রাকীব আল হাসান:
আজ পৃথিবীব্যাপী চলছে অন্যায়, অবিচার, যুদ্ধ, রক্তপাত, দুর্ভিক্ষ, ব্যভিচার, সুদ, ঘুষ, মাদক, দুর্নীতি, মিথ্যা, প্রতারণা, অশ্লীলতা, বিশৃঙ্খলা এক কথায় চূড়ান্ত অশান্তি। হেযবুত তওহীদ চায় এমন এক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে যেখানে কোনো অন্যায় থাকবে না। দুর্নীতি, সুদ, ঘুষ, চুরি, ডাকাতি, রাহাজানী এগুলোর চিন্তাও মানুষ করবে না। হত্যা, ধর্ষণ, হানাহানির মতো ঘটনা সমাজ থেকে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাবে। কালেভদ্রে দু’একটা হলেও সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ প্রদত্ত বিধানের আলোকে ন্যায়-বিচার হয়ে যাবে। প্রতিটা মানুষ নিশ্চিন্তে, নিরাপদে পথ চলতে পারবে। যেহেতু সুদের অস্তিত্বই থাকবে না সেহেতু সমাজে সম্পদের সুসম বণ্টন হবে, কোথাও অর্থ-সম্পদ পুঞ্জিভূত হতে পারবে না, সম্পদ কোথাও অলস পড়ে থাকবে না, গতিশীল হবে। অর্থনীতির গতিশীলতার ফলে প্রতিটা মানুষ উপকৃত হবে। সমাজ থেকে অভাব দূর হয়ে যাবে। খাদ্যের অভাব, বস্ত্রের অভাব, বাসস্থানের অভাব, শিক্ষালাভের অভাব, চিকিৎসার অভাব এক কথায় মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের কোনো অভাবই আর থাকবে না। সমাজ এতই সমৃদ্ধ হবে যে, দান গ্রহণ করার মতো মানুষও খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হবে। পুরো সমাজ হবে সীসাগলানো প্রাচীরের ন্যায় ঐক্যবদ্ধ, সমগ্র মানবজাতি হবে ভাই-ভাই। মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। জাতির ঐক্য বিনষ্টকারী কোনো কাজ, কোনো কথাকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। মানুষের মধ্যে সর্বাধিক সম্মানিত হবেন সেই ব্যক্তি যিনি ন্যায়-অন্যায়ের মাপকাঠিতে (তাকওয়া) শ্রেষ্ঠ। সমাজের নেতৃত্ব লাভের জন্য অসুস্থ প্রতিযোগিতার কথা কেউ চিন্তাও করতে পারবে না। নেতৃত্ব লাভের লোভ যারা করবে তারা নেতৃত্ব পাবার অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। সমাজের নেতৃত্ব দেবে সৎ, যোগ্য ও তাকওয়াবান মানুষগুলো। তারা কেবল মানুষের কল্যাণের জন্য নেতৃত্বের দায়িত্ব পালন করবেন। এর জন্য তারা কানাকড়িও স্বার্থ হাসিল করতে করবেন না। নিজের বাড়িতে খেয়ে, নিজের পকেটের টাকা খরচ করে জনগণের সেবা করবেন। জনগণের অর্থ, জাতির সম্পত্তি তসরুপ করার কোনো সুযোগই থাকবে না। শাসক অর্থাৎ নেতা জনগণকে পরিচালনার ক্ষেত্রে আল্লাহর দেওয়া নীতি অনুসরণ করবেন, জনগণকে সেবা করাকেই তার এবাদত মনে করবেন। জনগণও নেতার আদেশ মান্য করাকে এবাদত মনে করবে, শাসক বা নেতার মঙ্গলের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবে। গণমাধ্যম পূর্ণ স্বাধীনতা পাবে। কেবল একটি মাত্র শর্ত থাকবে, গণমাধ্যমের দ্বারা কারো চরিত্র হনন করা বা কোনরূপ মিথ্যা প্রচার করা যাবে না। সমাজ এতটাই অপরাধমুক্ত হবে যে, কোনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রয়োজন হবে না। সর্বপ্রকার অপরাধ প্রায় নির্মূল হয়ে যাবে। ইবলিসের প্ররোচনায় কেউ কোনো অপরাধ করে ফেললেও সে নিজে থেকে অনুতপ্ত হবে, পরকালীন মুক্তির আশায়, নিজেকে পবিত্র করার জন্য আদালতে স্বেচ্ছায় সে অপরাধ স্বীকার করে শাস্তি গ্রহণ করতে চাইবে। ভাই যেমন আরেক ভাইয়ের ক্ষতি হতে দেখলে সেটার প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করে, তেমনি সমাজের সবাই সবার নিরাপত্তা রক্ষার চেষ্টা করবে। সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা এমন উন্নত হবে যে, গায়ে স্বর্ণালঙ্কার পরিহিত অবস্থায় একজন সুন্দরী যুবতী নারী রাতের অন্ধকারে শত শত কিলোমিটার পথ পাড়ি দেবে, আল্লাহ ও বন্য জন্তু ছাড়া অন্য কোন কিছুর ভীতি তার মনে জাগ্রত হবে না। ইজ্জত অথবা সম্পদ কোনোকিছুই হারানোর ভয় থাকবে না। স্বর্ণ বা মূল্যবান দ্রব্য-সামগ্রীর দোকান খোলা রেখে মানুষ চলে গেলেও কোনো কিছু হারানোর বা কেউ চুরি করার চিন্তাও করবে না। রাস্তায় যত মহামূল্যবান স¤পদই পড়ে থাকুক কেউ ধরেও দেখবে না, কর্তৃপক্ষ তার মালিকের কাছে যথাযথভাবে পৌঁছে দেবে। যেহেতু চুরি-ডাকাতির কোনো ভয় থাকবে না তাই মানুষ রাতে ঘরের দরজা লাগানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করবে না। বিয়ে ব্যবস্থায় জটিলতা থাকবে না, সামর্থ্য অনুসারে মোহরানা আদায় ও অনুষ্ঠানাদি পরিচালনা করতে কোনো সমস্যা হবে না। এ ব্যাপারে কারো মনের উপর কেউ জোর করবে না। বর-কনে প্রত্যেকেরই স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার থাকবে। কন্যাদায়গ্রস্ত পিতাকে দারে দারে ভিক্ষা করতে হবে না, যৌতুকের কথা কেউ ভাবতেও পারবে না। এ পৃথিবীর প্রতিটা মানুষ জন্মগতভাবেই বিশ্বনাগরিক। পৃথিবীর সর্বত্র তার ফসল ফলানোর, শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠার অধিকার, যাতায়াতের অধিকার, সর্বত্র বাণিজ্য করার অধিকার দিয়েছেন আল্লাহ। আল্লাহর দেওয়া এই ব্যবস্থা বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানুষের কর্মসংস্থানের অভাব মেটানো হবে। যে সমাজে সকল কর্মক্ষম মানুষই কর্মসংস্থান পায়, সে সমাজের সমৃদ্ধি আপনা আপনি আসে। যাকাত ছাড়াও বিভিন্ন উপায়ে দানের ব্যাপারে ইসলামে এত বেশি জোর দেওয়া হয়েছে যে, মানুষে মানুষে অর্থনৈতিক বৈষম্য বহুলাংশে দূর হয়ে যাবে। এমন সমাজে অক্ষম-অসুস্থ মানুষও আর্থিক সমস্যায় পড়বে না, অভুক্ত থাকা তো দূরের কথা।
আমরা বিশ্বাস করি সমগ্র মানবজাতি এক আল্লাহর সৃষ্টি, এক পিতা-মাতা আদম-হাওয়ার সন্তান, কাজেই সকলেই ভাই-ভাই। গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যায় পৃথিবীর প্রধান যে কয়েকটি ধর্ম আছে তা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর নিকট থেকেই আগত, কিন্তু কালপরিক্রমায় আল্লাহর নিকট থেকে আগত ধর্মগুলোর আসল রূপ বা সঠিক শিক্ষা বিকৃত করে ফেলা হয়েছে। নবী-রসুল আগমনের ধারাবাহিকতায় শেষ নবী মোহাম্মদ (সা.), শেষ কেতাব পবিত্র কোর’আন এবং শেষ জীবনব্যবস্থা দীনুল হক (ইসলাম)। কিন্তু তবু পূর্ববর্তী কেতাবগুলোকে এবং পূর্ববর্তী নবী-রসুল, মহামানবদেরকে সম্মান করা প্রত্যেক মো’মেনের কর্তব্য। এই বিশ্বাস প্রতিষ্ঠিত হলে সাম্প্রদায়িক হানাহানি বিলুপ্ত হয়ে যাবে, ধর্মীয় সম্প্রীতির একটি অভূতপূর্ব নিদর্শন স্থাপিত হবে পৃথিবীতে। আল্লাহর সত্যদীন যখন অর্ধপৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেই সম্প্রীতি ও পরধর্মসহিষ্ণুতার যে স্বাক্ষর আসহাবে রসুলগণ রেখে গেছেন তা আজও অতুলনীয়।
প্রকৃতির উপর অত্যাচারের ফলে অনেক জনপদ বসবাসের অযোগ্য হয়ে গেছে, অসংখ্য জীব-জন্তু বিলুপ্ত হয়ে গেছে। প্রকৃতি তার রূপ, রং, রস হারিয়ে ফেলেছে। প্রকৃতির উপর এই অত্যাচার বন্ধ হবে। প্রকৃতি তার আসল রূপ ফিরে পাবে। বন, নদী, খাল, বিল, পশু, পাখি, মৎস্য স¤পদ, খনিজ স¤পদ ইত্যাদি কোনো বিশেষ শ্রেণির বা নির্দিষ্ট এলাকার মানুষের কুক্ষিগত থাকবে না। কারণ এগুলি মানবজাতির স¤পদ, এর উপর সবার সমান অধিকার। প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে যে, সর্বত্র স্বাস্থ্যসম্মত, দূষণমুক্ত, নির্মল পরিবেশ বিরাজ করবে, গণস্বাস্থ্যের ক্ষতি করে এমন কোন কিছু থাকবে না। ডাক্তারগণ রোগীকে খদ্দের ভাববেন না বরং রোগীর সঠিক চিকিৎসা সেবা দেওয়াকে তিনি তার এবাদত মনে করবেন, স্রষ্টার দেওয়া দায়িত্ব মনে করবেন। মানুষ ডাক্তার হবে কেবল মানুষের সেবা করার আশায়, স্বার্থ হাসিলের আশায় নয়। হাসপাতালগুলো এমন হবে যেন রোগী সেখানে গেলেই মানসিকভাবে সুস্থ হয়ে যায়, ডাক্তারের আচরণে, তাদের সেবায় রোগীদের মন শান্ত হয়ে যাবে, আরোগ্যের ব্যাপারে রোগীরা হাসপাতালের ব্যাপারে পূর্ণ আস্থাশীল হবে। রোগনির্ণয়ের পরীক্ষার নামে দুর্নীতি, ঔষধে ভেজাল এগুলো তো কল্পনাই করা যাবে না।
সমাজের সকল কাজে পুরুষের পাশাপাশি শালীনতার সাথে নারীরাও অংশগ্রহণ করবে। অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে ঘরে আবদ্ধ রেখে জাতি উন্নত হতে পারে না। রসুলাল্লাহও (সা.) নারীদেরকে সকল কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছেন, পরিবার ব্যবস্থাপনায়, সামাজিক শৃঙ্খলায়, হাসপাতাল-ব্যবস্থাপনায় এমনকি যুদ্ধে পর্যন্ত নিয়ে গেছেন নারীদেরকে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে, জুম’আর নামাজে, ঈদের নামাজে, হজের অনুষ্ঠানে, জানাজায়, রসুলাল্লাহর সাথে সরাসরি আলোচনা অনুষ্ঠানে এক কথায় সকল সমাবেশে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছেন। নারীদের পরামর্শ নিয়েছেন। কাজেই নতুন সভ্যতা নির্মাণে নারীদের সমস্ত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, শক্তি, সাহস, জ্ঞান, প্রজ্ঞা ইত্যাদির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। স্রষ্টার নাফরমানি ও অশ্লীলতামুক্ত সঙ্গীত, চলচ্চিত্র, সাহিত্য অর্থাৎ সংস্কৃতির চর্চা করার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হবে। অর্থাৎ সুস্থ সংস্কৃতির চর্চার মাধ্যমে সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটানো হবে। এমন ন্যায়বিচার সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে যে, বিচারের রায়ে বাদী-বিবাদী উভয়ই সন্তষ্ট থাকবে। এমন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হবে, বিচারের ক্ষেত্রে ধনী-দরিদ্রের, শক্তিমান-দুর্বলের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকবে না। বিচারপ্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতার কোন সুযোগ থাকবে না। বিচার চাইতে গিয়ে ঘাটে ঘাটে অর্থ ব্যয় করে কাউকে অপদস্থ ও নিঃস্ব হতে হবে না। ব্যবসা-বাণিজ্য ও বাজারব্যবস্থা উন্মুক্ত ও অবাধ হবে, ব্যবসায়িক অনুমতির জন্য অতিরিক্ত অর্থব্যয়ের প্রয়োজন হবে না, ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যখানে সুবিধাবাদী কোন শ্রেণিই থাকবে না। ওজনে কম দেওয়া, মানুষকে ঠকানো এবং ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট ও মজুদদারীর কথা কেউ চিন্তাও করতে পারবে না।
ধর্ম এসেছে আল্লাহর পক্ষ থেকে সকল মানুষের কল্যাণের জন্য, কাজেই কেউ ধর্মকে ব্যবসার মাধ্যম বা অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করতে পারবে না। ধর্মের যাবতীয় কাজ হবে নিঃস্বার্থভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ও মানবতার কল্যাণে। সমাজে ধর্মব্যবসায়ী একটা শ্রেণি ধর্মের বিভিন্ন কাজ করে দিয়ে স্বার্থ হাসিল করবে, টাকার বিনিময়ে ধর্মের বিভিন্ন কাজ করে দেবে, আর সাধারণ মানুষ ধর্মের কোনো জ্ঞানই রাখবে না- এমন ব্যবস্থা থাকবে না।
শ্রমিকদের কোনো দুর্দশা থাকবে না। সত্যিকার অর্থেই মালিক এবং শ্রমিকের মধ্যে সম্পর্ক হবে ভাইয়ে-ভাইয়ে সম্পর্কের ন্যায়। শ্রমিক স্বীয় যোগ্যতা, দক্ষতা ও মর্যাদা অনুযায়ী শ্রম দেবে। সেবা প্রদানে ও সুবিধা গ্রহণে দাতা-গ্রহীতা উভয় পরিতুষ্ট থাকবে। শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগেই সে তার প্রাপ্য মজুরি পেয়ে যাবে, ন্যায্য পাওনা ও অধিকারের জন্য কাউকে আন্দোলন করতে হবে না। শিক্ষাব্যবস্থা এমন হবে যেন মানুষ শিক্ষিত হয়ে সত্যিকারের যোগ্য, সৎ, ন্যায়নিষ্ঠ, নিরহংকার, আমানতদার, মানবতাবাদী, দেশপ্রেমিক, মো’মেন হতে পারে। শিক্ষার্জন করতে গিয়ে কাড়ি কাড়ি অর্থ খরচের প্রয়োজন হবে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বিদ্যা অর্জন করে কেউ দুর্নীতিবাজ হবে না, আত্মস্বার্থে দেশ বিক্রি করার ষড়যন্ত্র করবে না। ছাত্রের কাছে একজন শিক্ষক হবেন শ্রদ্ধায় দেবতুল্য এবং ছাত্ররাও হবে শিক্ষকের আত্মার সন্তান। মানবজাতির মহান শিক্ষক নবী করিম (দ) এর সামনে বসে নারী-পুরুষ উভয়ই শিক্ষা অর্জন করতেন, কাজেই প্রকৃত ইসলামেও নারী-পুরুষ উভয়ই শিক্ষকের সামনে বসে শিক্ষা অর্জন করবেন।
স্রষ্টার সৃষ্টির ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ যে কোনো জিনিস নিয়ে গবেষণা করা যাবে কিন্তু মানুষের ক্ষতি হয় এমন কিছু করা হবে না। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মানবজাতির স¤পদ, কোনো নির্দিষ্টি ব্যক্তি বা জাতির স¤পদ নয়। প্রযুক্তি আবিষ্কার ও ব্যবহার আরও বৃদ্ধি পাবে, কেবল অপব্যবহার থাকবে না, কোনো কিছুই মানুষের অকল্যাণে ব্যবহার হতে দেওয়া হবে না।
ধর্মবিশ্বাস, পোষাক-পরিচ্ছদ, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি নিয়ে কোনোরূপ বাড়াবাড়ি, জোর-জবরদস্তি করা হবে না। তবে প্রত্যেক বিষয়ের ভালো-মন্দ সুস্পষ্টভাবে মানুষের সামনে তুলে ধরা হবে। মানুষ যেন ভালো বিষয়গুলোর চর্চা করতে পারে ও মন্দ বিষয়গুলো থেকে দূরে থাকতে পারে সে পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে। জাতির সমস্ত কর্মকাণ্ডের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকবে, লক্ষ্যহীন অনর্থক কোনো কর্মকাণ্ডে জাতি জড়াবে না।
মানুষ জন্তু-জানোয়ারের মতো কেবল দেহসর্বস্ব, ভোগসর্বস্ব প্রাণী নয়। তার ভিতরে আছে আল্লাহর রূহ, আল্লাহর আত্মা, এজন্য মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ জীব। যখন আল্লাহর ইসলাম অর্ধ-পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত ছিলো, সমাজের প্রতিটি মানুষ আল্লাহকে ভয় পেত। সত্যবাদিতা, আমানতদারি, পরোপকার, মেহমানদারি, উদারতা, ত্যাগ, দানশীলতা ইত্যাদি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে মানুষের চরিত্র পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। মুসলিমদের ওয়াদার মূল্য ছিলো তাদের জীবনের চেয়েও বেশি। এটা হয়েছিল আল্লাহর দেওয়া সিস্টেমের কারণে। কেননা আল্লাহর সিস্টেম কেবল মানবসমাজের বাহিরের দিকগুলি (অর্থনীতি, দণ্ডবিধি, প্রশাসন ইত্যাদি) নিয়েই কাজ করে না, এটি মানুষের চরিত্রকেও গড়ে তোলে আল্লাহর গুণাবলীর আলোকে। ফলে প্রতিটি মানুষ হয়ে যায় সত্যের প্রতিমূর্তি। তাই সে সমাজে খাদ্যে ভেজাল দেওয়ার কথা কেউ কল্পনাও করবে না, অন্যের স¤পদে হাত দিতে প্রভুর ভয়ে তারা তটস্থ থাকবে।
কেউ মনে করতে পারেন, এই রকম সমাজ ও রাষ্ট্র কেবল কল্পনাই করা সম্ভব, বাস্তবে এটা সম্ভব নয়। তাদের জ্ঞাতার্থে বলছি, এমন সমাজব্যবস্থাই ১৪০০ বছর আগে অর্ধ-পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থা গ্রহণ করার ফলে। যুগে যুগে এমন সমাজ বারবার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যখনই আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থা মানুষ গ্রহণ করে নিয়েছে। সেই জীবনব্যবস্থার রূপরেখা আবার আল্লাহ দান করেছেন। ইসলামের প্রকৃত ইতিহাস জানেন এমন যে কোনো চিন্তাশীল মানুষই একথা বলতে বাধ্য হবেন যে, বর্তমানে ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠী আমাদের সমাজে যে ইসলামটা চালু করে রেখেছে এটা আল্লাহ রসুলের প্রকৃত ইসলাম নয়। আমরা বলছি আল্লাহর দেওয়া প্রকৃত ইসলামের কথা, যে জীবনব্যবস্থা, দীন ব্যক্তিকে করবে আধ্যাত্মিকভাবে পরিশুদ্ধ, পরিবারকে করবে শান্তিপূর্ণ, সমাজকে করবে সুশৃঙ্খল এবং জাতিকে করবে ঐক্যবদ্ধ ও সমৃদ্ধ, এক কথায় মানুষকে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি, উন্নতি, প্রগতির সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছে দেবে। এখন মানুষ যদি সিদ্ধান্ত নেয় যে, তারা সেই জীবনব্যবস্থাটি গ্রহণ করবে তাহলেই উপরোক্ত শান্তি, ন্যায়বিচার, জীবন ও স¤পদের পূর্ণ নিরাপত্তা সমাজে ফিরে আসা সম্ভব। কিন্তু মানুষ যদি এই অন্যায়-অশান্তিপূর্ণ সমাজকে ভালোবেসেই হোক আর ঘৃণা করেই হোক আঁকড়ে ধরে রাখতে চায় সেটার ফলভোগ তাদেরই করতে হবে। পৃথিবীতে তারা তাদের নিজের জ্বালানো আগুনে পুড়ে মরবে, ওপারেও পুড়ে মরবে জাহান্নামের আগুনে।