ডেস্ক রিপোর্ট:
মাঘ মাসের শুরু হতে আরও বাকি দুই দিন। বরাবরই মাঘের শীতে কাঁপুনি বাড়ে। কিন্তু এবার পৌষের ক্রান্তিলগ্নেই হাড়কাঁপানো শীত অনুভূত হচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরে উত্তরের জেলা নীলফামারীতে হিমেল হাওয়ার সঙ্গে জেঁকে বসা শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। কনকনে শীত আর হিমেল হাওয়ায় চরম বিপাকে এ অঞ্চলের মানুষ। বেশি বিপাকে শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা। কমে গেছে আয় রোজগারও। তবুও শীতকে উপেক্ষা করে শীতের কাপড় জড়িয়ে তারা ছুটছেন কাজের সন্ধানে।
শনিবার (১৩ জানয়ারি) ভোর ৬টায় নীলফামারীর সৈয়দপুরে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সৈয়দপুরের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। এছাড়াও সৈয়দপুরে এই মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আজকে। সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লোকমান হোসেন ঢাকা পোস্টকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, উত্তরের হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশার কারণে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। বর্তমানে সৈয়দপুরের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে। শনিবার ভোর ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ রকম তাপমাত্রা আরও কয়েকদিন থাকবে।
এদিকে রাত ও দিনে তাপমাত্রা প্রায় কাছাকাছি হওয়ায় দিনের চেয়ে রাতে অনেক বেশি ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। মানুষ আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। প্রচণ্ড শীতে কাজে বের হতে গিয়ে বেকায়দায় পড়ছেন শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা। ঠান্ডা বাতাসে ঘরে থাকা দায় হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের মানুষদের। ঘন কুয়াশা আর ঠান্ডায় নষ্ট হচ্ছে ধানের বীজতলা ও আলুখেত। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। ঠান্ডায় কষ্ট পাচ্ছে গরু-ছাগল। প্রাণীকূলের শীতজনিত রোগের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নীলফামারী পৌর শহরের চৌরঙ্গী মোড় এলাকায় কথা হয় ইজিবাইক চালক মিজানুর রহমানের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, যে ঠান্ডা সকালবেলা গাড়ি নিয়ে বের হইছি। আমাদের অভাবের সংসার, কর্ম করে খেতে হয়। গাড়ি চালানোর সময় হাত পা অবশ হয়ে যায়। অন্য জায়গায় তো কম্বল দেয়, আমরা তো কিছুই পাই না।জেনারেল হাসপাতাল চত্বরে জহিরুল ইসলাম নামে এক রিকশাচালক ঢাকা পোস্টকে বলেন, কয়েকদিন ধরে শীতের প্রকোপ খুব বেশি। যতই ঠান্ডা পড়ুক রিকশা নিয়ে বের না হলে পেটে ভাত জুটবে না। তাই এই শীতের মধ্যেও রিকশা নিয়ে বের হয়েছি। পেট তো আর শীত মানে না।
জেলা সদরের রামনগর এলাকার কৃষক রশিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত বছরের চেয়ে এবার ঠান্ডাটা বেশি মনে হচ্ছে। ঠান্ডায় ঘর থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না আর কাজও করা যাচ্ছে না। জমিতে ফসলও নষ্ট হচ্ছে, দিন যত যাচ্ছে ঠান্ডাও বাড়ছে। কাজের জন্য লোকও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা কী করবো দিশা পাচ্ছি না।
নীলফামারীর জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ ঢাকা পোস্টকে বলেন, শীত মোকাবিলায় পর্যাপ্ত সরকারি সহায়তা প্রস্তুত রয়েছে। শীতবস্ত্র হিসেবে জেলার ৬ উপজেলা ও চার পৌরসভায় ৪০ হাজার পিস কম্বল পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখনো প্রায় ১০ হাজার কম্বল মজুত আছে। প্রয়োজনে আরও দেওয়া হবে।