অর্থনীতি ও বাণিজ্য ডেস্ক:
চলতি সপ্তাহে ভারত ও ভিয়েতনামে চালের রফতানি মূল্য বেড়েছে। তুলনামূলক সস্তা ভারতীয় চালের বাজারদর উঠেছে দুই বছরের সর্বোচ্চে। বিশ্বজুড়ে চাল সরবরাহ নিয়ে ঝুঁকি ও উদ্বেগ বৃদ্ধি সত্ত্বেও ভারতীয় চালের চাহিদা বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। খবর বিজনেস রেকর্ডার।
একটি গ্লোবাল ট্রেডিং হাউজের মুম্বাইভিত্তিক এক ডিলার বলেন, ‘কয়েক সপ্তাহে ধরেই ভারতীয় চাল রফতানি চাহিদা ঊর্ধ্বমুখী। কারণ প্রতিদ্বন্দ্বী রফতানিকারক দেশগুলোর তুলনায় ভারতীয় চালের দাম কম।’ ভারতের সরকার ও শিল্পসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভারতীয় ৫ শতাংশ ভাঙা সেদ্ধ চাল চলতি সপ্তাহে টনপ্রতি ৩৯৭-৪০৪ ডলারে রফতানি হচ্ছে। এর আগের সপ্তাহে প্রতি টনের দাম ছিল ৩৯৫-৪০২ ডলার।
ভারত স্থানীয় সরবরাহ নিশ্চিতের লক্ষ্যে গত বছর ভাঙা চাল রফতানি বন্ধ ঘোষণা করে। সাদা চাল রফতানিতে আরোপ করা হয় ২০ শতাংশ শুল্ক। এর পরও তুলনামূলক কম দামের কারণে দেশটির চালের চাহিদা ছিল ঊর্ধ্বমুখী। ফলে ২০২২ সালে দেশটির চাল রফতানি রেকর্ড স্পর্শ করে।
ভাঙা চালের ওপর থেকে রফতানি নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়া কিংবা সাদা চাল রফতানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহারের কথা ভাবছে না ভারত। বরং এসব বিধিনিষেধের সময়সীমা আরো বাড়ানো হতে পারে। স্থানীয় বাজারে সরবরাহ ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যেই রফতানি সীমিত রাখার সিদ্ধান্তে অটল দেশটি।
ভারতের এমন সিদ্ধান্তে বিশ্ববাজারে চালের দাম আরো বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। পাশাপাশি সরবরাহ নিয়েও সংকটে পড়তে পারে আমদানিকারক দেশগুলো। এতে নিম্ন আয়ের দেশগুলোয় খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকি আরো প্রকট হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ভারতের সরকারি এক কর্মকর্তা বলেন, ‘২০ শতাংশ শুল্কারোপের পরও চাল রফতানি গতি হারায়নি। তাই আমরা মনে করেছি, শুল্ক কমানোর বা প্রত্যাহারের কোনো প্রয়োজন নেই। আমরা এখনই ভাঙা চাল রফতানি চালুর কথা ভাবছি না। চীনের অনেক প্রতিষ্ঠান এটি আমদানির মাধ্যমে ইথানল কিংবা পশুখাদ্য উৎপাদনের কথা ভাবছে। আমরা এর পরিবর্তে স্থানীয় বাজারে শস্যটির সরবরাহ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা কোনো প্রকার ঝুঁকি নিতে চাই না। গমের মজুদ সীমিত করলেও চালের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। আবহাওয়া পরিস্থিতিতে বড় পরিবর্তন দেখা দিলে এ মজুদ থেকেই স্থানীয় চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হব।’
গত বছর ভারতের চাল রফতানি এক বছরের ব্যবধানে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়ে। রফতানির পরিমাণ দাঁড়ায় ২ কোটি ২২ লাখ ৬০ হাজার টনে। শীর্ষ রফতানিকারক থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বিত রফতানির চেয়ে বেশি রফতানি করেছে ভারত।
ভালো উৎপাদন ও মজুদ সত্ত্বেও বাংলাদেশে চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী। সম্প্রতি দেশের বেসরকারি ব্যবসায়ীদের চাল আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। উদ্দেশ্য বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা।
এদিকে ভিয়েতনামে ৫ শতাংশ ভাঙা চালের রফতানি মূল্য দাঁড়িয়েছে টনপ্রতি ৪৫৫-৪৬০ ডলারে। দেশটির ব্যবসায়ীরা জানান, বৈশ্বিক সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও চালের চাহিদা এখনো ঊর্ধ্বমুখী। চলতি মাসের প্রথমার্ধে আফ্রিকা ও মালয়েশিয়ায় রফতানি কমেছে। তবে চীন ও ফিলিপাইনে লক্ষণীয় মাত্রায় বেড়েছে।
থাইল্যান্ডের ৫ শতাংশ ভাঙা চালের রফতানি মূল্যে কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে। প্রতি টন বিক্রি হচ্ছে ৪৬০ ডলারে। দেশটির চালের চাহিদা ক্ষীণ হয়ে এসেছে। মার্চ ও এপ্রিলে বাজারে নতুন চাল উঠতে পারে। তখন দাম আরো কমে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।