Date: November 23, 2024

দৈনিক বজ্রশক্তি

Header
collapse
...
Home / বিশেষ নিবন্ধ / লক্ষ্য হারানোর দিনগুলো

লক্ষ্য হারানোর দিনগুলো

November 28, 2022 06:35:57 PM   বিশেষ নিবন্ধ
লক্ষ্য হারানোর দিনগুলো

রিয়াদুল হাসান:
মানবসৃষ্টির সূচনালগ্নে ইবলিস ও আল্লাহর মধ্যে চ্যালেঞ্জটা হয়েছিল কী নিয়ে? ইবলিস এটাই প্রমাণ করতে চেয়েছিল যে মানুষ আল্লাহর রুহ ধারণ করে যে ইচ্ছাশক্তি প্রাপ্ত হলো, সে ইচ্ছাশক্তি ব্যবহার করে সে আসলে আল্লাহর দেখানো পথে চলবে না। সে আল্লাহর অবাধ্য হবে এবং নিজের পরিকল্পনা মোতাবেক চলবে। এর পরিণাম হবে অন্যায় অবিচার যুদ্ধ রক্তপাত, এক কথায় অশান্তি। মানুষ যদি অশান্তিতে থাকে তাহলেই ইবলিস চ্যালেঞ্জে বিজয়ী হয়ে গেল। মানুষকে ইবলিস প্ররোচনা দিয়ে আল্লাহর হুকুম-বিধান থেকে বিচ্যুত করবে আর এটাই ইবলিসের প্রতিজ্ঞা। 
মানুষ যেন শান্তিতে জীবনযাপন করতে পারে সেজন্য আল্লাহ নবী-রসুলদের মাধ্যমে জীবনবিধান পাঠালেন এবং তার নাম দিলেন ইসলাম। সালাম মানে শান্তি। আল্লাহর রসুল সমগ্র পৃথিবীতে এই শান্তিময় পরিস্থিতি প্রতিষ্ঠা করার দায়িত্ব নিয়ে আবির্ভূত হলেন। একই উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি একটি জাতি বা উম্মাহ গঠন করলেন। তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে তিনি জেহাদ করলেন অন্যায়ের ধারকদের বিরুদ্ধে। আরব উপদ্বীপে অনাবিল শান্তি প্রতিষ্ঠা করে তিনি বিদায় নিলেন ধরাপৃষ্ঠ থেকে। আর বাকি পৃথিবীর দায়িত্ব অর্পণ করে গেলেন তাঁর উম্মাহর উপর। 
আল্লাহ রসুলকে জাতির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানিয়েছেন যে জাতির হায়াত হবে ৬০/৭০ বছর। এটা উম্মাহর ব্যক্তিগত আয়ু নয়। আল্লাহর রসুল বুঝিয়েছেন যে তাঁর জাতি সঠিক পথের উপর, সঠিক আকিদার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে ৬০/৭০ বছর পর্যন্ত। তারপর ইবলিসের প্ররোচনায় তারা বিকৃতির দিকে, আদর্শিক পতনের দিকে ধাবিত হবে। যখন তাঁর জাতি তার সৃষ্টির উদ্দেশ্য ছেড়ে দেবে তখন আর সেটা তাঁর জাতি রইবে না। জাতি হিসাবে তার মৃত্যু হবে। একটি আদর্শিক আন্দোলন যদি আদর্শ ত্যাগ করে তাহলে সেই আন্দোলনের মৃত্যু ঘটে, সদস্যরা দৈহিকভাবে বেঁচে থাকলেও তাদের চিন্তাধারা পাল্টে যায়। তাদেরকে দিয়ে আর ঐ আদর্শের বিজয় হয় না।
মুসলিম উম্মাহ যে প্রকৃত ইসলাম হারিয়ে বিপথগামী হবে সে তথ্য বহু হাদিসেই মিলবে। যেমন রাসুল (সা.) বলেছেন, “আমার পর আমার উম্মাহর মধ্যে ৩০ বছর পর্যন্ত খিলাফত থাকবে তারপর শুরু হবে বংশীয় শাসন (মুলকান আদ্দান) [একই বর্ণনা-সুনানে আবু দাউদ (২/২৬৪) এবং মুসনাদে আহমদ (১/১৬৯) থেকেও পাওয়া যায়।] 
ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে জাতির আদর্শচ্যুতির ভবিষ্যদ্বাণী পাওয়া যায়। রসুলাল্লাহ স্পষ্ট করে বলেছিলেন যে, সর্বোত্তম যুগ হল আমার যুগ, এরপর যারা তাদের নিকটবর্তী। এরপর যারা তাদের নিকটবর্তী। এরপর আসবে এমন এক যুগ যে যুগের লোকেরা হবে মোটা এবং মোটা হওয়াটা তারা পছন্দ করবে। সাক্ষী চাওয়ার আগেই তারা সাক্ষ্য দিবে। তারা খেয়ানত করবে এবং তাদের নিকট আমানত রাখা যাবে না। তারা আল্লাহর নামে মানত করবে কিন্তু তা পুরা করবে না। [বুখারি ২৬৫১, ৩৬৫০, ৬৪২৮, ৬৬৯৫, মুসলিম ২৫৩৫, তিরমিযি ২২২১, ২২২২, নাসায়ী ৩৮০৯, আবু দাউদ ৪৬৫৭, আহমদ ১৯৩১৯, ১৯৩৩৪, ১৯৪০৫, ১৯৪৫১] সাধারণত আরাম আয়েশ আর ভোগবিলাসের ফলেই দেহে স্থূলত্ব প্রকাশ পায়।
এখন আসুন ইতিহাসের সঙ্গে রসুলাল্লাহর ভবিষ্যদ্বাণীগুলো মিলিয়ে দেখি। রসুলাল্লাহর ওফাতের পর থেকে যদি ৬০/৭০ বছর হিসাব করা হয় তাহলে উমাইয়া খেলাফতের সময়টা দৃশ্যপটে আসে। তাঁর সাহাবীরা ইতোমধ্যেই পরলোকগমন করেছেন। শাসন ক্ষমতায় তৃতীয়/চতুর্থ প্রজন্ম। একেকজন শাসক নিহত হচ্ছেন তারই পরিবারের সদস্যদের হাতে। কেউই পূর্ণ হায়াত লাভ করছেন না। পারস্য খসরু বা রোমান কেসরাদের মতো ভোগবিলাসে গা ঢেলে দিয়েছেন খলিফা ও আমির-ওমরাহগণ। মদ্যপান ও ব্যভিচার করছেন আসর জমিয়ে। তারা বাস করছেন সুরম্য প্রাসাদে। দীন প্রতিষ্ঠার জেহাদ ছেড়ে সাম্রাজ্যবিস্তারে ব্যবহার করছেন মুসলিমদের অপরাজেয় সামরিক শক্তিকে। আমরা আলোচনার সুবিধার্থে একজন খলিফাকে উদাহরণ হিসাবে নিতে পারি। তার নাম ওয়ালিদ ইবনে ইয়াজিদ ইবনে আব্দুল মালিক। তিনি ১২৫ হিজরিতে খলিফা হিসাবে বায়াত নেন। তার বয়স তখন ৩৪। তার পূর্ববর্তী খলিফা ছিলেন তার চাচা হিশাম ইবনে আব্দুল মালিক। আমরা বর্ণনা করছি ইবনে কাসিরের লেখা সুবিখ্যাত ইতিহাস গ্রন্থ আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়ার দশম খণ্ড থেকে।
খলিফা হওয়ার আগেই ওয়ালিদ যুবরাজ হিসাবে বিরাট ক্ষমতা ও সুবিধা ভোগ করতেন। তার গুনের বহর বলে শেষ করা যাবে না। নষ্ট হতে হতে তিনি এমন পর্যায়ে নেমে গিয়েছিলেন যে, প্রকাশ্যে মদ্য পান, মন্দ লোকের সাহচর্য এবং আমোদ-প্রমোদে দিনরাত তিনি ডুবে থাকতেন। ১১৬ হিজরিতে তাকে হজের পরিচালক বা আমির-ই-হজ বানিয়ে মক্কা শরীফে প্রেরণ করেন খলিফা। তিনি হজের সফরে লুকিয়ে তার পোষা শিকারী কুকুরগুলোকে নিয়ে যান। লুকিয়ে নেন কারণ হজের সময় প্রথমত শিকার করাই নিষিদ্ধ। দ্বিতীয়ত কুকুর নিয়ে কাবা প্রাঙ্গণে যাওয়াকে ধর্মীয় দৃষ্টিতে মন্দ চোখে দেখা হতো। হাজীরা হজের সময় উট, বকরি, দুম্বা ইত্যাদি নিয়ে যেতেন কোরবানীর উদ্দেশে। যাহোক, তিনি কিছু সিন্দুকের ভিতরে কুকুরগুলোকে ঢুকিয়ে যাত্রা করেন। সিন্দুকগুলো তুলে দেওয়া হয় উটের পিঠে। পথিমধ্যে হঠাৎ একটি সিন্দুক উটের পিঠ থেকে পড়ে যায়। পড়ে গিয়ে ভিতরে থাকা কুকুরগুলো আতঙ্গে চিৎকার জুড়ে দেয়। তাদের চিৎকারে উটগুলো ভয় পেয়ে অস্থির হয়ে ওঠে। এজন্য ওয়ালিদ উটগুলোকে প্রহার করেন। 
ঐ যাত্রায় ওয়ালিদ কাবা শরিফের সমান মাপে একটি গম্বুজ নির্মাণ করে সেটাও সঙ্গে করে নিয়ে যান। তার ইচ্ছে ছিল কাবাঘরের ছাদে সেটি স্থাপন করে ইয়ার-দোস্তদের নিয়ে তিনি সেটির ভিতরে বসবেন। আর সাথে নিয়ে যাওয়া মদ পান করবেন, বাদ্যযন্ত্র ইত্যাদি বাজাবেন। কিন্তু মক্কা শরিফে পৌঁছার পর তিনি তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ভয় পেয়ে যান। কাবা গৃহের ছাদে উঠলে জনগণ তাকে বাধা দিবে এই আশঙ্কায় আর ঐ পথে অগ্রসর হন নি। এখন আপনারাই বলুন, এটা কি উম্মতে মোহাম্মদী নামক জাতির চিত্র? 
ওয়ালিদের মদ্যপান ও নানা পাপচারিতার কথা অবগত হয়ে চাচা হিশাম ইবনে আব্দুল মালিক তাকে খেলাফতের দাবি থেকে বহিষ্কার করে আপন ছেলে মাসলামা ইবনে হিশামকে উত্তরাধিকার বানানোর সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয় নি। আর হলেও তেমন কিছু বেশকম হতো না। কারণ মাসলামাও ছিলেন ওয়ালিদের মদ্যপানের সঙ্গী। তার ডাক নাম ছিল আবু শাকির। একদিন চাচা হিশাম ওয়ালিদকে ডেকে বললেন, “তুই কি মুসলিম আছিস নাকি মুসলিম নেই আমি বুঝি না। কারণ যত প্রকারের মন্দ ও নোংরা কাজ তার সবগুলো তো তুই বিনা দ্বিধায়-নিঃসংকোচে প্রকাশ্যে করে যাচ্ছিস।”
এর উত্তর ওয়ালিদ দিয়েছিলেন লিখিত কবিতার মাধ্যমে। 
“হে ঐ ব্যক্তি যে আমার দীন সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপন করেছ।
তুমি জেনে নাও যে আমি আবু শাকিরের দীনে অধিষ্ঠিত আছি।
আমরা দু’জনে খাঁটি মদই পান করে থাকি।
তবে কখনও ঐ মদে গরম পানিয়ে মিশিয়ে খাই, আর কখনও ঠাণ্ডা পানি।”
খেলাফতের উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করায় চাচা-ভাতিজার দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে। এক পর্যায়ে ওয়ালিদ রাজ দরবার ত্যাগ করে গ্রাম্য এলাকায় চলে যান। এই পরিস্থিতিতে একদিন খলিফা হিশাম এন্তেকাল করেন। খলিফা হন ওয়ালিদ। খলিফা হয়েই তিনি তার প্রিয়ভাজনদেরকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নিয়োগ দেন। খোরাসানের প্রশাসক ছিলেন ইউসুফ ইবনে উমর। তাকে পদচ্যুত করা হলে তিনি খলিফার দরবারে এসে শাসনভার ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানান। ওয়ালিদ তাই করেন। খুশি হয়ে ইউসুফ ১০০০ ক্রীতদাস ঘোড়ার পিঠে চড়িয়ে ১০০০ তরুণী, প্রচুর স্বর্ণ ও রূপার পাত্রসহ উপঢৌকনের বিশাল বহর, সঙ্গে তানপুরা, দোতরা, সেতারা, তবলা ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্রও রাজদরবারে প্রেরণ করেন।
ওয়ালিদ ছিলেন একজন প্রকাশ্য ব্যভিচারী পাপাসক্ত ও সীমালংঘনকারী মন্দ লোক। তিনি আল্লাহর নিষিদ্ধ বিষয়গুলোকে অবজ্ঞা করতেন। কেউ কেউ তাকে মুরতাদ বলেও ফতোয়া দিয়েছেন। একবার জনৈক খ্রিষ্টান পরমা সুন্দরী মহিলার উপর খলিফা ওয়ালিদের নজর পড়ে। মহিলার নাম ছিল সুফরা। তিনি সুফরাকে ভালোবেসে ফেলেন। তাকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য ওয়ালিদ ভালোবাসার প্রস্তাবসহ এক লোককে সুফরার নিকট পাঠান। কিন্তু সুফরা ঐ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। বিরহে ওয়ালিদ হা-হুতাশ ও পাগলামি শুরু করেন। তবুও সুফরা রাজি হন নি। বড়দিন বা যে কোনো ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে একদিন খ্রিষ্টানগণ তাদের গির্জায় সমবেত হন। ওয়ালিদ ছদ্মবেশে কাছাকাছি একটি বাগানে গমন করেন এবং এই ভান করেন যে তিনি বিপদগ্রস্ত। খ্রিষ্টান মহিলাগণ তার আর্তচিৎকার শুনে গির্জা থেকে বেরিয়ে বাগানে তার কাছে যান। তারা তাকে অসুস্থ ও বিপন্ন দেখতে পেয়ে তার সেবা-শুশ্রƒষা শুরু করেন। এই সুযোগে তিনি তখন সুফরার সাথে কথা বলতে থাকেন। উভয়ে খোশগল্প ও হাসাহাসি করতে থাকেন। সুফরা স্বভাবতই তাকে চিনতে পারেন নি। ইতোমধ্যে তিনি প্রাণ ভরে সুফরাকে দেখে নেন। সুফরা যখন ফিরে যান তখন তাকে জানানো হয় যে, ‘তুমি কি জানো ঐ পুরুষটি কে?’ তিনি বললেন, ‘না।’ তাকে বলা হলো যে, ‘তিনিই ওয়ালিদ।’ তিনি যখন নিশ্চিত হন যে প্রকৃতপক্ষেই সেই ব্যক্তি ওয়ালিদ তখন তিনিও তার প্রতি আকৃষ্ট হন। এমনকি ওয়ালিদ তার প্রতি যতটা না আসক্ত ছিলেন তিনি তার চেয়েও বেশি আসক্ত হয়ে পড়েন। এই প্রেক্ষাপটে ওয়ালিদ কিছু কবিতা রচনা করেন সেগুলো পড়লেই তার এ প্রকারের উন্মত্ততা, দীনের প্রতি অবজ্ঞা, পথভ্রষ্টতা, কুফরি ও পাগলামির প্রমাণ পাঠক পেয়ে যাবেন। তিনি আবৃত্তি করলেন, 
“হে ওয়ালিদ! এখন তোমার হৃদয় হেসে উঠেছে। দীর্ঘদিন থেকে যে সুন্দরীকে ভালোবেসেছিলে তাকে শিকার করতে পেরে তুমি আনন্দিত হয়েছ। ঈদের দিনে সে গির্জায় এসেছিল। আমি তাকে দেখেছি যেন একটি কাষ্ঠখণ্ড এগিয়ে আসছে। ঐ কাঠ ছিল বেদীর কাঠ। আমি তখন আমার প্রতিপালকের নিকট প্রার্থনা করেছিলাম যে আমি যেন তার সাথে মিলিত হই এবং জাহান্নামের জ্বালানি হয়ে জ্বলতে থাকি। যদি আমাকে বলা হয় যে এক মদ্যপ খ্রিষ্টান মহিলার সাথে তোমার সাক্ষাৎ ঘটবে তবে যত কষ্টের সফর হোক তা হবে আমার জন্য আনন্দদায়ক ও স্বাদের। তখন রাত পর্যন্ত আমরা দিন উপভোগ করব। জোহরও পড়ব না, আসরের নামাজও পড়ব না। এটি তখন আমার জন্য মামুলি ও সহজ হয়ে যাবে।”
ইবনে আসাকির উল্লেখ করেছেন যে, ইরাকের হীরা প্রদেশে প্রসিদ্ধ মদ বিক্রেতা আছে এ সংবাদ ওয়ালিদ জানতে পারেন। তিনি সিরিয়ার দামেস্ক থেকে ঘোড়া ছুটিয়ে হীরায় পৌঁছেন এবং ঘোড়ার পিঠে বসেই তিন পোয়া মদ পান করেন। মদ খেয়ে সন্তুষ্ট হয়ে তিনি মদবিক্রেতাকে ৫০০ স্বর্ণমুদ্রা বখশিশ দেন। 
এমন আরো বহু ঘটনা ওয়ালিদের জীবনে ঘটেছে যা বর্ণনা করতে গেলে দীর্ঘ ফিরিস্তি হয়ে যাবে। ওয়ালিদের কাজকর্মে জনগণ অতীষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। তার পরিবারের লোকেরাও তাকে কুফরি, ধর্মত্যাগ, আপন পিতার পত্নী-উপপত্নীদের সাথে শয্যাসঙ্গী হওয়া এমনকি সমকামিতার অভিযোগেও অভিযুক্ত করে।
খলিফা ওয়ালিদ নিহত হন বিদ্রোহীদের হাতে। আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখে তিনি দুর্গের মধ্যে তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন। যখন আক্রমণকারীরা তাকে ঘিরে ধরে তখন তিনি তড়িঘড়ি করে একটি কোর’আন সামনে রেখে পড়তে শুরু করেন। কিন্তু লাভ হয় না। তার কর্তিত মস্তক বর্শায় গেঁথে পুরো দামেস্ক শহর ঘোরানো হয়। তারপর সেটা মসজিদের প্রাঙ্গনে প্রদর্শনের জন্য রেখে দেওয়া হয়। 
এখন ফিরে আসি মূল প্রসঙ্গে। এতক্ষণ যে সমাজের চিত্র আপনাদের সামনে তুলে ধরা হলো এটা কি কোনো ইসলামের সুমহান শিক্ষায় শিক্ষিত সমাজের চেহারা? এটা কি উম্মতে মোহাম্মদীর আদর্শের প্রকাশ? যদি একে ইসলামের ইতিহাস বলা হয় তাহলে দীনের এর চেয়ে বড় অবমাননা আর কিছু হতে পারে না। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, আল্লাহর রসুল যে জাতিটিকে নিজ হাতে প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তুলেছিলেন, যাদেরকে এই দীনের আকিদা শিক্ষা দিয়েছিলেন সেই জাতিটি রক্ত দিয়ে প্রাণ দিয়ে আল্লাহর দীন অর্ধদুনিয়ায় প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছেন। তাঁদের পরবর্তী প্রজন্ম বিনা ক্লেশে সেই বিরাট ভূখণ্ডের সম্পদ ও শাসনক্ষমতা লাভ করে আদর্শবিচ্যুত হয়ে ভোগবিলাসে মত্ত হয়ে যায়। অন্যান্য রাজাবাদশাহদের মতোই তারা নিজ ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ করতে মসনদের অন্যান্য দাবিদারদেরকে বা বিরুদ্ধাচারণকারীদেরকে নির্মমভাবে নির্যাতন ও হত্যা করতে থাকে। মুসলিমরাই একে অপরের বিরুদ্ধে ভ্রাতৃঘাতী লড়াই করতে থাকে। বাকি পৃথিবীতে দীন প্রতিষ্ঠার কথা জাতির কর্ণধারদের আকিদা থেকেই হারিয়ে যায়। উদ্দেশ্য হারিয়ে গেলে কোনো কিছুরই আর কোনো অর্থ থাকে না। একটি কলম দিয়ে যদি লেখা না হয় তবে সে কলম যত দামিই হোক তা কলম হিসাবে মৃত ও মূল্যহীন। ঠিক একইভাবে উদ্দেশ্য ভুলে যাওয়ার দরুন রসুলাল্লাহর ওফাতের ৬০/৭০ বছর পরই তাঁর উম্মাহর মৃত্যু ঘটে। আজ থেকে ১৩ শ বছর আগে যদি জাতির আকিদার এই অবস্থা হয়ে থাকে তাহলে বর্তমানে তা কোথায় এসে ঠেকেছে সেটা চিন্তাশীল পাঠকমাত্রই উপলব্ধি করতে পারছেন। 
এখানে আশার বাণী হচ্ছে, আল্লাহর রসুল এটাও আভাস দিয়ে গেছেন যে জাতির ভাগ্যাকাশ থেকে এই অমানিশার অন্ধকার কেটে যাবে। তিনি বলে গেছেন, “তোমাদের মধ্যে নবুয়ত থাকবে যতক্ষণ আল্লাহ ইচ্ছা করেন, তারপর আল্লাহ তার সমাপ্তি ঘটাবেন। তারপর প্রতিষ্ঠিত হবে নবুয়তের আদলে খিলাফত তা তোমাদের মধ্যে থাকবে যতক্ষণ আল্লাহ ইচ্ছা করেন, অতঃপর তিনি তারও সমাপ্তি ঘটাবেন। তারপর আসবে যন্ত্রণদায়ক বংশের শাসন, তা থাকবে যতক্ষণ আল্লাহ ইচ্ছা করবেন। এক সময় আল্লাহর ইচ্ছায় এরও অবসান ঘটবে। তারপর প্রতষ্ঠিত হবে জুলুমের শাসন এবং তা তোমাদের উপর থাকবে যতক্ষণ আল্লাহ ইচ্ছা করবেন। তারপর তিনি তা অপসারণ করবেন তারপর আবার ফিরে আসবে নবুয়তের আদলে খিলাফত (আহমদ)।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে কায়মনোবাক্যে একটিই প্রার্থনা, তিনি যেন চলমান জবরদস্তিমূলক শাসনের অন্ধকার রজনীর অবসান ঘটিয়ে অতি শীঘ্র মানবজাতির ভাগ্যাকাশে নবুয়তের আদলে খেলাফতের সূর্যকে উদ্ভাসিত করুন।