Date: May 04, 2024

দৈনিক বজ্রশক্তি

Header
collapse
...
Home / বিশেষ নিবন্ধ / সালাহ (নামাজ) আমাদের কী শিক্ষা দেয়?

সালাহ (নামাজ) আমাদের কী শিক্ষা দেয়?

November 23, 2022 04:31:41 PM   বিশেষ নিবন্ধ

আইনুল হক:
সালাহ বা নামাজ হলো ইসলামের পাঁচটি বুনিয়াদী বিধানের দ্বিতীয়টি। ঠিক ঈমানের পরেই সালাহর স্থান। কেউ কলেমায় ঐক্যবদ্ধ হবার সঙ্গে সঙ্গে তার জন্য অন্যান্য ফরদের মত সালাহও ফরদ হয়ে যায়। সালাহ এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে কোর’আনে আল্লাহ বিরাশি বারেরও বেশি সালাহর কথা বলেছেন। সালাহ কায়েম করার জন্য পাড়ায়-মহল্লায় হাজার হাজার আলীশান মসজিদ তৈরি হচ্ছে। টাইলসের মসজিদ, এসি মসজিদ তো হচ্ছেই, হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে অনেক সোনার গম্বুজওয়ালা মসজিদও তৈরি হচ্ছে। ক্ষেত্রবিশেষে মসজিদ স্থাপনও আজকাল প্রতিযোগিতার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
এদিকে সালাহ যাতে সহিহ-শুদ্ধ হয়, আল্লাহর কাছে কবুল হয়, এ উদ্দেশ্যে নিখুঁতভাবে ওজু-দোয়া-দরুদ ইত্যাদি করার জন্য বাজার সয়লাব হয়ে আছে বিভিন্ন ধরনের নামাজ শিক্ষার বই দিয়ে। এমনকি শুধু নিয়মিত নামাজ পড়ার উপদেশ দেওয়ার জন্যই গড়ে উঠেছে বহু সংস্থা, সংগঠন, দল-উপদল। কিন্তু এত কিছুর পরও দুর্ভাগ্যজনক বিষয় এই যে, আল্লাহ কাকে ও কেন নামাজের বিধান দিয়েছেন, নামাজের উদ্দেশ্য কী, নামাজ আমাদেরকে কী শিক্ষা দেয় সেই আকীদাটাই আমাদের মধ্য থেকে হারিয়ে গেছে।
প্রথম কথা হচ্ছে, সালাহর নির্দেশ কার জন্য। সালাহ কেবল মো’মেনের জন্য, যে মো’মেন না সালাহ তার জন্য নয়। তাই আগে মো’মেন হতে হবে। তারপর প্রশ্ন আসে সালাহ কেন? যে কোনো কিছুরই সৃষ্টির উদ্দেশ্য আছে। আসমান-জমিনসহ কোনো বস্তুই আল্লাহ উদ্দেশ্যহীনভাবে সৃষ্টি করেন নি। তেমনি ইসলামেরও একটি উদ্দেশ্য আছে। সংক্ষেপে বলতে গেলে- মানবজাতির জীবনের যাবতীয় অন্যায়, অবিচার, অশান্তি দূর করে ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই ইসলামের উদ্দেশ্য। একইভাবে দীনের যেসব আমলের নির্দেশ আল্লাহ দিয়েছেন, সেগুলোরও উদ্দেশ্য আছে। তাহলে সালাহ’র মত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান, যাকে আল্লাহ কোর’আনে বিরাশি বারেরও বেশি উল্লেখ করলেন তা কি বিনা উদ্দেশ্যে হতে পারে? অবশ্যই তার একটি উদ্দেশ্য আছে। সেটা কী?
সেটা হচ্ছে সালাহ’র মাধ্যমে মুমিনদেরকে মানসিক, আধ্যাত্মিক ও শারীরিকভাবে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তোলা। যেন সে মানবতার কল্যাণে আত্মনিয়োগ করার চারিত্রিক গুণ (ধঃঃৎরনঁঃব) ও আত্মিক শক্তি লাভ করে যাবতীয় লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে উঠে সুশৃঙ্খল জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ হয়। যেমন-
ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টি: 
সালাহ জাতিকে ‘ঐক্য’ শিক্ষা দেয়। লক্ষ্যের ঐক্য, উদ্দেশ্যের ঐক্য। একেকজন একেক স্থান থেকে এসে একটি নির্দিষ্ট সময়ে একটি নির্দিষ্ট স্থানে কাতারবদ্ধ হয়ে একটি নির্দিষ্ট দিকে অর্থাৎ ক্বাবার দিকে মুখ ফিরিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়ানোর মাধ্যমে মু’মিনদের মধ্যে একদিকে লক্ষ্যের ঐক্য তৈরি হয়, অন্যদিকে পার¯পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত হয়। তারা মনে করে- আমার পাশে দাঁড়ানো ব্যক্তিটি আমারই ভাই। আমরা একই প্রভুর সৃষ্টি। নিজেদের মধ্যে যতই বিভেদের কৃত্রিম আবহ তৈরি করে রাখি না কেন, আল্লাহর সামনে আমাদের অবস্থান একই সারিতে। আমাদের যাত্রাও একই অভিমুখে, সত্য ও ন্যায় তথা আল্লাহর অভিমুখে। আমার পাশে দাঁড়ানো ব্যক্তিটি শিক্ষিত নাকি নিরক্ষর, দরিদ্র নাকি ধনী, সাদা নাকি কালো তা আমি দেখব না।
নামাজের কাতারকে বলা হয় ‘সফ’। কেন সফ বলা হয় তার উত্তর আল্লাহ সুরা সফেই দিয়েছেন। আল্লাহ বলেছেন- আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন যারা সীসাগলানো প্রাচীরের মত ‘সারিবদ্ধভাবে’ তাঁর পথে সংগ্রাম করে (সফ: ০৪)। অর্থাৎ সালাহ’র এই সফ কেবল সালাহ’র মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এই সফ আসলে মু’মিনদের বাস্তব জীবনের ঐক্যের প্রতীক। সুতরাং যারা সালাহ কায়েম করবে তারা সর্বদা মনে রাখবে আমরা সজাগ-সচেতন থাকব যাতে আমাদের জাতির মধ্যে কেউ ঐক্য নষ্ট করতে না পারে, ভ্রাতৃত্বে ফাটল ধরাতে না পারে। ঐক্য নষ্ট হয় এমন কথা বলব না, এমন কাজ করব না। শিরক, কুফর, অন্যায়, অবিচারের বিরুদ্ধে সমস্ত জাতি ঐক্যবদ্ধ থাকব। দৈনিক পাঁচবার ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের এই অনুপম শিক্ষা দেয় সালাহ। এ কারণে সালাহ এত গুরুত্বপূর্ণ।
শৃঙ্খলাবোধ সৃষ্টি: 
কীভাবে ওজু করব, কীভাবে দাঁড়াবো, কীভাবে পোশাক-পরিচ্ছেদ পরব, কীভাবে ওঠা-বসা করব, কীভাবে রুকু করব, কীভাবে সেজদা করব ইত্যাদি প্রায় শতাধিক নিয়ম-শৃঙ্খলা মাথায় রেখে সালাহ কায়েম করতে হয়। নির্দিষ্ট সময়ে সালাতে সামিল হতে হয়, কাতার ধনুকের ছিলার মত সোজা করতে হয়, এক পায়ে দাঁড়ানো যাবে না, এদিক ওদিক তাকানো যাবে না, চোখ বন্ধ রাখা যাবে না, রুকুতে পিঠ কুঁজো হওয়া যাবে না, ঢিলেঢালাভাবে সালাহ করা যাবে না, মেরুদণ্ড সোজা রাখতে হবে, ইমামের তকবিরের আগে বা পরে রুকু-সেজদা-উঠা-বসা করা যাবে না, হুকুমের সঙ্গে সঙ্গে আনুগত্য করতে হবে, নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট সুরা-কেরাত-তাসবিহ পাঠ করতে হবে- এভাবে বলতে গেলে সালাহ’তে নিয়ম শৃঙ্খলা অসংখ্য। এই সবগুলো নিয়ম-শৃঙ্খলা মাথায় রেখে সালাহ কায়েম করার ফলে মু’মিনদের চরিত্রে অসাধারণ শৃঙ্খলাবোধ তৈরি হয়। তাদের প্রত্যেকটি কাজ হয় শৃঙ্খলামাফিক। যার যেমন খুশি তেমন না করে তারা জাতিগতভাবে সুশৃঙ্খলিত হয়ে জাতীয় যে কোনো সমস্যার মোকাবেলা করে। শুধু সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের মত সমস্যাগুলোই নয়, যে কোনো অন্যায়, অবিচার দূর করার জন্য এমন শৃঙ্খলাবদ্ধ জাতির কোনো বিকল্প নেই।
আনুগত্যবোধ সৃষ্টি: 
জামাতে ফরদ সালাতে ইমামের কোনো বিকল্প নেই। ইমামের তকবিরের সাথে সাথে মুসল্লিরা রুকু করবে, সেজদা করবে, সালাম ফেরাবে ইত্যাদি। অর্থাৎ ইমামের হুকুম পালন করতে হবে। কেউ ইমামের আনুগত্যের বাইরে গেলে সালাহ হয় না। প্রতিদিন একজন লোক ১৭ রাকাত ফরদ সালাহতে ইমামের আনুগত্য করে। ইমাম রুকুতে গেলে সে রুকুতে যায়, ইমাম সেজদায় গেলে সে সেজদায় যায়। এক মুহূর্তের জন্যও সে ইমাম এর কমান্ডের বাইরে যেতে পারে না। এভাবে তার চরিত্রে আনুগত্যবোধ তৈরি হয়।
এটা প্রাকৃতিক নিয়ম যে, কোনো জাতি ততক্ষণ পর্যন্ত শক্তিশালী হতে পারবে না যতক্ষণ তাদের মধ্যে একজন আদেশদাতা না থাকে এবং সেই আদেশদাতার আদেশ শর্তহীন, প্রশ্নহীন, দ্বিধাহীনভাবে পালন করা না হয়। এ কারণেই আল্লাহর রসুল বলেছেন- আমীর (আদেশ দানকারী) নাক কানকাটা, ক্ষুদ্র মস্তিষ্কের নিগ্রো ক্রীতদাস হলেও তার আনুগত্য করবে (হাদীস)। কারণ একজন নেতার কথাকে যদি জাতির সকলে শর্তহীনভাবে আনুগত্য না করে তবে জাতি বড় কোনো সঙ্কট মোকাবেলা করা তো দূরের কথা, নিজেরাই নিজেদের সঙ্কট হয়ে দাঁড়াবে। সালাহ থেকে নির্দ্বিধায় আদেশ পালনের শিক্ষা নিয়ে যখন একটি জাতি তাদের আদেশদাতার প্রতিটি আদেশ পালন করাকে নিজেদের ঈমানী দায়িত্ব মনে করবে তখন সেই জাতি পৃথিবীর যে কোনো সঙ্কটকে অবলীলায় মোকাবেলা করতে পারবে সন্দেহ নেই।
আজকে মুসলিম বিশ্বের একক কোনো জাগতিক এবং আধ্যাত্মিক আদেশদাতা নাই। সরকারগুলো জাগতিক যত ভালো নির্দেশই দিক দেখা যায় সে নির্দেশ মানার চেয়ে না মানার দিকেই জনসাধারণের ঝোঁক থাকে বেশি। জাতির মধ্যে কোনো আনুগত্যবোধ নেই। কারণ নামাজের যে প্রকৃত শিক্ষা তা তারা জানেও না, বোঝেও না, তাই চরিত্রে ধারণ করতেও পারে না। নামাজের কয়েক মিনিট ছাড়া মসজিদের বাইরে ইমাম সাহেবের মতামতেরও কোনো মূল্য দেওয়া হয় না। ইমাম সাহেব যতই সুদ, ঘুষ, অন্যায়, অবিচার, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলুক, মানুষ শোনে না। তাকে ভাবা হয় নামাজের ইমাম, বেতন দেয়া হচ্ছে তিনি নামাজ পড়াচ্ছেন, ব্যস, কেবল নামাজের সময়েই যার পেছনে উঠবস করার যোগ্য; সমাজ নিয়ে, বাস্তব দুনিয়া নিয়ে তার কথা বলার অধিকারই নেই। একই ধারণা পোষণ করেন ইমামরাও। অথচ নামাজের প্রকৃত আকীদা জানা থাকলে এমনটা হবার কথা ছিল না। নামাজ মু’মিনদের মধ্যে আনুগত্যবোধ তৈরি করত। যে কোনো ন্যায়সঙ্গত নির্দেশ-উপদেশ শর্তহীন-প্রশ্নহীনভাবে মান্য করার দায়বদ্ধতা তৈরি হত।
শারীরিক প্রশিক্ষণ: 
মানসিক প্রশিক্ষণের সাথে সাথে নামাজ মুসল্লিদের শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সালাহ’র যে উঠা-বসা, রুকু, সেজদা ইত্যাদির নিয়ম-কানুন, এসব যদি ঢিলেঢালা বা দায়সারাভাবে না করে রসুলের হাদীস মোতাবেক সঠিকভাবে করা হয়, অর্থাৎ পিঠ, ঘাড়, কোমর, পায়ের পাতা, আঙ্গুল, হাতের তালু, হাঁটু, নাক, কপাল ইত্যাদি অঙ্গসমূহ হাদীসে যেভাবে সঞ্চালন করতে বলা হয়েছে সেভাবে যদি করা হয় এবং এভাবে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত ফরদ সালাহসহ নফল, সুন্নত কায়েম করা হয় তাহলে তা ব্যায়ামের মতই কার্যকরী হবে। শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিতে সালাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। কিন্তু বর্তমানে যেভাবে যুবুথুবু হয়ে নামাজ পড়া হয় তা মুসল্লিদের শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিতে কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না।
সালাহ’র আত্মিক ভাগ:
এতক্ষণ আলোচনা করেছি সালাহ’র মানসিক ও শারীরিক প্রশিক্ষণ নিয়ে। কিন্তু একটি কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, মানুষ যেমন দেহ-আত্মার সমন্বয়ে সৃষ্ট জীব, তেমন দ্বীনুল হক্বকেও আল্লাহ দেহ ও আত্মা উভয়ের জন্যই উপযোগী ও ভারসাম্যপূর্ণ করে তৈরি করেছেন। ইসলামের অন্যান্য বিধানের মতই সালাহও তাই কেবল জাতির বাহ্যিক, মানসিক বা শারীরিক প্রশিক্ষণেই সীমাবদ্ধ নয়, এর আত্মিক ভাগও যথেষ্ট প্রবল।
মু’মিন যখন সালাতে দাঁড়ায় তখন সে মনে মনে ভাববে- হে আল্লাহ, তুমি তোমার নবীর মাধ্যমে আমাদের প্রতি যে মহাদায়িত্ব অর্পণ করেছো (পৃথিবীতে ন্যায় ও শান্তি স্থাপন করা), সেই দায়িত্ব পালন করার জন্য যে চরিত্র দরকার, সেই চরিত্র সৃষ্টির প্রশিক্ষণ নিতে তোমার সামনে দাঁড়িয়েছি। তুমি দয়া করে আমাদেরকে সেই চরিত্র, আত্মিক শক্তি দান কর যাতে আমরা মানবজীবনে ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অটল থাকতে পারি, আমাদের জীবন-স¤পদ, পুত্র-পরিজন মানবতার কল্যাণে উৎসর্গ করতে পারি।
সালাতে দাঁড়িয়ে মু’মিনরা সর্বদা মনে রাখবে- আল্লাহ সুক্ষ্মদর্শী, তিনি সবার মনের খবর জানেন। যখন একজন মু’মিন রুকুতে যায় তখন সে কার্যত আল্লাহর বিশালত্বের সামনে বিনীত ও বিনয়নম্র হয়, আত্মসমর্পিত ভঙ্গিতে আল্লাহর মহীমা ঘোষণা করে। তারপর যখন সেজদায় যায় তখন সে কার্যত ত্রুটিহীন (সোবহান) প্রভুর সামনে তার দেহ-মনসহ সমস্ত সত্ত্বাকে সমর্পণ করে। সে মুখে আল্লাহর বিশালত্ব ও অসীম উচ্চতার ঘোষণা দেয় এবং মাথা মাটিতে ঠেকানোর মাধ্যমে নিজের সীমাবদ্ধতা ও ক্ষুদ্রতা স্বীকার করে নেয়।
একজন মু’মিন যখন সর্বাবস্থায় স্রষ্টার অসীম উচ্চতার সাপেক্ষে নিজের ক্ষুদ্রতার কথা স্মরণ রাখে, তখন সে আর উদ্ধত, অহংকারী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে পারে না। বাস্তব জীবনে সে আল্লাহর প্রতিটি হুকুম মেনে চলে। মানুষের সাথে বিনীত ও মার্জিত আচরণ করে। শয়তানের প্ররোচনায় কখনও গাফেল হয়ে গেলে, লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে গেলে, ঐক্য নষ্ট করলে, অপর কোনো মু’মিন ভাইয়ের সাথে খারাপ আচরণ করলে, পরবর্তী ওয়াক্তে সালাতে দাঁড়িয়েই সে লজ্জিত হবে, অনুতপ্ত হবে এবং নিজেকে সংশোধন করবে। এজন্যই সালাহর আরেক নাম হলো সংস্কার। সালাহ শব্দটি এসেছে আসলাহা থেকে। পবিত্র কোর’আনে আল্লাহ এ শব্দটি ব্যবহার করেছেন ‘সংশোধন’ বোঝাতে (সুরা আন’আম ৪৮)।
যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রেরণা (জেহাদ): 
অর্থাৎ বোঝা গেল- সালাহ বা নামাজের সামগ্রিক উদ্দেশ্য হচ্ছে জাতিকে ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব, শৃঙ্খলা, আনুগত্য, সময়ানুবর্তিতা, পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি শিক্ষা দেওয়া এবং মানবতার কল্যাণে জীবন-স¤পদকে উৎসর্গ করার আত্মিক দৃঢ়তা দান করা। কেন এসব শিক্ষা/প্রশিক্ষণ দিতে হবে তার উদ্দেশ্য যদিও প্রথমে বলে এসেছি এখানে আবারও বলছি। সেটা হচ্ছে- যাবতীয় অন্যায়, অবিচার, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সংগ্রামে বিজয়ী হবার উপযোগী চরিত্র তৈরি করা। অন্যায়ের বিরুদ্ধে এই সংগ্রামই জিহাদ অর্থাৎ সর্বাত্মক প্রচেষ্টা। নামাজ অন্যায়-অসত্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামী চরিত্র তৈরি করে বলেই আল্লাহ বলেছেন- নিশ্চয়ই নামাজ মানুষকে অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে। (সুরা আনকাবুত ৪৫)
বস্তুত অন্যায়-অসত্যের বিরুদ্ধে ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করা প্রত্যেক মু’মিনের দায়িত্ব। এ কাজ না করে কেউ মু’মিন থাকতে পারে না। মু’মিন হওয়ার অর্থই তাকে যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে হবে। কিন্তু কেবল প্রতিবাদী হলেই তো হবে না, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামে সফলও হতে হবে, সেই সফলতার জন্য জাতির মধ্যে ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব, শৃঙ্খলা, আনুগত্য ও আত্মিক প্রেরণার বিকল্প নেই। সেটা সৃষ্টি করে সালাহ। আল্লাহর দেওয়া রসুলের শেখানো সেই প্রকৃত সালাহ কায়েম করাই এখন সময়ের দাবি।