আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
তীব্র খাদ্যসংকট উত্তরণের উপায় খুঁজতে জরুরি বৈঠক শুরু করেছেন উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির উচ্চপর্যায়ের নেতারা। রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দেশটির প্রেসিডেন্ট কিম জং উন জরুরি এ বৈঠকের ডাক দেন, যা শুরু হয় সোমবার।
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম কেসিএনএ জানায়, বৈঠকে খাদ্যঘাটতি মোকাবিলায় অতি গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে। সপ্তম বর্ধিত এ বৈঠকে কিম জং উন সরকারের গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্পগুলোও পর্যালোচনা করছেন।
কেসিএনএ আরও জানায়, বৈঠকটি ক্ষমতাসীন দলের প্রথম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন, যা শুধুমাত্র কৃষিব্যবস্থার উন্নয়ন ও পরিবর্তন নিয়ে আলোচনার জন্য ডাকা হয়েছে। তবে কৃষি ছাড়াও চলমান এ বৈঠকে জাতীয় অর্থনীতির উন্নয়নে জরুরি ও সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ নির্ধারণ করা হবে।
বৈঠকে কিম জং উনের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন, মন্ত্রিপরিষদ প্রিমিয়ার কিম টোক হুন ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক পরিচালক ও কিমের ঘনিষ্ঠ সহযোগী জো ইয়ং ওয়ানের মতো জ্যেষ্ঠ নেতা ও কর্মকর্তারা।
এদিক, দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার বলেছে, এ ধরনের বৈঠক উত্তর কোরিয়ার খাদ্য পরিস্থিতির অধিকতর অবনতির ইঙ্গিত দেয়। গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্লেষণধর্মী ওয়েবসাইট ‘৩৮ নর্থ’ বলেছিল, উত্তর কোরিয়ার খাদ্যপ্রাপ্যতা সম্ভবত মানব চাহিদার ন্যূনতম সীমারও নিচে নেমে গেছে।
সাম্প্রতিক দশকগুলোতে উত্তর কোরিয়া দুর্ভিক্ষসহ, প্রায়ই বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চরম আবহাওয়ার ফলে ফসল উৎপাদন কমে যাওয়া ও করোনা মহামারি চলাকালীন চীনের সঙ্গে বাণিজ্যঘাটতি সৃষ্টি হওয়ায় খাদ্যসংকট আরও বেড়েছে।
পাশাপাশি একের পর এক পারমাণবিক কর্মসূচি পরিচালনার ফলে আরোপ হওয়া আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা দেশটিকে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।
গত বছর, দেশটির শস্য উৎপাদনের পরিমাণ অনুমান করা হয়েছিল ৪০ লাখ ৫০ হাজার টন, যা ২০২০ সালের তুলনায় ৩ দশমিক ৮ শতাংশ কম। দক্ষিণ কোরিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ সাল পর্যন্ত উত্তর কোরিয়া বছরে ৪০ লাখ ৪০ হাজার থেকে ৪০ লাখ ৮০ হাজার টন খাদ্যশস্য উৎপাদন করেছে। অথচ দেশটির ২ কোটি ৫০ লাখ মানুষের জন্য প্রায় সাড়ে ৫০ লাখ টন খাদ্যশস্যের প্রয়োজন।
দক্ষিণ কোরিয়ার জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ নোন তাই-জিনের মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উত্তর কোরিয়ায় চাহিদার তুলনায় ১ লাখ খাদ্যশস্যের ঘাটতি বিদ্যমান। এ ব্যবধানের অর্ধেক সাধারণত চীন থেকে গোপনে কেনা শস্যের মাধ্যমে পূরণ করা হতো। বাকিটা অমীমাংসিত ঘাটতি হিসেবে থেকে যেত। করোনা পরবর্তী সময়ে চীন থেকে খাদ্যশস্য আমদানি ব্যাহত হওয়ায় এ বছর খাদ্যঘাটতি বিশাল আকারে রূপ নিয়েছে।
তাই-জিন আরও বলেন, এর পেছনে আরেকটি বিষয় দায়ী। সেটা হলো, উত্তর কোরিয়া কর্তৃপক্ষের কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ ও বাজারের কার্যক্রম সীমিত করার প্রচেষ্টা। এখন এ সংকট কাটিয়ে উঠতে দেশটি কী পদক্ষেপ নেবে, তা মোটেই স্পষ্ট নয়।