অর্থনীতি ও বাণিজ্য ডেস্ক:
এতে মোট বৈদেশিক ঋণে ৪.০৩ বিলিয়ন ডলার কমে, গত বছরের বকেয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৫.৬০ বিলিয়ন ডলার। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে দেশের জিডিপি অনুপাতে মোট বৈদেশিক ঋণের হার কমে হয়েছে ১৩.৭৮ শতাংশ। এর আগের অর্থবছরে এই হার ছিল ১৬.৯ শতাংশ। মূলত বিনিময় হারের তারতম্যের কারণে এবার বৈদেশিক বকেয়া ঋণের হার কমেছে বলে জানিয়েছেন ইআরডির কর্মকর্তারা। এর ফলে মোট বৈদেশিক ঋণে ৪.০৩ বিলিয়ন ডলার কমে, গত বছরের বকেয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৫.৬০ বিলিয়ন ডলার।
যদিও গত অর্থবছরে রেকর্ড অর্থছাড়ে বকেয়া বৈদেশিক ঋণ হওয়ার কথা ছিল ৫৯.৬৪৭ বিলিয়ন ডলার, কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের মান শক্তিশালী হওয়ায় এবং ডলারের বিপরীতে স্পেশাল ড্রয়িং রাইটস (এসডিআর)-সহ অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রার মান কমে যাওয়ার কারণে বকেয়ার পরিমাণ কমে এসেছে। ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণে মোট বকেয়া ছিল ৫০.৮৭৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
গত অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণছাড় হয়েছে ১০ বিলিয়ন ডলার। আর বাংলাদেশ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাকে ঋণ পরিশোধ করেছে ১.৫২৬ বিলিয়ন ডলার। ফলে ২০২১-২২ অর্থবছরের অর্থছাড় থেকে ঋণ পরিশোধ দিয়ে বাকি ৮.৭৬৭ বিলিয়ন ডলার বকেয়া ঋণ যোগ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইআরডির যোগফলে বকেয়ার পরিমাণ কমেছে ৪ বিলিয়ন ডলার। কর্মকর্তারা জানান, আউটস্ট্যান্ডিং বা বকেয়ার পরিমাণ কমার কারণে আপতত বাংলাদেশের ঋণের দায় কমেছে। এতে জিডিপি অনুপাতে বৈদেশিক ঋণের হারও কমেছে, যা দেশের জন্য ভালো একটি দিক।
সংশ্লিষ্টদের মতে, আপতত লাভের খাতায় আছে সরকার। তবে পরে যখন ডলারের হার স্থিতিশীল হবে, তখন এই ৪ বিলিয়ন ডলার বকেয়া ফিরে আসতে পারে। এটি অনেকটা পুঁজি বাজারের মতো। ১০০ টাকার শেয়ার আজ ২০০ টাকা বেড়ে যেতে পারে, আবার দেখা যাবে কাল ১০০ টাকা কমে গেছে। মূল্য সমন্বয়ের কারণে লাভ বা লস হচ্ছে- এটি বঝুতে হবে বাস্তব তথ্যের ওপর ভিত্তি করে। যখন শেয়ারটি ক্যাশ হচ্ছে, ওই সময়র ওপর নির্ভর করছে কতটুকু লাভ বা লোকসান হয়েছে। এমনটিই জানান কর্মকর্তারা।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, বৈদেশিক ঋণের আউটস্ট্যান্ডিং কমছে, তা কাগজে কলমে। বাস্তবে বাংলাদেশ লাভবান হয়েছে কিনা তা নির্ভর করবে ঋণ পরিশোধের সময় বিনিময় হার কেমন থাকে তার ওপর।
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “ধরুন আমরা জাপানি ইয়েনে কোনো ঋণ নিলাম। চুক্তিতে বলা হয়েছে ইয়েনে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। যখন আমি ঋণ নিচ্ছি তখন যদি এক ডলারের দামে ১০০ ইয়েন পাওয়া যায়, তাহলে আমার দায় হলো ১০০ ইয়েন।” “ফেরত দেওয়ার সময় যদি এক ডলারের দাম ১১০ ইয়েন হয়ে যায়। তাহলে এক ডলারের কমে ১০০ ইয়েন কিনে, আমরা ফেরত দিতে পারবো। যেহেতু ইয়েনের মূল্য কমেছে, সেক্ষেত্রে আমরা লাভবান হবো।” “এর ছয় মাস পরে যদি ডলারের মূল্য কমে, তাহলে দেনা আবার বেড়ে যাবে। যখন ফেরত দিচ্ছি তখনকার বিনিময় হারের ওপর নির্ভর করছে আমরা লাভবান হচ্ছি নাকি লোকসানে পড়ছি,” যোগ করেন তিনি।
সংশ্লিষ্টদের মতে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে গত দেড় বছর ধরে ডলারের দাম হু হু করে বেড়েছে। আবার গত তিন মাস ধরে স্থিতিশীল হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। এ অবস্থায় এসডিআরসহ ডলার বহির্ভূত ঋণে বাংলাদেশের লাভ হবে নাকি লস হবে, তা নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের দাম উঠা-নামার ওপর।
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছে এসডিআরে। মোট বৈদেশিক ঋণে এসডিআরে বকেয়া হচ্ছে ৪২ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বকেয়া রয়েছে ডলারে, ৩৩ শতাংশ। এরপরে রয়েছে জাপানি ইয়েনে ১৬ শতাংশ এবং ইউরোতে বকেয়া রয়েছে ৩ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টদের মতে, বিনিময় হারের তারতম্যের কারণে বাংলাদেশ অনেক সময় ঋণও বেশি পেয়ে থাকে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে বাংলাদেশ যে ঋণ নিচ্ছে, বিনিময় হারের কারণে সম্প্রতি এ ঋণে ২০০ মিলিয়ন ডলার বেশি পাওয়া যাচ্ছে।
মূলত আইএমএফ ঋণ দিচ্ছে ৩.৩ বিলিয়ন এসডিআর। প্রথমে ধারণা করা হয়েছে, বাংলাদেশ ঋণ পাবে ৪.৫ বিলিয়ন ডলার। কিন্ত পরে ডলারের মান বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশ এখন ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ আইএমএফর ঋণ পাবে মোট সাড়ে তিন বছরে ৭ কিস্তিতে। তবে বাংলাদেশ ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ পাবে কিনা তা নির্ভর করছে অর্থছাড়ের সময় বিনিময় হার কেমন থাকে তার ওপর। ডলারের বিপরীতে এসডিআরের মানের ওপর বাংলাদেশের ঋণ পাওয়ার পরিমাণ কমতেও পারে, আবার বাড়তেও পারে।