একই সপ্তাহে তুরস্ক সফরে যাচ্ছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে বুধবার (২৬ জুলাই) আঙ্কারায় যাওয়ার কথা রয়েছে মাহমুদ আব্বাসের আর শুক্রবার (২৮ জুলাই) যাবেন নেতানিয়াহু।
বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) রাতে এক বিবৃতিতে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট কার্যালয় জানায, প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান একই সপ্তাহে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে স্বাগত জানাবেন। এ সফরে তুরস্ক-ফিলিস্তিন সম্পর্ক ও ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের সর্বশেষ পরিস্থিতির পাশাপাশি অন্যান্য প্রাসঙ্গিক আন্তর্জাতিক বিষয়ে আলোচনা হবে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় নেতানিয়াহুর তুরস্ক সফরের তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। ২০০৮ সালে এহুদ ওলমার্টের পর এই প্রথম কোনো ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী তুরস্ক সফরে যাচ্ছেন। তুরস্কের এ কূটনৈতিক তৎপরতা এমন এক সময়ে এলো যখন অধিকৃত পশ্চিম তীরে সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় সহিংসতা চলছে ও শান্তি প্রক্রিয়া স্থবির হয়ে পড়েছে।
চলতি বছরের এপ্রিলে জেরুজালেমের পবিত্র আল-আকসা মসজিদে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর হামলার জেরে সংঘর্ষ শুরু হয়েছিল। সেসময় ইসরায়েলি পুলিশ পবিত্র ওই স্থাপনার ভেতরে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে লড়াইয়ে জড়িয়েছিল।
এ ঘটনায় ইসরায়েল ‘রেড লাইন’ অতিক্রম করেছে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। তুরস্ক-ইসরায়েলের মধ্যে বেশ কয়েক বছর ধরেই উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক চলে আসছিল। তবে গত বছরের আগস্টে তারা পুনরায় পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক চালুর ঘোষণা দেয়।
গত এক বছরে তুরস্ক-ইসরায়েলের মধ্যকার সম্পর্কের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। এ সময় ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজোগসহ বেশ কয়েকজন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা তুরস্ক সফর করেছেন।
স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার এক বছর পর ১৯৪৯ সালে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছিল তুরস্ক। মুসলিমপ্রধান দেশের মধ্যে তুরস্কই সর্বপ্রথম ইহুদি রাষ্ট্রটিকে স্বীকৃতি দেয়, যা ছিল খুবই আশ্চর্যজনক। ১৯৫৬ সালে মিসরের সিনাই উপদ্বীপে আক্রমণ ও সুয়েজ খাল দখলের চেষ্টা করলে তুরস্ক ইসরায়েল থেকে নিজেদের কূটনীতিকদের প্রত্যাহার করে নেয়। পরে অবশ্য সে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করা হয়।
এরপর ২০১০ সালে ইসরায়েলি বাহিনী তুর্কি জাহাজ মাভি মারমারার ওপর মারাত্মক আক্রমণ চালালে উভয় দেশের সম্পর্কে আবারও টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়। অভিযোগ তোলা হয়, ওই জাহাজটি ইসরায়েলি অবরোধের অধীনে থাকা ফিলিস্তিনি গাজা উপত্যকায় সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছিল।
তাছাড়া ২০১৮ সালের মে মাসে গাজায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হামলায় প্রায় ৫০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার পর তুরস্ক তেল আবিব থেকে তার রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে ও আঙ্কারায় নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করে। এর পাল্টা জবাবে জেরুজালেমে নিযুক্ত তুর্কি কনসাল জেনারেলকেও বরখাস্ত করে ইসরায়েল।
তবে ২০২১ সালের শেষের দিকে ইসরায়েলি এক দম্পতিকে মুক্তি দেয় তুরস্ক। জানা যায়, গোপনে তুর্কি প্রেসিডেন্টের বাড়ির ছবি তোলার দায়ে তাদের আটক করা হয়েছিল। তবে ওই দম্পতিকে মুক্তি দেওয়ায় খুশি হয়ে আঙ্কারা সফর করেন ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ। সেখানে তিনি উষ্ণ অভ্যর্থনায় সিক্ত হন। তখন থেকেই দুই দেশের মধ্যে আবারও ভালো সম্পর্ক চলমান।