স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ রুখতে পারবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ওরা যত কথাই বলুক, বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা এগিয়ে যাবো। বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি, তবে বাংলাদেশে ইনশাআল্লাহ দুর্ভিক্ষ হবে না। তবে তার জন্য আমাদের এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে।
শুক্রবার যুবলীগের প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুব মহাসমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি এসব কথা বলেন। যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান আমির হোসেন আমু, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জাহাঙ্গীর কবীর নানক বক্তব্য রাখেন।
সরকার প্রধান বলেন, অনেকে আমাদের সমালোচনা করছেন, উন্নয়ন নাকি চোখে দেখতে পারেন না। চোখ থাকতে যদি কেউ অন্ধ হয় তাকে তো দেখানো যায় না। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ নিচ্ছে। মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে। সবই তো আওয়ামী লীগের দেওয়া।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা জিয়া- সবই তো একই ইতিহাস। বাংলাদেশে ১৯টি ক্যু হয়েছে। হাজার হাজার সেনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছে। সেই সঙ্গে আমাদের নেতাকর্মী। খুনিদের লালন-পালন করা ওদের চরিত্র। শেখ হাসিনা বলেন, এতিমের টাকা মেরে খেয়ে ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া হচ্ছেন বিএনপির নেত্রী। তার পরিবর্তে যাকে দিয়েছে সে তো আরও একধাপ ওপরে। তারেক জিয়ার সাজা হয়েছে মানি লন্ডারিং কেসে। এফবিআই এসে তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়ে গেছে। ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা আর গ্রেনেড হামলার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। যাদের নেতা হচ্ছে খুন, মানি লন্ডারিং ও অবৈধ অস্ত্র চোরাকারবারির আসামি, তাদের মুখে আওয়ামী লীগের সমালোচনা শোভা পায় না। তিনি বলেন, কাজের সুযোগ আমরা সৃষ্টি করেছি। আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। বিএনপি কখনও চিন্তা করেছে বাংলাদেশের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ হবে? তারা এটা কল্পনাও করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে এটা করেছে।
সরকারপ্রধান বলেন, যুব সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। এসএমই ফাউন্ডেশন, প্রবাসী ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক। সব জায়গায় লোন আছে। তারা সেখান থেকে লোন নিতে পারে। নিজেরা কাজ করতে পারে। নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। এদিকে ওদিকে না ঘুরে কাজ করে তারা দেশের উন্নতি করতে পারে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে সারা দেশের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কানাডার আদালত রায় দিয়েছে পদ্মা সেতুতে কোনো দুর্নীতি হয়নি। কানাডার ফেডারেল কোর্টে আরেকটি রায় আছে। তা হলো বিএনপি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য জাতির পিতার দেশে একটি মানুষও ভূমিহীন থাকবে না। গৃহহীন থাকবে না। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা ঘর করে দিয়েছি। সঙ্গে তাদের জীবিকারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। যুবলীগও ভূমিহীন, গৃহহীন মানুষদের ঘর করে দিয়েছে। করোনাকালে তারা যথেষ্ট কাজ করেছে। রোগীর চিকিৎসা, লাশ দাফন, ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়া থেকে শুরু করে সব কাজে তারা উদ্যোগী হয়েছে। ঝড়-বন্যায় আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলো মানবতার ডাকে ছুটে গেছে। তিনি বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। স্যাংশন-কাউন্টার স্যাংশন। যার ফলে বিশ্ববাজারে প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। আমাদের আমদানি পণ্যগুলো অত্যন্ত কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়েছে। যুবলীগের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তরুণ্যের শক্তি, বাংলাদেশের সমৃদ্ধি। যুবকদের আজ দেশ গড়ার কাছে মনোযোগী হতে হবে। আমাদের দেশ ও দেশের মানুষের সেবা করতে হবে। সেজন্য যুব সমাজকে অনুরোধ করবো, আমাদের পরনির্ভরশীল থাকলে হবে না। আত্মনির্ভরশীল হতে হবে। এজন্য আহ্বান করেছি, এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। এ সময় তিনি উল্লেখ করে বলেন, আমি আহ্বান করেছিলাম কৃষকদের ধান কেটে ঘরে তুলে দেওয়ার জন্য। যুবলীগসহ সব সংগঠন ধান কেটে দিয়েছে। বৃক্ষরোপণের আহ্বান করেছি, যুবলীগ লাখ লাখ বৃক্ষ রোপণ করেছে। এভাবে মানুষের পাশে আমাদের এখনও দাঁড়াতে হবে। যুবলীগের প্রত্যেকটি নেতাকর্মীকে বলবো, যারা এখানে আছেন বা বাইরে আছেন সবার জন্য, নিজের গ্রামে যান। নিজের গ্রামে গিয়ে সেখানে কোনো জমি যেন অনাবাদি না থাকে সেটা দেখতে হবে। নিজের জমি চাষ করতে হবে। অন্যের জমিও যেন উৎপাদনশীল হয় সেই ব্যবস্থা প্রতিটি যুবলীগ কর্মীকে করতে হবে।
তিনি বলেন, সেই সঙ্গে দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার জন্য সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক থেকে যুবসমাজ যেন দূরে থাকে। কোনোমতেই যেন কেউ সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত না হয়। তার জন্য যুবলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে অঙ্গীকার করতে হবে। সেভাবে কাজ করতে হবে। যুবসমাজের মাঝে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। সেই চেতনায় বাংলাদেশের উন্নতি হবে। উৎপাদন বৃদ্ধি মানে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে। আমাদের অর্থনীতি এখন যথেষ্ট শক্তিশালী উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেকে বলেছিলেন শ্রীলঙ্কা হবে, এটা হবে সেটা হবে। তাদের মুখে ছাই পড়েছে। সেটা হয়নি। সেটা হবেও না। কিন্তু আমাদের কাজ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৪ বছরে আজকের বাংলাদেশ-বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। উন্নত বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশকে কেউ এখন আন্তর্জাতিকভাবেও অবহেলার চোখে দেখে না। প্রত্যেকে বলে এতকিছুর পরেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। রিজার্ভ খরচের কারণ ব্যাখ্যা করে সরকারপ্রধান বলেন, বাইরে থেকে সব খাবার, তেল আনতে হচ্ছে। করোনার কারণে দুটো বছর আমাদের কোনো ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আসেনি। দুই বছর পর সারা বিশ্ব উন্মুক্ত হওয়ার পর ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আসছে। আমাদের রিজার্ভ তো ব্যবহার করতে হবে। তার মধ্যে আমরা ৮ বিলিয়ন বিভিন্নভাবে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করেছি। রিজার্ভ জমিয়ে রাখলে তো হবে না। সেটাকে কাজে লাগাতে হবে। বিভিন্নভাবে ব্যবহার করছি। সেটাও আমাদের মজুত।
রিজার্ভ বিনিয়োগের তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা নিজেদের টাকায় বিমান কিনেছি। সেটার জন্য আমরা বিমানকে লোন দিয়েছি। বিমান দুই শতাংশ সুদে সেই টাকা ফেরত দিচ্ছে। পায়রা নদী ড্রেজিং নিজেদের টাকায় করেছি। নইলে এই টাকা বিদেশি ব্যাংক থেকে নিতে হতো। সেখানে আমাদের সুদসহ ডলার ফেরত দিতে হতো। আজ আমরা নিজেদের ব্যাংক থেকে নিচ্ছি। নিজেদের রিজার্ভ থেকে ব্যবহার করছি। তার ফলে ঘরের টাকা ঘরে থাকছে। সুদের টাকাও আমাদের ঘরে থাকছে। অপচয় হচ্ছে না। এভাবে আমরা টাকা আমাদের দেশের জনগণের কল্যাণে ব্যবহার করছি। বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, অর্থনীতিকে গতিশীল করা আমাদের লক্ষ্য। যারা ক্ষমতায় ছিল দুর্নীতি লুটপাট করে, হাজার হাজার কোটি টাকা কামাই করে বিদেশে গিয়ে এখন নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করছে। বাংলাদেশের যে অগ্রযাত্রা, তা কেউ রুখতে পারবে না। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে, এইট পাস আর মেট্রিক ফেল দিয়ে দেশ চললে সেই দেশের উন্নতি হয় না বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, যুবসমাজকে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব, উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়ার জন্য এখন থেকেই কাজ করতে হবে। উৎপাদন বাড়াতে হবে। নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। দেশের মানুষের কল্যাণ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভূমিহীনরা ঘর পেয়েছে, আমাদের দরিদ্র মানুষ থাকবে না। বাংলাদেশ পারে। জাতির পিতার মতো আমিও বিশ্বাস করি বাংলাদেশকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। ওরা যত কথাই বলুক বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা এগিয়ে যাবো। যুবলীগকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, তরুণ সমাজের দায়িত্ব দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। আদর্শ নিয়ে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে সেটাই হবে সবার প্রত্যয় ঘোষণা। সেটাই হবে প্রতিজ্ঞা।