রিয়াদুল হাসান:
মদিনা শব্দের অর্থ হচ্ছে শহর। ইয়াসরিব নামের ছোট্ট কৃষিপ্রধান গ্রামটির একটি ঐতিহাসিক শহরে পরিণত হওয়ার গল্পটা কিন্তু সাধারণ কোনো নগরায়ণের গল্প নয়। এর পেছনে রয়েছে এক মহান আদর্শের উত্থান যা একটি সভ্যতার ভিত্তি রেখেছিল ইয়াসরিব গ্রামের মাটিতে। সেই ইতিহাস লেখা হয়েছিল বহু মানুষে রক্ত ও ঘামের অক্ষরে। কী অপরিসীম ত্যাগ-তিতিক্ষা, শ্রম ও লড়াই করতে হয়েছিল সেই সভ্যতার নির্মাতাদের, তা বর্ণনা করতে গিয়ে বিগত ১৪শ’ বছরে লক্ষ লক্ষ বই রচনা করা হয়েছে। আজও মানুষ যখন আদর্শিক সংকটে পড়ে তখন মদিনার দিকে চোখ ফেরায়।
এই সভ্যতার নায়ক ছিলেন শেষ নবী বিশ্বনবী মোহাম্মদ (সা.)। মক্কায় যখন তিনি নির্যাতিত নিপীড়িত সাহাবিদের নিয়ে কঠিন সময় পার করছেন তখন রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে মদিনায় যাওয়ার ডাক এলো। যুগ যুগ ধরে মদিনার গোত্রগুলো একে অপরের শত্রু হিসাবে বসবাস করে আসছিল। তাদের মধ্যে কেউ বিকৃত দীনে হানিফের অনুসারী, কেউ ইহুদি, কেউ বা খ্রিষ্টান। এদের মধ্যে বড় দুটো গোত্র ছিল আউস ও খাজরাজ। তাদের মধ্যে কয়েক বছর আগেই ঘটে গেছে রক্তক্ষয়ী বুয়াস যুদ্ধ। অতি সাধারণ তুচ্ছ কারণে গোত্রে গোত্রে লড়াই বেঁধে যেত আর বংশপরম্পরায় সেই যুদ্ধ চলতে থাকত। ঠিক গত একশ বছর ভারতবর্ষে হিন্দু মুসলিমরা যেমন একই সংস্কৃতি, একই ভাষা, খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত, একই আবহাওয়ায় লালিত হওয়া সত্ত্বেও শত শত বার তারা দাঙ্গায় লিপ্ত হয়েছে। যাহোক, এরই মধ্যে মক্কায় একজন নবীর আবির্ভাব হয়েছে এমন বার্তা তাদের কানে পৌঁছালো। হজ্জ করতে গিয়ে অনেকে সরাসরি রসুলাল্লাহর সাক্ষাৎ পেলেন এবং আকৃষ্ট হলেন। তাদের মধ্যে এমন আশা জাগ্রত হলো যে, এই নবীকে যদি মদিনায় নিয়ে যাওয়া যায় তাহলে মদিনার এতদিনকার গোত্রীয় বিবাদ ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের একটা সুরাহা হবে। আল্লাহর ইচ্ছাও এমনটাই ছিল।
রসুলাল্লাহ মদিনায় গেলেন। প্রথমেই তিনি সেখানে মসজিদ নির্মাণ করলেন যা কিছুদিনের মধ্যেই শহরের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হলো। এই মসজিদটি সার্বজনীন প্রতিষ্ঠান হিসাবে দাঁড়িয়ে গেল। সেখানে সকল ধর্মের অনুসারীদের অবাধ প্রবেশাধিকার ছিল। এটাই ছিল রসুলাল্লাহর কার্যালয়। তিনি মদিনার সকল গোত্রের সঙ্গে আলাদা আলাদা করে বসলেন। নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বললেন। ইহুদি গোত্রগুলোর সঙ্গেও বসলেন। মদিনার ইহুদি গোত্রগুলো আসলে পূর্ব থেকেই একজন নবীর আগমনের প্রতিক্ষায় ছিল। কারণ তাদের প্রাচীন ধর্মগ্রন্থে এমন কথাই বলা হয়েছিল। কিন্তু তাদের বিশ্বাস ছিল যে নবী আসবেন ইহুদিদের মধ্যে। বাস্তবে নবী ইসমাইল (আ.) এর বংশে আসায় তারা মন থেকে তাঁকে মেনে নিতে পারছিল না। তথাপি নবীজি যখন তাদের সঙ্গে আলোচনা করলেন, তাঁর বক্তব্য ও ব্যক্তিত্বের প্রভাবে অনেক ইহুদিই ইসলাম গ্রহণ করলেন। রসুলাল্লাহ তখন সকল মুসলিম অমুসলিম সকল গোত্রের সঙ্গে একটি লিখিত চুক্তি করলেন। এই চুক্তির নাম মদিনা সনদ। এই চুক্তি ছিল মূলত একটি মৈত্রী ও নিরাপত্তা চুক্তি (Peace and security agreement)|
ভিন্ন মত, ভিন্ন ধর্মের অনুসারীরা তাদের সাধারণ স্বার্থে (Common Interest ঐক্যবদ্ধভাবে সমাজে বাস করবে এটাই ছিল চুক্তিটির মূল লক্ষ্য। সাধারণ স্বার্থ বলতে প্রধানত দুটো বিষয়- মদিনার অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা ও বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে শহরকে রক্ষা করা। অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন ছিল সকলে মিলে একজন নেতার আনুগত্য করা। এটাই হচ্ছে সার্বভৌমত্ব বা (Sovereignty), যা যে কোনো স্বাধীন রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রথম মৌলিক উপাদান। একজন অবিসংবাদিত নেতা (Indivisible, absolute, supreme legitimate authority) জাতির মধ্যে থাকতেই হবে যার ফায়সালা হবে চূড়ান্ত, তার সিদ্ধান্তই ন্যায়সঙ্গত বলে সকলকে মানতে হবে। মদিনা সনদে সকল গোত্র রসুলাল্লাহকে (সা.) তাদের এই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তদাতা হিসাবে, বিচারক হিসাবে মেনে নিল। এর মাধ্যমেই তারা বিবাদমান কিছু গোত্র থেকে একটি উম্মাহ বা জাতিসত্তায় পরিণত হলো। রসুলাল্লাহ মসজিদে বসে তাদের মধ্যকার বিবাদগুলো আল্লাহর হুকুম দিয়ে মীমাংসা করে দিতে লাগলেন। এভাবে ন্যায়বিচারক নেতা হিসাবে তিনি আস্থা অর্জন করলেন। তখনকার মসজিদ কিন্তু বর্তমানের মসজিদের মতো নির্জীব, নিষ্প্রাণ, দিনের অধিকাংশ সময় তালা ঝুলানো উপসনালয় ছিল না। সেই মসজিদ ছিল আজকের দিনের সচিবালয়ের মতো, সেনাঘাঁটির মতো, বিদ্যালয়ের মতো কর্মব্যস্ত, প্রাণবন্ত। যাহোক, সম্পূর্ণ চুক্তিটির উদ্ধৃতি এখানে দিতে গেলে লেখা বড় হয়ে যাবে, শুধু প্রধান প্রধান শর্তগুলো পেশ করছি।
(ক) মদীনা শত্রু কর্তৃক আক্রান্ত হলে ইহুদী ও মোশরেকরা মুসলিমদের সঙ্গে একত্র হয়ে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে।
(খ) যুদ্ধে ইহুদী ও মোশরেকরা তাদের নিজেদের খরচ বহন করবে, মুসলিমরা নিজেদের খরচ বহন করবে, যত দিনই যুদ্ধ চলুক।
(গ) চুক্তির অংশীদার গোত্রগুলো লোকজন রসুলাল্লাহর (সা.) অনুমতি ছাড়া কারো বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারবে না।
(ঘ) এই চুক্তির অধীন সমস্ত গোত্রগুলির মধ্যে যে কোন প্রকার বিরোধ বা গণ্ডগোল যাই হোক না কেন সমস্ত বিচার মহানবীর (সা.) কাছে হতে হবে।
এই কয়টিই হল মহানবীর (দ.) ও মদীনার ইহুদী-পৌত্তলিক, খ্রিষ্টানদের মধ্যে চুক্তির প্রধান প্রধান (Salient) বিষয়, যে চুক্তিটাকে মদীনার সনদ বলা হয়। চুক্তির ঐ প্রধান প্রধান বিষয়গুলির দিকে মাত্র একবার নজর দিলেই এ কথায় কারো দ্বিমত থাকতে পারে না যে, নিজ আদর্শের বিষয়ে বিন্দুমাত্র ছাড় না দিয়েও মহানবী (দ.) এমন একটি চুক্তিতে ইহুদী ও মোশরেকদের আবদ্ধ করলেন- যে চুক্তির ফলে তিনি কার্যত (De Facto) মদীনার ইহুদী ও মোশরেকদের নেতায় পরিণত হলেন। এখানে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, এই চুক্তিতে আসার ক্ষেত্রে কোনো পক্ষকে কোনোপ্রকার চাপ সৃষ্টি বা ভয়ভীতি প্রদর্শন, জোর জবরদস্তি কিংবা প্রলোভন দেখানো হয় নি। তারা স্বেচ্ছায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছে। নবী করিম (সা.) ও তাঁর সাহাবিরা সামগ্রিক পরিস্থিতি তাদের সামনে তুলে ধরে এই চুক্তির প্রয়োজনীয়তা, সুবিধা ইত্যাদি বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাদের নিজেদের যুদ্ধের খরচ নিজেরা বহন করে মহানবীর (দ.) অধীনে মুসলিমদের সঙ্গে একত্র হয়ে যুদ্ধ করার, মহানবীর (দ.) বিনা অনুমতিতে কারো সঙ্গে যুদ্ধ না করার ও নিজেদের মধ্যেকার সমস্ত রকম বিবাদ-বিসম্বাদের বিচারের ভার মহানবীর (দ.) হাতে ন্যস্ত করার শর্তে আবদ্ধ করে তিনি যে চুক্তি করলেন তা নিঃসন্দেহে একাধারে একটি রাজনৈতিক, কুটনৈতিক ও সামরিক বিজয় যা আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার নিরীখেও অত্যন্ত প্রশংসিত হয়ে থাকে। ঐ চুক্তির ফলে মদীনার নিরাপত্তার ব্যবস্থা তো হলই, তার উপর তিনি কার্যত মুসলিম-অমুসলিম সকলের নেতায় পরিণত হলেন।
মদিনায় সকল ধর্মের মানুষ তাদের ধর্মপালনের ক্ষেত্রে পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করত। যারা মূর্তিপূজারী তারা মূর্তিপূজা করত। ইহুদিরা তাদের প্রথানুসারে উপাসনা করত। মদিনায় কোনো একজন ব্যক্তিকেও তার ধর্মপালনে বাধা দেওয়া হয়েছে, কিংবা কাউকে জোর করে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে এমন দৃষ্টান্ত ইতিহাসে পাওয়া যায় না। উপরন্তু রসুলাল্লাহ ইহুদিদের বিচার করার সময় তাদের গ্রন্থের বিধান দিয়েই করতেন। খন্দকের যুদ্ধে যখন বনি কোরায়জার ইহুদিরা চুক্তি লংঘন করে শত্রুদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল তখন তাদের এই যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য তিনি বিশেষ আদালত (Special Tribunal) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই আদালতে রসুলাল্লাহ নিজে বিচার না করে ইহুদিদের পছন্দনীয় বিচারক সাদ বিন মা’আজকেই (রা.) নিযুক্ত করেছিলেন। সাদ বিন মা’আজ (রা.) তওরাতের বিধান (Penal Code) দিয়েই বনী কোরায়জার যুদ্ধাপরাধীদের দণ্ড প্রদান করেছিলেন। অর্থাৎ আদালতের বিচারক পছন্দ করার এখতিয়ারও আসামিপক্ষকে দেওয়া হয়েছে, যা এই আধুনিক যুগেও নজিরবিহীন।
ধর্মোন্মাদনা সৃষ্টি করে, গুজব রটনা করে, হুজুগ তুলে দিয়ে কোনো একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর উপর হামলে পড়ার কোনো নজির রসুলাল্লাহর জিন্দেগিতে কেউ দেখাতে পারবে না। অথচ আমাদের সমাজের এক শ্রেণির ধর্মীয় নেতারা সুযোগ পেলেই সংখ্যালঘুদের মন্দির, উপাসনালয়, মাজার ভাঙচুর করার উস্কানি দেন। যার পরিণামে ক্ষিপ্ত মুসল্লি ও উগ্রবাদী ধর্মান্ধরা হিংস্র হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে স্থানীয়ভাবে দুর্বল শ্রেণিটির উপর। তাদের বাড়িঘর দোকানপাট লুট করে, আগুন জ্বালিয়ে ভস্মিভূত করে দেয়, সুযোগ পেলে তাদের নারীদের ধর্ষণ করে। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে, এই সমস্ত অপকর্মকে ইসলামের মোড়ক পরিয়ে জেহাদ বলে, নবীর সম্মান রক্ষার আন্দোলন বা কোর’আন অবমাননার প্রতিবাদ বলে চালিয়ে দেওয়া হয়।
প্রশ্ন হচ্ছে এগুলো কি আল্লাহর রসুলের শিক্ষা! আল্লাহর রসুল তো মদিনায় আগত ভিন্নধর্মী মানুষের সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন, তাদেরকে আতিথেয়তা করেছেন। কোনো বিষয় নিয়ে মতবিরোধ হলে সত্য প্রমাণের জন্য মোবাহেলার আয়োজন পর্যন্ত করেছেন। বিধর্মী বন্দীরা বন্দীদশায় ইসলামের সৌন্দর্য দেখে দীন গ্রহণ করেছে, এমন ঘটনাও প্রচুর ঘটেছে। আজকের মুসলিম কি সেই ইসলামের অনুসারী? নাকি আজকের মুসলিম ধর্মব্যবসায়ীদের ফতোয়ায় চালিত কলের পুতুল হয়ে নিজেরাই আল্লাহ, রসুল, কোর’আন ও ইসলামের ঘোরতর অবমাননায় লিপ্ত?
প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে কেউ যদি সত্যিই ইসলামের অবমাননা করে তার বেলায় কী করণীয়। সেই প্রশ্নের উত্তর কোর’আনেই দেওয়া আছে, নবীর জীবনীতেও পাওয়া যাচ্ছে। প্রথমত, অপরাধ যাচাই করা, কেননা অন্যকে ফাঁসানোর জন্য অনেক সময় ঘটনা সাজানো হয়। এজন্য আল্লাহ ঘোষণা করলেন, হে মো’মেনগণ! যদি কোন অবাধ্য ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ আনয়ন করে, তবে তোমরা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশতঃ তোমরা কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্যে অনুতপ্ত না হও (সুরা হুজরাত-৬)। আর আল্লাহর রসুল (সা.) বলেছেন, কোনো মানুষের মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে যাই শোনে তাই যাচাই না করেই অন্যের কাছে বর্ণনা করে দেয় (মুসলিম)।”
দ্বিতীয়ত, আল্লাহর হুকুম হলো যে কোনো সংবাদ শোনামাত্র প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে সেটা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবগত করা। কর্তৃপক্ষ সে বিষয় সম্পর্কে তদন্ত (Investigation) করে আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী যা করণীয় তা করবেন। পবিত্র কোর’আনে ইরশাদ হচ্ছে, “যখন শান্তি অথবা শংকার কোনো সংবাদ তাদের কাছে আসে তখন তারা সেটাকে প্রচার করতে শুরু করে। যদি তারা বিষয়টি রসুলাল্লাহ কিংবা তাদের মধ্যে যারা আদেশ দানের অধিকারী (আমীর) তাদের গোচরে আনত, তবে তাদের মধ্যে যারা তথ্য অনুসন্ধান করে তারা সংবাদের যথার্থতা নির্ণয় করতে পারত। তোমাদের প্রতি যদি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকত তবে তোমাদের অল্প সংখ্যক ব্যতীত সকলে শয়তানের অনুসরণ করত।” (সুরা নিসা ৮৩)।
এ আয়াতে সুস্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, যারা কোনো সংবাদ যাচাই না করে সিদ্ধান্ত নেয় তারা শয়তানের অনুসরণ করে। কোর’আনে এমন দ্ব্যার্থহীন নির্দেশনা ও শৃঙ্খলা লিপিবদ্ধ থাকা সত্ত্বেও যারা গুজবে বা উড়ো কথায় বিশ্বাস করে প্রচার চালায় এবং এর উপর ভিত্তি করে কোনো অপরাধমূলক ঘটনা ঘটিয়ে দেয় তাদের বিষয়ে ইসলামের কঠোর দণ্ডবিধি রয়েছে। আর দণ্ড প্রদানের ক্ষেত্রে ইসলামে পক্ষপাতিত্বের কোনো সুযোগ নেই। গুজব রটনাকারী মুসলিম হলে বা সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি হলে সেজন্য বিচারের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় পায় না।
এগুলো সবই ইতিহাস। আজ ইসলাম বললে আমাদের মনে ভেসে ওঠে নামাজ, রোজা, দাড়ি, টুপি, সাদা পাঞ্জাবি, মেয়েদের বোরকা, ঈদের কোলাকুলি ইত্যাদি। কিন্তু ১৪শ’ বছর আগের মদিনায় ইসলাম বলতে মানুষ বুঝতো ন্যায়বিচার, শান্তি, নিরাপত্তা, মানবাধিকার, সাম্য, ভ্রাতৃত্ব, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি সমাজ। আজ যদি ইসলামের সেই দৃষ্টান্তগুলো আমাদের সমাজে দেখতে চাই, তাহলে প্রথম কর্তব্য হলো, ফেরকা মাজহাব, দলমত, হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সবাইকে যে কোনো একজন নেতার নিঃশর্ত আনুগত্য মেনে নেওয়া, ঠিক যেমনটা হয়েছিল মদিনায়। এটাই ছিল মদিনা সনদের মূল শিক্ষা।
[লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট, যোগাযোগ: ০১৬৭০১৭৪৬৫১, ০১৭১১৫৭১৫৮১, ০১৬৭০১৭৪৬৪৩]