ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার একটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিজের পরিবারের সদস্যদের মৃতদেহ দেখে জ্ঞান হারিয়েছেন ইয়াদ শাকুরা নামে চিকিৎসক। মঙ্গলবার গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে ঘটেছে এই হৃদয় বিদারক ঘটনা।
বার্তাসংস্থা এএফপিকে ইয়াদ জানান, যুদ্ধের কারণে রোগীর ব্যাপক চাপ থাকায় গত কয়েকদিন ধরে হাসপাতালেই অবস্থান করছিলেন তিনি। মঙ্গলবার ভোরের দিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত রোগীকে নিয়ে আসেন তাদের আত্মীয় স্বজনরা। তাদের মধ্যে তার পরিবারের ৮ জন সদস্যও ছিলেন। কিন্তু হাসপাতালে নিয়ে আসতে আসতে তাদের সবাই মারা যান।
নাসের হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যখন ইয়াদ এএফপির সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখনও হাসপাতালের টেবিলে পড়েছিল তার পরিবারের সদস্যদের লাশ। কান্নাভাঙা কণ্ঠে এএফপিকে ইয়াদ বলেন, ‘আমার মা জেইনাব আবু দায়া, আমার দুই ভাই মাহমুদ শাকুরা এবং হোসেন শাকুরা, আমার বোন ইসলা ও তার দুই সন্তান নাবিল এবং নূর, আমার দুই সন্তান আবদেলরেহমান (৭) এবং ওমর (৫) নিহত হয়েছে।’
‘কিন্তু তারা এমন কী দোষ করেছিল যে নিজের বাড়িতে থাকা অবস্থায় তাদের মাথার ওপর বোমা-বিস্ফোরক এসে পড়ল। যাক, আর কী হবে…গত কয়েকদিনে আল্লাহ অনেককেই নিজের কাছে নিয়ে গেছেন, তাদের বেলাতেও তাই ঘটেছে।’
ইয়াদ শাকুরা কথা বলছিলেন তার সন্তান আবদেলরেহমানের লাশের পাশে বসে, কাঁদতে কাঁদতে।
গত ৭ তারিখ গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে অতর্কিত হামলা চালানোর পর সেদিন থেকেই গাজা উপত্যকায় বোমা বর্ষণ শুরু করে ইসরায়েলের বিমান বাহিনী (আইএএফ)। আইএএফের গত এক মাসের অভিযানে গাজা উপত্যকায় নিহত হয়েছেন ১০ হাজার ৩০০ জনেরও বেশি বেসামরিক ফিলিস্তিনি। এই নিহতদের মধ্যে শিশু ও অপ্রাপ্তয়স্কদের সংখ্যা অন্তত ৪ হাজার ২৩৭ জন।
আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, ১৯৫৩ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর এই প্রথম এত বড় মাত্রার সংঘাত হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের আল-আকসা অঞ্চলে। বিমান বাহিনীর হামলায় গত এক মাসে গাজা উপত্যকায় বাস্তুচ্যুত হয়েছেন অন্তত ১৫ লাখ মানুষ। তাদের মধ্যে প্রায় ৬ লাখ ৭০ হাজার মানুষ আনরোয়া পরিচালিত স্কুলগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন।
ইসরায়েল জানিয়েছে, হামাসকে পুরোপুরি নির্মূল করার আগ পর্যন্ত এই যুদ্ধ তারা থামাবে না। যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা ইসরায়েরের এই অবস্থানকে সমর্থন করেছে; সেই সঙ্গে গাজার বেসামরিকদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়া ও সেখানে ত্রাণ সরবরাহ অব্যাহত রাখতে সেখানে ‘মানবিক বিরতি’ ঘোষণার ডাক দিয়েছে।
তবে রাশিয়া, চীন, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চল এবং জাতিসংঘ যুদ্ধে এক সপ্তাহ পর থেকেই শুরু থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতির সোচ্চার আহ্বান জানিয়ে আসছে।