স্টাফ রিপোর্টার:
পূর্ব বিরোধ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নাটোরের সিংড়ায় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, গোলাগুলি ও সংঘর্ষ হয়েছে। এতে ১৫ জন গুলিবিদ্ধসহ উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
আহতদের সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। গুলিবিদ্ধদের উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
আহতরা হলেন- ওই গ্রামের মৃত ওসমান আলীর ছেলে আ. মান্নান হাজী (৫৫), সেহাব উদ্দিনের ছেলে আমিনুল ইসলাম তালুকদার (৭০),
আক্কাস আলীর ছেলে শামীম হোসেন (৩০) ও সবুজ হোসেন (৩৫), রফিকুল ইসলাম খন্দকারের ছেলে মো. নয়ন হোসেন (২৫),
রহিদুল ইসলামের ছেলে আ. রউফ (৩০), বিপ্লবের ছেলে দিপন (৩২), অফিজ উদ্দিনের ছেলে মো. শুভ (২৪), মো. আমানত হোসেমের ছেলে মো. সাইদুল ইসলাম (৩০), আ. জলিলের ছেলে মো. মুনসুর (৪৫), মো. সাগের উদ্দিনের ছেলে মো. বাবু (৪৫), বাপ্পি তালুকদারের স্ত্রী শিরিনা বেগম (৩৫), মো. সোহাগের স্ত্রী লাকি বেগম (৩০), মেছের আলী তালুকদারের ছেলে মোজাম্মেল হক (৫০) এবং অপর পক্ষের মো. জয়নাল (৫০), সেন্টু মোল্লা (২৮), শুভ মোল্লা (২৭) ও হেলাল (২৮)।
শনিবার (০৩ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টায় উপজেলার বেড়াবাড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ৯ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান জানান, আধিপত্য বিস্তার ও ২০১৬ সালের একটি হত্যাকাণ্ড নিয়ে বেড়াবাড়ি গ্রামের রেজা-সাইফুল-মানিক মেম্বার ও আনোয়ার হোসেন-দিপক-বাবু গ্রুপের মধ্যে পূর্ববিরোধ চলে আসছিল। আজ সকালে পূর্ব বিরোধসহ ওই গ্রামের একটি পুকুরের ডহর ব্যবহারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এক পর্যায়ে হাতাহাতি ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে উভয়পক্ষের মধ্যে লাঠিসোঁটা নিয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয় এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। একই সঙ্গে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। তাদের সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তবে গুরুতর অবস্থায় ১৫ জনকে বগুড়া ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
ওসি বলেন, লোকমুখে গোলাগুলির খবর শুনেছি। ঘটনাস্থলে গিয়ে গুলির আলামতও পাওয়া গেছে। তবে সেটি ছিল লাইসেন্সধারী বন্দুকের। ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে এখনো কেউ থানায় কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এছাড়া এ ঘটনায় ৯জনকে আটক করা হয়েছে জানিয়ে ওসি বলেন, মামলার প্রস্তুতি চলছে।
সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক মইনুল হক রিকো জানান, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া আহতদের অধিকাংশই গুলিবিদ্ধ। তাই তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়া ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। অন্যদের সিংড়া হাসপাতালেই চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।
ডাহিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মামুন সিরাজুল মজিদ গোলাগুলির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ২০১৬ সালে রেজাউল নামে এক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়। ওই হত্যা মামলার আসামি হলেন রেজা-সাইফুল-মানিক মেম্বার সহ আরও অনেকে। আর প্রতিপক্ষরা হলেন ওই মামলার সাক্ষী। শিগগিরই ওই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে আদালতে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ক্রোধ বাড়তে থাকে। আর ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজ সকালে আনোয়ার পক্ষের লোকজন মাঠে কাজ করতে যাওয়ার সময় তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটলেও রেজা-সাইফুল-মানিক মেম্বার পক্ষের লোকজন আনোয়ার হোসেন-দিপক-বাবু পক্ষের লোকজনের উপর বন্দুক দিয়ে গুলি চালায়। এতে ১৫ জন গুলিবিদ্ধসহ ২০ জন আহত হয়েছেন। তিনি এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও সঠিক বিচার দাবি করেন।