ক্রীড়া প্রতিবেদক:
সিলেটে লঙ্কান ‘সিংহদের’ আক্রমণে বাংলাদেশের ‘টাইগাররা’ দাঁড়াতেই পারলো না। নিজেদের মাঠ, চেনা কন্ডিশন; তবু পাক্কা চারটি দিন অচেনাই লেগেছে বাংলাদেশকে। প্রথম টেস্টের তৃতীয় দিনে লঙ্কানদের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং। আহত অবস্থায় ম্যাচটাকে চতুর্থ দিন দুপুর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার কৃতিত্ব কেবল মুমিনুল হকের। দ্বিতীয় ইনিংসে তার লড়াকু ৮৭* রানে ভর করে বাংলাদেশ কেবল হারের ব্যবধান কমাতে পেরেছে। তবে মুমিনুলের এই লড়াই আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে একটি বিষয়- মুমিনুল যে মানসিকতায় উইকেটে টিকে থাকলেন, বাকিরা কেন পারলেন না? তার ব্যাটিংয়ে স্পষ্ট হয়েই ধরা পড়েছে- এই উইকেটে ব্যাটিং করা কঠিন ছিল না।
লঙ্কানদের দুই ব্যাটার ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ও কামিন্দু মেন্ডিস টেস্ট মেজাজের অনন্য উদাহরণ হয়েই থেকেছেন পুরোটা সময়। পুরো দলটাকে টেনেছে তাদের অনবদ্য ব্যাটিং। তাতে তৃতীয় দিনেই সফরকারীদের পুঁজি দাঁড়ায় ৫১১ রানের। বলা যায় রানের এই বিশাল পাহাড়েই বাংলাদেশ শুরুতে ম্যাচ থেকে ছিটকে গেছে। এতো বড় লক্ষ্য তাড়া করে ম্যাচ জেতার ইতিহাস সেই কোন দলের। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশকে জিততে হলে ইতিহাস গড়তে হতো। নাজমুল হোসেন শান্তর দল ইতিহাস রচনা করবেন কি, নিজেরাই বাজে ব্যাটিংয়ের উদাহরণ হয়ে থাকলেন। ম্যাচের তৃতীয় দিনের শেষ বিকালে স্বাগতিক ব্যাটাররা এক ঘণ্টার মতো ব্যাটিং করেছে। তখনই নিশ্চিত হয়ে যায় ম্যাচের ভাগ্য। ৪৭ রান তুলতেই টপ অর্ডারের ৫ উইকেট হারায় তারা। হাতে দুই দিন থাকলেও শুধু দেখার অপেক্ষা ছিল, হারের ব্যবধান কতটা কমাতে পারে স্বাগতিক দল। শুরুতে যে দৃঢ়তা ছিল না সেটাই দেখা গেলো শেষ দিকে লোয়ার অর্ডারে।
এক পর্যায়ে তো ৫১ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে অল্পতে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কাও দেখা যাচ্ছিল। সেটা হয়নি মুমিনুল, মিরাজ, শরিফুলের দৃঢ়তায়। তাদের কারণেই বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ১৮২ রানে অলআউট হয়েছে। শেষ ৫ উইকেটেই যোগ হয়েছে ১৩৫ রান। ১২ চার ও ১ ছক্কায় ১৪৮ বলে ৮৭ রানের ইনিংস খেলেছেন মুমিনুল। চার নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ২৪৮ মিনিট ক্রিজে থেকে মুমিনুল বুঝিয়ে দিয়েছেন চাইলেই উইকেটে থাকা যায়। সোমবার দিনের শুরুতেই তাইজুল ইসলামের বিদায়ের পর মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে সপ্তম উইকেটে ৬৬ রানের জুটি গড়েন তিনি। পরে শরিফুল ইসলামকে নিয়ে যোগ করেছেন আরও ৪৭ রান। শেষ দিকে মুমিনুল একার লড়াইয়ে সেঞ্চুরির কাছে গেলেও সঙ্গীর অভাবে তা করতে পারেননি। ১৪৮ বলে ১২ চার ও ১ ছক্কায় ৮৭ রানে অপরাজিত থাকেন মুমিনুল।
তার ব্যাটিং দেখে ড্রেসিংরুমে বসে নিশ্চিত ভাবে আফসোসে পোড়ার কথা লিটন-শান্ত-জাকের হাসানদের। তারা বাজে ব্যাটিংটা না করলে এভাবে খেসারত দিতে হতো না! সঙ্গী হতো না বিশাল পরাজয়! টেস্টে রানের হিসেবে শ্রীলঙ্কার এর চেয়ে বড় জয় আছে আরও একটি। সেটিও ২০০৯ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৪৬৫ রানে। ৩২৮ রানের এই পরাজয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তালিকাতেও যুক্ত হয়েছে আরও হার!
অথচ বছরের শুরুতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট জয়ের মধ্য দিয়ে টেবিলের দুইয়ে উঠে গিয়েছিল বাংলাদেশ। পরের টেস্ট হেরে আবার নিচে নেমে যায় দলটি। সোমবার লঙ্কানদের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হারের পর ১২ পয়েন্ট নিয়ে নাজমুল হোসেন শান্তর দল সাত নম্বরে নেমে গেছে। আট নম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং সবার নিচে ইংল্যান্ডের অবস্থান। ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ৫৬ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন লঙ্কান পেসার কাসুন রাজিথা। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও বাংলাদেশের সবকটি উইকেট নিয়েছেন শ্রীলঙ্কার তিন পেসার রাজিথা, কুমারা ও বিশ্ব ফার্নান্দো। সব মিলিয়ে এই টেস্টে ৩১টি উইকেট গেছে পেসারদের ঝুলিতে। বাংলাদেশের মাটিতে যা রেকর্ড।