ডেস্ক রিপোর্ট:
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে বিয়ের প্রলোভনে এক নারীকে ধর্ষণের মামলায় হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ১১ দফায় সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন আদালত।
আজ(৮ আগস্ট) দুপুরে কড়া নিরাপত্তায় কাশিমপুর কারাগার থেকে নারায়ণগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নাজমুল হক শ্যামলের আদালতে ধর্ষণ মামলায় দুইজন সাক্ষ্য দেন।
সাক্ষ্যগ্রহণের বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেন ওই আদালতের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি রকিবুদ্দিন আহমেদ।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, এদিন সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্ট জনসংযোগ কর্মকর্তা জাকির হোসেন ও স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মী নুরুন্নবী জনি আদালতে সাক্ষ্য দেন। এখন পর্যন্ত এই মামলায় মোট ২৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন আদালত। মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ৪ অক্টোবর পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে।
এ বিষয়ে আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট রকিবুদ্দিন আহমেদ ঢাকা পোস্টকে জানান, আজকে বিজ্ঞ বিচারক বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ মামলায় দুই জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন। তারা উভয়ই আদালতে মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলায় জড়িত থাকার বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
এদিকে মামুনুল হকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক নয়ন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই মামলাটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। একজন দেশ বরেণ্য আলেমকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। এর আগে দশম দফায় মামলার বাদীর ছেলে আদালতে উপস্থিত হয়ে তার মায়ের সঙ্গে মামুনুল হকের বিয়ের বৈধতা সম্পর্কে নিশ্চিত করেছেন। পুলিশ মামলার বাদীকে ঢাকায় একটি হোটেলে বেশ কিছু দিন আটকে রেখে চাপে ফেলে এই মামলা করতে বাধ্য করেছেন। এটি সম্পূর্ণরূপে একটি সাজানো-পাতানো মামলা।
তিনি আরও বলেন, আজকে আমরা মামলার সাক্ষীদের জেরা করে তাদের কথার সঙ্গে কোনো মিল খুঁজে পাইনি। তারা ঘটনার দিন পুলিশের কাছে ১৬১ ধারায় যে জবানবন্দি দিয়েছেন তার সঙ্গে আজকের কথার কোনো মিল নেই। এছাড়া রয়েল রিসোর্টের জনসংযোগ কর্মকর্তা বলেছেন- তিনি রিসোর্টে অতিথিদের অভ্যর্থনায় নিয়ে যান। কিন্তু সেই সময় অভ্যর্থনা কক্ষের দায়িত্বরত কর্মকর্তার নাম জানতে চাইলে তিনি তা বলতে পারেননি। এতেই প্রতিয়মান হয় যে এই মামলা ও মামলার সাক্ষী সব কিছুই সাজানো-পাতানো। এই মামলায় সমস্ত সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আল্লামা মামুনুল হক বেকসুর খালাস পাবেন বলে আমি শতভাগ আশাবাদী।
নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য মামুনুল হককে নারায়ণগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। এ সময় আদালত চত্বরে মামুনুল হকের সমর্থকরা ভিড় করে স্লোগান দিতে থাকেন। পরে পুলিশ তাদের নিবৃত্ত করে সরিয়ে দেন। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে তাকে আবার কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়েল রিসোর্টে এক নারীর সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মামুনুল হককে আটক করেন। পরে স্থানীয় হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা এসে রিসোর্টে ভাঙচুর করে তাকে ছিনিয়ে নেন। ঘটনার পর তিনি ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসায় অবস্থান করছিলেন। পরে পুলিশের নজরদারিতে রাখা হয় হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হককে। ১৮ এপ্রিল পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাকে ওই মাদরাসা থেকে গ্রেপ্তার করে। ওই ঘটনায় ৩০ এপ্রিল সোনারগাঁ থানায় মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করেন ওই নারী। তবে শুরু থেকেই মামুনুল হক ওই নারীকে তার দ্বিতীয় স্ত্রী বলে দাবি করে আসছেন।