ইউক্রেনে যুদ্ধ ও তার জেরে শস্য চুক্তি রাশিয়া নিজেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ায় বিশ্বজুড়ে দেশটির আলোচনা-সমালোচনা চলছে। তার মধ্যেই আফ্রিকার সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করতে তৎপরতা শুরু করেছে মস্কো।
মঙ্গলবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিনের ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বার্তায় বলা হয়েছে, চলতি সপ্তাহেই আফ্রিকার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবে মস্কো এবং এই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য রাশিয়া ও আফ্রিকার মধ্যকার সম্পর্ককে আরও গভীর ও মজবুত করা।
প্রেসিডেন্ট পুতিন বার্তায় লিখেছেন, ‘আমাদের এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য রাশিয়া ও আফ্রিকার মধ্যকার অংশীদারিত্বমূলক সম্পর্ককে আরও গঠনমূলক, বিশ্বাসপূর্ণ এবং ভবিষ্যৎমুখী করে তোলা।’
বস্তুত, বৈশ্বিক রাজনীতি থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে গত ৫ বছর ধরেই রাশিয়ার সম্পর্ক উন্নয়নের তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। ২০১৯ সালে প্রথবারের মতো রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর সোচিতে আফ্রিকার দেশগুলোর জোট আফ্রিকান ইউনিয়নের (এইউ) নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিল মস্কো। সেই বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়ন।
সেই বৈঠকের পর থেকে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশকে অল্পমূল্যে কিংবা অনেক সময় বিনামূল্যে গম সরবরাহ করে আসছে রাশিয়া।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে ইউক্রেনে বিশেষ অভিযান শুরু করে রুশ বাহিনী। সে সময় ইউরোপ ও এশিয়াভিত্তিক বিভিন্ন দেশ ও আঞ্চলিক জোটগুলো এই যুদ্ধের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিলেও দীর্ঘদিন পর্যন্ত এই ইস্যুতে নিশ্চুপ ছিল অর্থনৈতিকভাবে দরিদ্র ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ‘ব্রাত্য’ আফ্রিকা।
চলতি ২০২৩ সালের জুনের মাঝামাঝি দ্বীতিয়বারের মতো রাশিয়া সফরে যান এইউ নেতারা এবং প্রথমবারের মতো ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে কথা বলেন। বৈঠকে তারা পুতিনকে যুদ্ধ স্থগিত রেখে রাজনৈতিকভাবে ইউক্রেনের সঙ্গে সমঝোতায় যাওয়ার আহ্বান জানান।
জবাবে পুতিন বলেন, ইউক্রেন যদি ক্রিমিয়া, খেরসন, দনেৎস্ক, লুহানস্ক এবং ঝাপোরিজ্জিয়াকে রুশ অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত থাকে— একমাত্র তাহলেই রুশ বাহিনী সামরিক অভিযান বন্ধ করবে।
সম্প্রতি কৃষ্ণসাগরে শস্যবাহী জাহাজগুলোর নিরাপত্তা সংক্রান্ত চুক্তি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে রাশিয়া। ২০২২ সালের জুলাইয়ে তুরস্ক ও জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল এই চুক্তি।
আন্তর্জাতিক বাজারে যে পরিমাণ গম কেনাবেচা হয়, তার একটি বড় অংশই কৃষ্ণ সাগরের বাণিজ্যিক পথ দিয়ে আসে। রাশিয়া এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ফলে সাগরটিতে চলাচলকারী বাণিজ্যিক জাহাজগুলোর নিরাপত্তা সংকট দেখা দিয়েছে।
মস্কোর অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ চুক্তির শর্ত মেনে রাশিয়ার কৃষিপণ্য ও সারের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করায় চুক্তি থেকে সরে এসেছে রাশিয়া।
রপ্তানির নিষেধাজ্ঞার কারণে আফ্রিকার দেশগুলোকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া মস্কোর পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না এবং এই নিয়ে পুতিন ও তার সরকারের প্রভাবশালী কর্মকর্তারা একাধিকবার ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন।
চলতি বছরের শুরুতে এক অনুষ্ঠানে পুতিন বলেছিলেন, ‘(শস্য চুক্তির পর) ইউক্রেনের সব গম নিয়ে গেছে ইউরোপের ধনী দেশগুলো। আফ্রিকা সেই গমের হিস্যা পায়নি।’