ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা পাঠাতে সেখানে ‘মানবিক’ বিরতির জন্য কাজ করছে যুক্তরাজ্য। বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি।
রোববার সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে ব্রিটেনের রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্লেভারলি বলেন, ‘গাজা উপত্যকায় মানবিক বিরতির জন্য আমরা মিসর, ইসরায়েল ও অন্যানদের সঙ্গে ব্যাপকভাবে কাজ করছি। অস্থায়ী এই বিরতির একমাত্র উদ্দেশ্য হলো গাজায় উপদ্রুত লোকজনদের কাছে জরুরি ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া।’
ক্লেভারলি বলেন, ‘মিসর সীমান্তে রাফাহ ক্রসিংয়ের কাছে প্রচুর সংখ্যক ত্রাণবাহী ট্রাক অপেক্ষমান রয়েছে; কিন্তু যুদ্ধ চলার কারণে সেগুলো উপত্যকায় প্রবেশ করতে পারছে না। আমরা চাই সেই ট্রাকগুলোকে প্রবেশ করতে দেওয়া হোক। আমার আমিরাত সফরের প্রধান কারণও এটাই। ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহর সঙ্গে আমি বৈঠক করেছি।’
প্রসঙ্গত, ৩৬৫ কিলোমিটার আয়তনের গাজা উপত্যকায় বসবাস করেন প্রায় ২৩ লাখ ফিলিস্তিনি। দারিদ্র ও বেকারত্ব পীড়িত এই ভূখণ্ডের অধিবাসীদের এক তৃতীয়াংশই জাতিসংঘ ও অন্যান্য দাতা দেশ ও সংস্থার দেওয়া সহায়তার ওপর সরাসরি নির্ভরশীল।
গত ৭ অক্টোবর ভোররাতে ইসরায়েল ও গাজার উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্তে অতর্কিত হামলা চালায় গাজার নিয়ন্ত্রণকারী রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাস। সীমান্তের বেড়া বুলডোজার দিয়ে ভেঙ্গে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে প্রবেশ করেন শত শত প্রশিক্ষিত হামাস যোদ্ধা।
ইসরায়েলে ঢুকে প্রথমেই কয়েক শ বেসামরিক লোকজনকে নির্বিচারে হত্যা করেন তারা, সেই সঙ্গে জিম্মি হিসেবে ২১২ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিককে ধরে নিয়ে যায় হামাস যোদ্ধারা।
এ ঘটনায় সেদিন থেকেই গাজা উপত্যকায় বিমান অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। সেই সঙ্গে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় গাজার বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের বিমান বাহিনীর অভিযানে ৭ অক্টোবরের পর এ পর্যন্ত উপত্যকায় নিহত হয়েছেন ৮ হাজারেরও বেশি মানুষ এবং এই নিহতদের ৪০ শতাংশ শিশু এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক।
এদিকে, যুদ্ধ বাঁধার পর গত ৯ অক্টোবর বন্ধ করে দেওয়া হয় রাফাহ ক্রসিং। ফলে একদিকে ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর টানা অভিযান আর অন্যদিকে খাদ্য ও ত্রাণসামগ্রীর সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যাপক মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে ফিলিস্তিনিরা।
এ পরিস্থিতিতে গত ১৮ অক্টোবর ইসরায়েল সফরে যান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ এল সিসিকে রাফাহ ক্রসিং খুলে দিতে বলেন। তার সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে গত ২১ অক্টোবর সেই ক্রসিং খুলেও দেয় মিসর।
কিন্তু যুদ্ধ চলার কারণে প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম সংখ্যক ত্রাণবাহী ট্রাক ঢুকছে গাজায়।