পীরগঞ্জ (ঠাকুরগাঁও) সংবাদদাতা:
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার সিনুয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে চলছে দুর্নীতির মহোৎসব। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদা বেগমের বিরুদ্ধে অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, নিয়োগ বাণিজ্য, পারিবারিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং সহকারী এক শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীরা এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আরিফুল্লাহ সরেজমিনে তদন্ত করেন। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রমিজ আলম বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গর্ভনিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটির প্রবিধানমালা ২০২৪-এর (৫৩)১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক ফরিদা বেগমকে বরখাস্ত করেন।
অভিযোগপত্র ও প্রাথমিক তদন্ত বিবরণী অনুযায়ী জানা যায়, বিদ্যালয়ে বৈষম্য ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলন এবং অভিযোগের পর এবার প্রধান শিক্ষকের সরাসরি দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। প্রধান শিক্ষক ফরিদা বেগম তার স্বামী রশিদুল হককে অফিস সহকারী, দেবর মাসুদ রানাকে সহকারী শিক্ষক, নাতি তাজেল রানাকে অফিস সহায়ক এবং আরেক নাতি রবিউল ইসলামকে নিরাপত্তাকর্মী পদে নিয়োগ দিয়েছেন। এছাড়া, তিনি বেশ কয়েকটি গাছ বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যালয় চলাকালীন মাঠে ধান শুকানো, খড়কুটো ফেলা এবং ছাগল চরানোর মতো দৃশ্য দেখা যায়। বিদ্যালয়ের মাঠের পাশের এলাকায় বন-জঙ্গল একাকার হয়ে আছে। বিদ্যালয়ের মূল গেটের সামনে দিয়ে পথচারীদের যাতায়াতের রাস্তা তৈরি হয়েছে। বিদ্যালয়ের ভবন জরাজীর্ণ, বারান্দার খুঁটি ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত কাগজে-কলমে শিক্ষার্থীর সংখ্যা শতাধিক হলেও ক্লাসে হাতে গোনা কয়েকজন শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকে। দেখে মনে হয় না এটি একটি এমপিওভুক্ত বিদ্যালয়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক ফরিদা বেগমকে বিদ্যালয়ে পাওয়া যায়নি। তার স্বামী ও বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী রশিদুল হক জানান, “অনিয়ম হবেই। বিদ্যালয়টি আমরা গড়ে তুলেছি, তাই নিজের মতো করে চালাচ্ছি।” তিনি আরও বলেন, উপর মহলের শক্তিশালী সহায়তায় সব ম্যানেজ করা হয়।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শিবেন চন্দ্র রায় জানান, “প্রধান শিক্ষক ফরিদা বেগম বিদ্যালয়ে পারিবারিক স্বার্থে কাজ করেন এবং তার অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বললে হুমকি দেন।”
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আরিফুল্লাহ তদন্তে অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেন। স্থানীয় গুণীজনরা বলেছেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ও মান ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।