অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের দক্ষিণাঞ্চলেও এখন আক্রমণ করছে ইসরায়েল। আর এই দক্ষিণ গাজাতেই লাখ লাখ ফিলিস্তিনি উত্তর গাজা থেকে পালিয়ে এসেছেন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। ফলে ফিলিস্তিনিদের কাছে অঞ্চলটিতে নিরাপদ আশ্রয় বলে আর কিছু থাকছে না।
তরুণ শিল্পপতি হানা আওয়াদ বলছেন, ‘আমরা এমন একটা পর্যায়ে এসে পৌঁছেছি, যেখানে আমাদের নিরাপত্তা বলে কিছু নেই। আমরা চাকরি হারিয়েছি, পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছি, বাড়িঘর হারিয়েছি, এমনকি নিজেদের শহরও হারিয়ে ফেলেছি।’
লড়াই শুরুর কিছুদিনের মধ্যেই হানা তার শহর ছেড়ে চলে এসেছিলেন।
উত্তর গাজার হাজার হাজার মানুষের মতো হানা ও তার পরিবার মিসর সীমান্তের কাছে রাফাহতে চলে গেছেন। সেই সময় ইসরায়েলের সেনাবাহিনীই জানিয়েছিল, উত্তর গাজা থেকে মানুষ যেন দক্ষিণ গাজার নিরাপদ জায়গায় চলে যান। কিন্তু এখন দক্ষিণ গাজাতেও ইসরায়েল সমানে বোমাবর্ষণ করছে।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী এখন খান ইউনিস শহর ঘিরে অভিযান চালাচ্ছে। শহর থেকে মানুষকে পশ্চিমদিকে বা রাফাহর দক্ষিণে চলে যেতে বলা হচ্ছে। কিন্তু লড়াই বন্ধ করা হচ্ছে না। ইসরায়েলের দাবি, হামাস নেতারা এই শহরেই আছে।
হানা জানিয়ছেন, ‘রাফাহতে থাকাটাও রীতিমতো চ্যালেঞ্জের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। খান ইউনিস থেকে দলে দলে মানুষ এখানে আসছেন। ফলে আগে যারা এসেছেন তারা বিপাকে পড়েছেন। গাজার সব জায়গা থেকে রাফাহতে মানুষ আসছে। এখানেও ইসরায়েলের ড্রোনের আওয়াজ শোনা য়াচ্ছে। তাই সত্যিকারের কোনও নিরাপদ জায়গা নেই।’
যুদ্ধবিরতির সময় রাফাহ সীমান্ত দিয়ে কিছু মানবিক ত্রাণ এসেছে। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। তাই মানুষের ন্যূনতম চাহিদাও পূরণ হচ্ছে না।
জাতিসংঘের অফিস ফর দ্য কোঅর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স (ইউএনওসিএইচএ) জানিয়েছে, গাজার ২২ লাখ মানুষের মধ্যে ১৮ লাখ মানুষ এই যুদ্ধের ফলে মাথার ওপর ছাদ হারিয়েছেন। অনেকেই দক্ষিণ গাজায় চলে গেছেন। সেখানে জাতিসংঘের আশ্রয়শিবিরে আর ঠাঁই নেই। অনেকে গাড়িতে থাকছেন, আত্মীয়দের সঙ্গে গাদাগাদি করে থাকছেন।
হানা জানিয়েছেন, ‘খাবার পওয়া যাচ্ছে না। গদি, কম্বল কিছুই নেই। গত দুই দিন ধরে যারা আসছেন, তারা মেঝের ওপর নাইলনের শিট বিছিয়ে থাকছেন।’
তিনি জানিয়েছেন, ‘কেউ গাড়ির ভেতর থাকছেন, প্রচুর মানুষ রাস্তায় রাত কাটাচ্ছেন। এই ঠান্ডায় এভাবে রাত কাটানো ভয়ঙ্কর কষ্টের।’