খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বড়দিনে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ অবসানের আহ্বান জানিয়েছেন এই ধর্মের সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক নেতা পোপ ফ্রান্সিস । ২৪ তারিখ রাতে ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা গির্জায় প্রার্থনা ও ভাষণ দেওয়ার সময় এই আহ্বান জানিয়েছেন পোপ।
নিজ বক্তব্যে পোপ ফ্রান্সিস বলেন, ‘আজ আমাদের হৃদয় বেথলেহেমের সঙ্গে রয়েছে, যেখানে শান্তির যুবরাজ (যিশুখ্রিস্ট) সংঘাতের বিরুদ্ধে তার জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন। যারা যুদ্ধ করে, তারা সবসময়েই তার পক্ষে যুক্তি দেয় এবং সেসব যুক্তির সবই ফাঁপা, নিরর্থক।’
খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অনুযায়ী, আজ থেকে ২ হাজার ২৩ বছর আগে জেরুজালেমের বেথলেহেম শহরে জন্মেছিলেন এই ধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিস্ট। প্রতি বছর তার জন্মদিবসটিকেই বড়দিন হিসেবে পালন করেন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা।
যিশুখ্রিস্ট যে অঞ্চলে জন্মেছিলেন, সেই জেরুজালেমের দখল নিয়ে গত ৮ দশকেরও বেশি সময় ধরে দ্বন্দ্ব চলছে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে। ২০২১ সালে ইসরায়েল জেরুজালেমকে তার রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করেছে, যদিও বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এখনও জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি।
নিজ বক্তব্যে পোপ বলেন, ‘বর্তমান বিশ্ব থেকে ভালবাসা হারিয়ে গেছে। পৃথিবী ক্ষমাহীন এবং কঠোর হয়ে উঠছে এবং পার্থিব সাফল্যের আশায় মানুষ অন্ধের মতো এগিয়ে চলেছে।’
‘কিন্তু মানব ইতিহাসের এই যাত্রার পরিবর্তন সম্ভব। একমাত্র ভালবাসাই আনতে পারে সেই পরিবর্তন। আজ আমরা সবাই প্রার্থনা করব— যেন শিগগিরই বেথলেহেমে শান্তি ফিরে আসে।’
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্তে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস যোদ্ধারা। তারপর ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। পরে ২৮ অক্টোবর থেকে অভিযানে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও।
ইসরায়েলি বাহিনীর টানা দেড় মাসের অভিযানে কার্যত ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা, নিহত হয়েছেন অন্তত ২০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। এই নিহতদের ৭০ শতাংশই নারী, শিশু,অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর-কিশোরী এবং বয়স্ক লোকজন।
সেই সঙ্গে আহত হয়েছেন আরও ৫২ হাজার ৫৮৬ জন এবং এখনও নিখোঁজ রয়েছেন ৬ হাজার ৭০০ জন।। এছাড়া হাজার হাজার পরিবার বাড়িঘর-সহায় সম্বল হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন স্কুল, সরকারি প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল প্রাঙ্গণে।
অন্যদিকে, হামাসের গত ৭ অক্টোবরের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছিলেন ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিক। পাশাপাশি, ইসরায়েলের ভূখণ্ড থেকে ২৪২ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিকদের সেদিন জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে গিয়েছিল হামাস যোদ্ধারা।
এই জিম্মিদের মধ্যে ইসরায়েলিদের সংখ্যা ১০৪ জন। বাকি ১৩৬ জনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স, আর্জেন্টিনা, রাশিয়া ও ইউক্রেনের নাগরিকরা রয়েছেন; এবং রয়েছেন শিশু, নারী, তরুণ-তরুণী এবং বৃদ্ধ-বৃদ্ধা— সব বয়সী মানুষ।
৭ দিনের অস্থায়ী বিরতির সময় নিজের কব্জায় আটক জিম্মিদের মধ্যে থেকে ১১৮ জনকে মুক্তি দিয়েছে হামাস; বিপরীতে এই সময়সীমায় ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগার থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ১৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে।