Date: November 21, 2024

দৈনিক বজ্রশক্তি

Header
collapse
...
Home / অর্থনীতি / সিন্ডিকেটের কারসাজিতে লাগামহীন চালের বাজার

সিন্ডিকেটের কারসাজিতে লাগামহীন চালের বাজার

November 07, 2022 03:26:26 AM  
সিন্ডিকেটের কারসাজিতে লাগামহীন চালের বাজার

সাঈদ বিন তারিক:
সংকটের গুজব আর সিন্ডিকেটের কারসাজিতে লাগামহীন চালের বাজার। এক সপ্তাহে কেজিতে বেড়েছে আট টাকা। সরকার বাড়তি দামে আমন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করায় মোকাম মালিক ও শিল্প গ্রুপগুলো চালের মজুত করছে। সংকটের গুজবে সাধারণ মানুষও বাড়তি চাল কিনে রাখছে বলে অভিযোগ উঠেছে। 
দাম বাড়লেও মানুষ ভাত খাওয়া কমাবে না আবার চালের দাম কমলে মানুষ বেশি বেশি ভাত খাবে না। মানে চালের চাহিদার একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ আছে যার খুব একটা হেরফের হয় না। এর সুযোগ নিয়ে থাকে ব্যবসায়ীরা। তাদের মধ্যে একটা বোঝাপড়া করে দাম কতটা বাড়াবে, কখন বাজারে চাল ছাড়বে, কখন উধাও করে দেবে তা তারা নিজেরা ঠিক করে নেয়। আর ক্রেতারা অসহায় হয়ে পড়ে।
চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় দুটি পাইকারি চালের বাজার পাহাড়তলী ও চাক্তাইয়ে চালের কোনো সংকট নেই এবং সরবরাহও স্বাভাবিক রযেছে। গুদামগুলোতেও পর্যাপ্ত চাল মজুত রয়েছে। আবার প্রতিদিনই ট্রাক এবং কাভার্ড ভ্যানে করে দেশের বিভিন্ন মোকাম থেকে চাল আসছে এখানে। কিন্তু তারপরও ১৯০০ টাকার ৫০ কেজির প্রতি বস্তা মোটা সিদ্ধ চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ২৩০০ টাকা দরে। একইভাবে ২১০০ টাকার গুটিস্বর্ণা ২৩৫০ টাকা, ২৬০০ টাকার মিনিকেট ২৯০০ টাকা এবং ৩২৫০ টাকার নাজিরাশাইল ৩৪৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সিদ্ধ চালের মতোই লাগামহীন আতপ চালের চালের বাজারও।
গুজব এবং নানা অজুহাতে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা অস্থির করে তুলছে চালের বাজার। বিশেষ করে সরকার চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের পর শিল্পগ্রুপগুলো আগেভাগেই কৃষকদের কাছ থেকে চাল কিনে রাখছে। সে সঙ্গে ডলার সংকটের অজুহাতে চালের দাম বাড়াচ্ছে আমদানিকারকরা। তার সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে সংকটের গুজবে ক্রেতাদের অতিরিক্ত চাল কেনার প্রবণতা। চালের দাম কেন বাড়লো তা নিয়ে কখনও পাইকার, কখনো মিলারের দিকে অভিযোগের তীর ছুঁড়তে দেরি করেন না বিক্রেতারা। এবার পালে নতুন হাওয়া বড় কোম্পানিগুলোর বাজারে আসা। তাদের অতিরিক্ত মজুদের কারণেই এই খাদ্যপণ্যের দাম কমছে না বলে জানান ব্যবসায়ীরা। তবে বড় কোম্পানিগুলোর কর্তাব্যক্তিদের দাবি, অর্থনীতির বেশ কিছু সূচকে বড় পরিবর্তন এবং মাঠ পর্যায়ে উৎপাদন ও সরবরাহের সঠিক তথ্যের ঘাটতির কারণেই অস্থির চালের বাজার।
খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারের শিথিল নীতি ও তড়িৎ ব্যবস্থা না নেওয়ার ফলে জনগণকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। মজুদদারদের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে তারা চালের বাজার আরও অস্থিতিশীল করে তুলবে। রাজশাহীর সাহেব বাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী রওশন আলী বলেন, চালের দাম বাড়লে যাদের লাখ লাখ টন ধান-চাল মজুদ করার ক্ষমতা আছে তাদের লাভ। মৌসুমের শুরু থেকেই ধানের দাম বেশি। অটো রাইস মিল মালিকরা অনেক বেশি ধান সংগ্রহ করে নিজেদের ইচ্ছেমতো চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। নিয়মিত বাজার মনিটরিং না থাকায় এই চক্রটি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
আরেক ব্যবসায়ী রহমত উল্লাহ বলেন, বাজারে চালের সরবরাহে ঘাটতি নেই। সরবরাহ বেশি, কিন্তু দামও বেশি। মৌসুমের শুরুতেই মজুদদাররা ধান-চাল মজুদ করে রাখে। তারাই বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। এসব সিন্ডিকেট ও মজুদদাররা সুযোগ পেলেই দাম বাড়িয়ে দেয়। উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার প্রায় ২০০ অটো রাইস মিল মালিক ও শতাধিক মজুদ ব্যবসায়ী বাজার রেখেছে নিজের দখলে। 
চট্টগ্রাম পাহাড়তলী বনিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এসএম নিজাম উদ্দিন বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আছেন, যারা ভাবছে দেশে দুর্ভিক্ষ লাগবে এ অজুহাতে তারা চাল স্টক করছে। আবার কাস্টমার যারা এক বস্তা চাল নিত, তারাও বেশি করে চাল কিনছেন। এক বস্তার জায়গাতে তিন থেকে ৪ বস্তা চাল নিচ্ছেন। মেসার্স তোফায়েল এন্টারপ্রাইজের মালিক তোফায়েল আহমেদ খোকা বলেন, মধ্যবিত্ত ব্যবসায়ীরা তো চাল আমদানি করতে পারছে না। সরকার কিছু ব্যবসায়ীকে চাল আমদানি করার অনুমতি দিয়েছে, যার ফলে ওদের হাতে এটি নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে।