হেযবুত তওহীদের পাবনা কার্যালয়ে সদস্যদের উপর আকস্মিক হামলা চালিয়েছে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী। গত ২৩ আগস্টের ঘটনায় সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের আঘাতে নিহত হন হেযবুত তওহীদের একজন কর্মী, আহত হন আরো দশজন। এই বর্বোরচিত হামলা ও হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আজ (৩ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৩ ঘটিকায় রাজধানীর উত্তরার রবীন্দ্র সরণিতে মানববন্ধনের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর হেযবুত তওহীদ। মানববন্ধনটি রবীন্দ্র সরণি থেকে শুরু হয়ে হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এসে মানব সমাবেশে রূপ নেয়। সমাবেশে মূল বক্তব্য দেন হেযবুত তওহীদের এমাম জনাব হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম।
হেযবুত তওহীদের সর্ব্বোচ্চ নেতা বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, হেযবুত তওহীদের মূলনীতি হলো মানবতার কল্যাণে নিজেদের সম্পদ ও জীবন উৎসর্গ করে কাজ করা, কোনো ধরনের অবৈধ অস্ত্রের সংস্পর্শে না যাওয়া এবং রাষ্ট্রের কোনো আইন ভঙ্গ না করা। শুরু থেকেই এ সকল নীতিতে আমরা অবিচল। কিন্তু এভাবে যদি আমাদের উপরে অন্যায় হামলা হতেই থাকে, আর যদি অপরাধীরা বিচারের আওতায় না আসে তবে বাংলাদেশকে এক সময় তারা সন্ত্রাসের জনপদে পরিণত করবে। চরম অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে এ গোষ্ঠীটি অর্থহীন করে দেবে সমস্ত অর্জন, স্তব্ধ করে দেবে অগ্রগতির চাকা, ভূলুন্ঠিত হবে মানবতা ও মানবাধিকার। সীমাহীন ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার এই ৫০ বছর পরে সরকার নিশ্চয়ই সেটা হতে দেবেন না।, তিনি সমাবেশ থেকে পরবর্তী ঘোষণা করেন ১. আগামীকাল থেকে প্রত্যেক জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি প্রদান। ২. প্রত্যেক উপজেলায় প্রতিবাদ সমাবেশ ৩. প্রত্যেক এলাকায় গণসংযোগ। ৪. ১৫ সেপ্টম্বর ( শুক্রবার) প্রত্যেক জামে মসজিদে মিলাদ মাহফিল।
মানববন্ধনের বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর হেযবুত তওহীদের সভাপতি ডা. মাহবুব আলম মাহফুজ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন ফাউন্ডেশনের যগ্ম মহাসচিব এস এম শামসুল হুদা। তারা ন্যাক্করজনক এ হামলায় জড়িত সবাইকে গ্রেফতার ও বিচারের জোর দাবি জানান।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নারী বিষয়ক সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নী, স্বাস্থ্য সম্পাদক মাখদুমা পন্নী, প্রচার সম্পাদক শফিকুল আলম, কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক রিয়াদুল হাসান, অনলাইন প্রচার সম্পাদক মোখলেসুর রহমান, সহ-সাহিত্য সম্পাদক আসাদ আলি। মানববন্ধন ও সমাবেশ পরিচালনা করেন ঢাকা মহানগর হেযবুত তওহীদের সাধারণ সম্পাদক ফরিদউদ্দিন রব্বানি।
মানববন্ধনে স্বাগত বক্তব্যে গাজীপুর ও উত্তরা অঞ্চলের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান টিটু বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। এখানে সরকার আছে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আছে, সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে নাগরিক অধিকার, মানবাধিকারের ধারাগুলো লিপিবদ্ধ আছে। প্রতিটি মানুষের কথা বলার, সংগঠন করার মৌলিক অধিকার সেখানে দেওয়া হয়েছে। অথচ হেযবুত তওহীদকে বারবার এ অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, বারবার আক্রান্ত হয়েও আমরা বিচার পাচ্ছি না। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আজ সুজন হত্যার বিচারের দাবি নিয়ে এখানে একত্রিত হয়েছি।’
হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন ফাউন্ডেশনের যুগ্ম মহাসচিব এস এম শামসুল হুদা বলেন, হেযবুত তওহীদ জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মব্যবসার বিরুদ্ধে কাজ করছে বিধায় একদল সন্ত্রাসী তাদের টার্গেট করে বারবার হামলা করছে। দেশের মানবাধিকার সংস্থাগুলো এসব ব্যাপারে তেমন কোন তৎপরতা দেখা যায় না। তাদেরকে সবকিছুর উর্ধ্বে গিয়ে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে, সুজনের হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে। তিনি এই সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘যারা যারা এ হামলা চালিয়েছে এবং যারা পেছন থেকে ইন্ধন যুগিয়েছে তাদের রাজনৈতিক পরিচয় ও ধর্মীয় সামাজিক পরিচয় যাই হোক না কেন, তারা সন্ত্রাসী। কাজেই তাদেরকে বিচারের মুখোমুখী করতে হবে।’
ঢাকা মহানগর হেযবুত তওহীদের সভাপতি ডা. মাহবুব আলম মাহফুজ বলেন, ‘আমাদের দাবী, হেযবুত তওহীদের পাবনা কার্যালয়ে হামলা করে যারা নির্দোষ নিরপরাধ সদস্যদেরকে খুন করেছে, তাদের সবাইকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। সেই সঙ্গে পূর্ববর্তী সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হোক। এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হোক যেন বাংলাদেশে কেউ আর জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটাতে না পারে, কেউ আর সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে বা গুজব রটিয়ে মানুষের জানমালের ক্ষতিসাধন করার দুঃসাহস না দেখাতে পারে।’
মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে অংশগ্রহণ করা নেতাকর্মীরা সুজন হত্যাকাণ্ডের বিচার দ্রুত আইনে করার দাবি জানান। তারা বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে স্লোগান দিতে থাকে। হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহনে এ মানববন্ধন দীর্ঘ এক কিলোমিটার লম্বা হয়। দীর্ঘ মানববন্ধনের কারণে উত্তরা এলাকায় দীর্ঘ সময় যান চলাচল বন্ধ থাকে। তাই পুলিশের অনুরোধে মানববন্ধনের সময় সংক্ষিপ্ত করে নেতা কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে সমবেত হয়।