অর্থনীতি ও বাণিজ্য ডেস্ক:
বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল (বিআইডিএফ) থেকে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষকে আরও ১৭০ মিলিয়ন ইউরো বা ১৮৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিতে যাচ্ছে সরকার। এ নিয়ে এই তহবিল থেকে মোট ২৪৭ মিলিয়ন ইউরো বা ২৬৬.৩৮ মিলিয়ন ডলার দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে সোনালী ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে এ অর্থ ছাড় প্রক্রিয়াধীন। 'পায়রা বন্দরের রামনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ও মেইনটেন্যান্স ড্রেজিং' শীর্ষক প্রকল্পের ঠিকাদার বেলজিয়ামভিত্তিক কোম্পানি জান ডে নুলের বিল পরিশোধে এ অর্থ দেওয়া হচ্ছে।
২০২১ সালের ১৫ মার্চ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়নের লক্ষ্যে বিআইডিএফ গঠন করা হয়। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে অর্থ নিয়ে এ তহবিল গঠন করে সরকার। বিআইডিএফ থেকে এ পর্যন্ত একমাত্র পায়রা বন্দরের এই প্রকল্পে অর্থায়ন করা হচ্ছে। এ নিয়ে পঞ্চম দফায় অর্থ ছাড় করা হল। এর আগে চার দফায় ৭৭ মিলিয়ন ইউরো ছাড় করা হয়েছে। এই অর্থায়নের লক্ষ্যে অর্থ বিভাগ, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ ও সোনালী ব্যাংকের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় ঋণ চুক্তি রয়েছে।
চুক্তিটি অনুযায়ী, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষকে সরকার বিআইডিএফ তহবিল থেকে অর্থ নিয়ে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষকে তিন বছরে মোট ৫২৪ মিলিয়ন ইউরো ঋণ দেবে। ঋণ বিতরণ শেষে বন্দর কর্তৃপক্ষ ২ শতাংশ সুদসহ ৭ বছরে পুরো অর্থ পরিশোধ করবে। এই সুদের অর্ধেক যাবে তহবিলে আর বাকি অর্ধেক পাবে সোনালী ব্যাংক।
রাবনাবাদ চ্যানেলে এই ড্রেজিংয়ের ফলে পায়রা বন্দর থেকে সাগরের মধ্যে ৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ও সাড়ে ১০ মিটার গভীরতার একটি চ্যানেল সৃষ্টি হবে। এতে বন্দরে ৪০ হাজার টনের জাহাজ ভেড়ানোর সক্ষমতা তৈরি হবে। এর ফলে পদ্মা সেতুর মাধ্যমে এই বন্দর থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব স্থানে দ্রুততম সময়ে বাণিজ্যিক পণ্য পরিবহন করা হবে। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল ও ভুটানেও বাণিজ্যিক পণ্য পরিবহন করা সম্ভব হবে।
এতে করে আমদানি রপ্তানি পণ্যের পরিবহন ব্যয় কমে আসবে। শিল্পকারখানার কাঁচামালের দাম কমবে। দেশের পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে আরও প্রতিযোগিতামূলক হবে। রাবনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ও মেইনটেন্যান্স ড্রেজিং প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ব্যয় হবে ৪ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। মূল টার্মিনাল থেকে ওপরের অংশে ৫৩ কিলোমিটার আর টার্মিনালের ভেতরের অংশে ২২ কিলোমিটার। ৫৩ কিলোমিটারের মধ্যে ২২ কিলোমিটারে সবচেয়ে বেশি পলিমাটি জমা হয়। বাকি অংশগুলোতে পলিমাটি জমা হওয়ার পরিমাণ কিছুটা কম। রাবনাবাদ চ্যানেলটির নাব্যতা ঠিক রাখতে বছরে চার মিলিয়ন ঘনমিটার পলিমাটি অপসারণ করতে হবে। বিআইডিএফকে এই পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেওয়ার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ কিছুটা কমবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ৮ ফেব্রুয়ারি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিলো ৩২ হাজার ৬৩৯ মিলিয়ন ডলার।
এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল(আইএমএফ) সম্প্রতি এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ), এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি (ইএফএফ) এবং রেসিলিয়েন্স অ্যান্ড সাস্টেইনেবিলিটি ফান্ড (আরএসএফ) কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশকে যে ঋণ দিচ্ছে তার শর্তে বলা হয়েছে-বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হিসাব করার ক্ষেত্রে এ ধরনের ঋণের অর্থ বাদ দিতে হবে।
একইসঙ্গে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল(ইডিএফ), শ্রীলংকা ও বাংলাদেশ বিমানকে দেওয়া ঋণের অর্থও রিজার্ভের হিসাব থেকে বাদ দেওয়ার শর্ত রয়েছে আইএমএফের। জানতে চাইলে এই প্রকল্পের পরিচালক রাজিব ত্রিপুরা অর্থ ছাড় বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারের বিল পরিশোধের জন্য অর্থ চেয়ে আবেদন করেছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অর্থ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। অর্থ ছাড় এখন প্রক্রিয়াধীন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমলেও এ অর্থ ছাড় করা হবে। কারণ এ বিষয়ে সরকারের চুক্তি রয়েছে। তবে আপাতত বিআইডিএফের আওতায় আর কোনো প্রকল্পে অর্থায়ন না করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।