ডেস্ক রিপোর্ট:
বিদেশি পর্যবেক্ষকদের চোখে ছানি পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আলোচিত ইউটিউবার ও বগুড়া-৪ আসনের বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম।
আজ সোমবার (৮ জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বগুড়া জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে ভোট বর্জনের কাগজ জমা দিতে এসে তিনি এ কথা বলেন।
আগের দিন রোববার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২ হাজার ১৭৫ ভোট পেয়ে জামানত হারান হিরো আলম। তবে ফলাফল ঘোষণার আগেই হিরো আলম নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ভোট বর্জনের পোস্ট করেন।
বগুড়া জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে হিরো আলম বলেন, আওয়ামী লীগ সুষ্ঠু ভোট করে নাকি জাল ভোট করে। বিদেশি পর্যবেক্ষকরা দেখবে কোথায় থেকে, তাদের চোখে ছানি পড়েছে। ওরা দেখতেই পারে না।
তিনি বলেন, গতকাল যে নির্বাচন হয়েছে এটা নাটকীয় নির্বাচন। আমিও ভোট করতে চাইছিলাম না। ভোট একটা কারণেই করেছি, এই আসনে প্রতিবারই দুর্নীতি করা হয় আমার ওপর। এবারও করবে সেটা আমি আগে থেকেই জানতাম। দেশবাসীর কাছে এটা প্রমাণ করার জন্যই আমি নির্বাচনের মাঠে ছিলাম। আমি ইচ্ছা করলে গতকাল সকালেই ভোট বর্জন করতে পারতাম। কিন্তু করিনি। কারণ আপনারা শেষ পর্যন্ত দেখেন মাঠে কি হয়।
হিরো আলম বলেন, আমরা সারাদিন নির্বাচনের মাঠে ঘুরেছি। আমার এজেন্টরা বলেছে তাদেরকে বলা হয়েছে, আলম যদি কেন্দ্রে আসে তখন তাকে যেন বলা হয় ভোট খুব ভালো হচ্ছে। কিন্তু আমরা চলে আসার পর দুপুরে লাঞ্চের সময়ে তারা সিল মারছে। এছাড়া কিছু সিল মারাই নিয়ে এসেছিল ওরা। আমরা যখন কেন্দ্রে যাই তখন প্রতিটি কেন্দ্রে ২টা, ১৫টা, ৯৬টা করে ভোট পড়েছে।
তিনি বলেন, আমি এবার ভোট পেয়েছি ২৪ হাজার ৬০০। কিন্তু আমার ভোট দেখানো হয়েছে মাত্র ২ হাজার ১০০। আমি প্রথমে যখন ওখানে যাই তখন নৌকা পেয়েছে ৬ হাজার ভোটের মতো। কিন্তু পরে নৌকায় সিল মেরে ভোট দেখিয়েছে ২৫ হাজার। ঈগল মার্কা ভোট পেয়েছে ১০ হাজারের মতো। আমার যারা এজেন্টরা ছিল তারা আমাকে এগুলো জানিয়েছে।
প্রয়োজনে আমাকে হত্যা করুন, কোনো সমর্থককে মারবেন না : হিরো আলম
হিরো আলম বলেন, জিয়াউল হক বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা। তার তো এত ভোট পাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। যে জায়গায় বিএনপি ভোট দিতে যায়নি, সেখানে উনি এত ভোট পেলেন কোথায়?
হিরো আলম অভিযোগ করেন, প্রিসাইডিং অফিসাররা যখন কেন্দ্র থেকে রেজাল্ট ঘোষণা করবে। তার আগে আওয়ামী লীগের লোকজন তাদের গণনাকৃত ফলাফলের রেজাল্ট শিট নিয়ে ছিঁড়ে ফেলে দিয়ে তাদের তৈরিকৃত রেজাল্ট শিট হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন এবং তাদের তৈরিকৃত রেজাল্ট শিট ঘোষণার নির্দেশ দেন। এভাবে প্রতিটি কেন্দ্রে অনিয়ম করেছে। কাজেই আমি এই ফলাফল মানি না। আর এই নির্বাচন নিয়ে সরকার কতটা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে সেটা আপনারা নিজেরাই দেখেছেন।
বাংলাদেশ কংগ্রেসের এই প্রার্থী বলেন, গতবারের মতো এবারও ভোটে চাল খাটাইছে। গতবার আমাকে ৮০০ ভোটের ব্যবধানে আমাকে তানসেনের কাছে পরাজিত দেখানো হয়েছিল। এবার ঈগলকে দেখানো হয়েছে ১০০ কয়েকটি ভোটে ফেল করেছে। সারাজীবন কি খালি এক-দেড়শ ভোটে ফেল দেখায়? ২-৪ হাজার ভোট কি কেউ কম বেশি পায় না? তানসেনের কি জনপ্রিয়তা এতই বেশি? আমার কি জনপ্রিয়তা এতই কম। যে জায়গায় গতবার আমি ১৯ হাজার ভোট পেয়েছিলাম। এবার ২ হাজার ভোট পাই। হিরো আলমের জনপ্রিয়তা কি এতই কমে গেছে, যে হিরো আলম ভোট পায়নি?
২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বগুড়া- ৪ আসন থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন হিরো আলম। যদিও পরে অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। বগুড়া সদরের এরুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা হিরো আলম শৈশবে চানাচুর বিক্রি করতেন। পরে তিনি সিডি বিক্রি এবং ডিশ সংযোগের ব্যবসা করেন। নিজেই মিউজিক ভিডিও তৈরি করে ডিশ লাইনে সম্প্রচার শুরু করেন। ইউটিউবে প্রায় ৫০০ মিউজিক ভিডিও ছাড়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে আলোচনায় আসেন হিরো আলম।