ভারতের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপতি গৌত আদানির বিরুদ্ধে ওঠা জালিয়াতি ও পুঁজিবাজারে কারসাজির যে অভিযোগ তুলেছে মার্কিন সংস্থা হিন্ডেনবার্গ, তা তদন্তে ৬ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার ভারতের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচুড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এই কমিটি গঠন করেন।
কমিটিতে অবসরপ্রাপ্ত বিচারক অভয় মনোহর সাপ্রেকে প্রধান হিসেবে মনোনীত করেছেন সর্বোচ্চ আদালত। বাকি ৫ সদস্য হলেন—ভারতের অভিজ্ঞ ব্যাংক কর্মকর্তা কে ভি কামাথ, সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়ার (এসইবিআই) সাবেক নির্বাহী ও পি ভাট, ভারতের তথ্য প্রযুক্তি কোম্পানি ইনফোসিসের সহপ্রতিষ্ঠাতা নন্দন নিলেকানি, আইনজীবী সোমশেখর সুন্দর্শন এবং অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জে পি দেবধর।
বার্তাসংস্থা এএনআইয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গৌতম আদানির বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারে যে জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে—তার তদন্তে একটি কমিটি গঠনের আবেদন করে কয়েকদিন আগে পিটিশন জমা দিয়েছিলেন ভারতের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বিশাল তিওয়ারি।
আবেদনে সুপ্রিম কোর্টের কোনো একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠনের আর্জি জানিয়েছিলেন তিনি।
বৃহস্পতিবারের আগে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচুড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চেই বিশাল তিওয়ারির সেই পিটিশনের ওপর শুনানি হয়েছিল। সেদিনিই কমিটি গঠনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন আদালত।
সে দিনের শুনানিতে আদালতের সরকারপন্থী আইনজবী তুষার মেহতা কমিটি গঠনে কেন্দ্রীয় সরকারের পরামর্শ গ্রহণের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন,সার্বিক সত্যের উদ্ঘাটন ও অভ্যন্তরীণ পুঁজিবাজারে অনাকাঙ্ক্ষিত বিপর্যয় এড়াতে কেন্দ্রীয় সরকারের পরামর্শে তদন্ত কমিটি গঠন করা বাঞ্ছনীয়।
কিন্তু তার সেই যুক্তি নাকচ করে দিয়ে আদালত বলেছিলেন, যদি কমিটি গঠনে কেন্দ্রীয় সরাকরের পরামর্শ নেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে কমিটির নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে এবং সেই তদন্ত সবার কাছে গ্রহণযোগ্য না ও হতে পারে।
বিভিন্ন ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, কমিটিকে আগামি দু’মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট।
এদিকে, সর্বোচ্চ আদালতের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন আদানিগ্রুপের প্রধান গৌতম আদানি। বৃহস্পতিবার এক টুইটবার্তায় তিনি বলেন, ‘আদানিগ্রুপ সম্মানিত সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছে। (কমিটির নেতৃত্বে) আর অল্প কিছু দিনের মধ্যেই প্রকৃত ঘটনা সর্বসমক্ষে আসবে। সত্যের জয় হবেই।’
আদানি বনাম হিন্ডেনবার্গ
সম্প্রতি ভারতের শীর্ষস্থানীয় শিল্পোদ্যোক্তা গৌতম আদানির সম্পর্কে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে মার্কিন বিনিয়োগ গবেষণা সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ ফার্ম। গত ২৪ জানুয়ারি প্রকাশ করা সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, এক দশককালেরও বেশি সময় ধরে শেয়ার কারসাজি এবং আর্থিক লেনদেনে প্রতারণা চালিয়ে আসছে আদানি গ্রুপ। কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দর বহু গুণ বাড়িয়ে এ গ্রুপ বিশাল সম্পদ গড়েছে। গত কয়েক বছরে আদানি গ্রুপের কোম্পানির শেয়ার ৫০০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে।
প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর থেকেই আদানি গ্রুপের সব কোম্পানির শেয়ারের দাম পড়তে শুরু করে; এখনও অব্যাহত আছে সেই পতন। দরপতনের জেরে ইতোমধ্যে হাজার হাজার কোটি ডলার খুইয়েছেন গৌতম আদানি।
হিন্ডেনবার্গের যাবতীয় অভিযোগ অবশ্য দ্ব্যর্থহীনভাবে অস্বীকার করেছে আদানি গ্রুপ। গ্রুপের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদন ‘মিথ্যা’,‘ভিত্তিহীন’, ও ‘শত্রুতাপূর্ণ’ আরও বলা হয়েছে, ভারতের শেয়ারবাজার সম্পর্কে ‘কোনো ধারণা নেই’ হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের।
এমনকি এই প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ ভারত, তার স্বাধীনতা ও সংহতিকে ‘আক্রমণ’করেছে বলেও অভিযোগ করেছে ভারতের রাজনৈতিক দল বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ট আদানি গ্রুপ।
আদানি গ্রুপের এসব অভিযোগের পাল্টা জবাবে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ ফার্মের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের প্রতিবেদনের প্রতিটি তথ্য-অভিযোগ সত্য এবং লোকসান থেকে বাঁচতে এখন জাতীয়তাবাদী চেতনাকে ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন আদানি।