়ারিতে আইএমএফের ঋণের প্রথম কিস্তি: অর্থমন্ত্রী

ফেব্রুয়ারিতে আইএমএফের ঋণের প্রথম কিস্তি: অর্থমন্ত্রী

November 12, 2022 05:53:27 PM   স্টাফ রিপোর্টার
ফেব্রুয়ারিতে আইএমএফের ঋণের প্রথম কিস্তি: অর্থমন্ত্রী

অর্থমন্ত্রী আহম মোস্তফা কামাল বলেছেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে আমরা ঋণ পেতে যাচ্ছি ইনশাল্লাহ। তাদের (আইএমএফ) কাছে আমরা যেভাবে চেয়েছিলাম, সেভাবেই তারা ঋণ দিচ্ছে। 

তিনি বলেন, এ ঋণের পরিমান ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার (৪৫০ কোটি ডলার)। সাত কিস্তিতে ২০২৬ পর্যন্ত ঋণ আসবে। প্রথম কিস্তি আসবে আগামী বছরের (২০২৩) ফেব্রুয়ারিতে। ৫ বছরের গ্রেস পিরিয়ডে ১০ বছরে পরিশোধ করতে হবে। তিন মাসের মধ্যে সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে এবং বোর্ড চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে। 

বুধবার আইএমএফ প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে অর্থ মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, আইএমএফ তিন মাসের মধ্যে ঋণ প্রস্তাবের সব আনুষ্ঠানিকতা এবং চূড়ান্ত বোর্ড অনুমোদন সম্পন্ন করবে। ঋণটি ২০২৬ সাল পর্যন্ত চার বছরমেয়াদি। এ ঋণ মোট সাত কিস্তিতে পাওয়া যাবে। মোট ঋণের পরিমাণ ৩ দশমিক ৪৬৮ বিলিয়ন এসডিআর, যা বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় সাড়ে চার বিলিয়ন মার্কিন ডলার। 

তিনি বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে আইএমএফ প্রথম কিস্তি ৩৫২ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন এসডিআর অর্থ ছাড় করবে। বাকি ঋণ প্রতি ছয় মাস ৫১৯ মিলিয় এসডিআর হিসেবে ছয়টি সমান কিস্তিতে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পাওয়া যাবে। বর্তমান এসডিআর ইন্টারেস্ট রেট অনুযায়ী ঋণের গড় সুদহার ২ দশমিক ২০ শতাংশ। মুস্তফা কামাল বলেন, ঋণের মোট তিনটি অংশ। এর মধ্যে প্রথম অংশের ৮২২ দশমিক ৮২ মিলিয়ন এসডিআর’র জন্য কোনো সুদ দিতে হবে না। ঋণের বাকি অংশের মধ্যে ১ হাজার ৬৪৫ দশমিক ৬৪ এসডিআর’র সুদহার নির্ধারিত হবে এসডিআর ফ্লোটিং রেটের সঙ্গে এক শতাংশ যোগ করে। আর বাকি ১ বিলিয়ন এসডিআর’র সুদহার হবে এসডিআর ফ্লোটিং রেটের সঙ্গে দশমিক ৭৫ শতাংশ যোগ করে। 

তিনি বলেন, সারাবিশ্বের অর্থনীতিই এখন একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। উন্নত থেকে উন্নয়নশীল- সব দেশে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে। প্রায় সব দেশের মুদ্রার মান ডলারের বিপরীতে কমে গেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এ উত্তাপের আঁচ আমাদের অর্থনীতিতেও কিছুটা লেগেছে। এ অস্থিরতা যাতে কোনো ধরনের সংকটে ঘনীভূত না হয় তা নিশ্চিত করতেই আমরা আগাম সতর্কতা হিসেবে আইএমএফের ঋণের জন্য অনুরোধ করেছিলাম। তিনি বলেন, আইএমএফের সঙ্গে এর আগে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। চলমান ঋণ আলোচনার পর্বটি আজ আমরা সফলভাবে সমাপ্ত করলাম। আমরা যেভাবে ঋণ চেয়েছিলাম, ঠিক সেভাবেই ঋণ পেতে যাচ্ছি বলে আমি আশা করছি। আইএমএফের সফররত দলটি বাংলাদেশ সরকারের সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলোচনা করেছে। আমাদের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় ভালো বলে তারা আমাদের জানিয়েছেন। আইএমএফ টিম আমাদের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কারের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে। সে অনুযায়ী আমরা চার বছরমেয়াদি ঋণ কর্মসূচি নিতে যাচ্ছি, যোগ করেন মুস্তফা কামাল। 

অর্থমন্ত্রী আইএমএফের এই ঋণ কর্মসূচির ক্ষেত্রে অর্থনীতির বহিঃখাত-কে স্থিতিশীল করা; ২০২৬ সালে এলডিসি হতে উত্তরণকে সামনে রেখে অর্থনীতিকে শক্ত ভিত্তি দেওয়া; আর্থিক খাতকে শক্তিশালী করা; এবং বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলা করে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়া- এই চারটি মূল লক্ষ্যের কথা উল্লেখ করেন। পাশাপাশি তিনি চলমান সংস্কার কার্যক্রমের বিষয় উল্লেখ করে বলেন, সরকারের বাজেট ঘাটতি ধারণযোগ্য পর্যায়ে রাখা হবে, যা গত প্রায় ১৪ বছর যাবৎ আমরা করে আসছি। আমাদের সরকারের সবসময় প্রচেষ্টা থাকে বাজেট ঘাটতিকে জিডিপির ৫ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখা। গত বছর আমাদের বাজেট ঘাটতি ছিল ৫.১ শতাংশ যা এই অর্থবছরে ৫.৫ শতাংশ ধরা আছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তার মতো সামাজিক খাতে সরকারের ব্যয় বৃদ্ধি করা, যা আমরা প্রতি অর্থবছরে ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করছি। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে চলতি অর্থবছরে আমাদের বরাদ্দ রয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা যা মোট বাজেটের প্রায় ১৭ শতাংশ- বলেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, আর্থিক খাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নতুন কয়েকটি আইন প্রণয়ন এবং পুরোনো কয়েকটি আইনের সংশোধনের চলমান কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা, রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কার জোরদার এবং কর প্রশাসনের দক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি করা হবে। 

তিনি আরও বলেন, ভ্যাট আদায়ের জন্য আমরা ইএফডি মেশিন স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছি। এ যাবৎ ৬ হাজার ৭৩২টি মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। আগামী বছর আরও ৬০ হাজার মেশিন স্থাপন করা হবে এবং পরবর্তী ৪ বছরে ২ লাখ ৪০ হাজার মেশিন স্থাপিত হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের ব্যবস্থাটি আন্তর্জাতিক বাজারের মূল্যের সঙ্গে সময়ে সময়ে সমন্বয় করা, যাতে সামনে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য কমলে দেশের অভ্যন্তরেও তা একইভাবে কমানো যায়।

 তিনি বলেন, টাকার বিনিময় হার নির্ধারণের কাজটি ধীরে ধীরে বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া, যা আমরা এরইমধ্যে শুরু করেছি। সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা এবং সেদিকে লক্ষ্য রেখে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা, একটি দুর্যোগ ঝুঁকি অর্থায়নের পরিকল্পনা করা, যার মধ্যে দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার বিষয়টিও থাকবে। ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার এবং অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন।