ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধাদের হাতে জিম্মি হিসেবে আটক ইসরায়েল ও অন্যান্য দেশের নাগরিকদের মুক্ত করতে গোষ্ঠীটির হাইকমান্ডের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান।
তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা দেশটির বেসরকারি টেলিভিশন হাবেরতুর্ককে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেছেন, ‘এই আলোচনায় যেন সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের নেতারাও অংশ নিতে পারেন, সেই চেষ্টাও করছেন আমাদের প্রেসিডেন্ট। এক কথায় (জিম্মিদের মুক্ত করতে) আমাদের ক্ষমতার মধ্যে যতখানি সম্ভব, তার সবই আমরা করব।’
শনিবার ইসরায়েলে হামলা চালানোর পর সেখান থেকে অন্তত দেড়শ জন বেসামরিক নারী-পুরুষ ও শিশুকে জিম্মি হিসেবে গাজায় নিয়ে গেছে হামাস যোদ্ধারা। এই বেসামরিকদের মধ্যে ইসরায়েলীয়দের পাশাপাশি অন্যান্য দেশের নাগরিকরাও রয়েছেন।
তুরস্কের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সি জানিয়েছে, ইতোমধ্যে এ প্রসঙ্গে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান এবং আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট আবদেলমাজিদ তেব্বৌনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে এরদোয়ানের।
দুই বছর ধরে পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি শেষে ৮ অক্টোবর শনিবার ভোর রাত থেকে দক্ষিণ ও মধ্য ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে একের পর এক রকেট ছোড়া শুরু করে হামাস। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ এবং হামাসের উচ্চ পর্যায়ের একাধিক সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, শনিবার সূর্যের আলো পুরোপুরি ফোটার আগেই ৩ হাজারেরও বেশি রকেট ছোড়া হয়েছিল ইসরায়েলের বিভিন্ন সামরিক-বেসামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে।
কাছাকাছি সময়ে মোটরচালিত প্যারা গ্লাইডারে চেপে হামাসের বেশ কয়েকজন যোদ্ধা সীমান্ত পেরিয়ে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর দক্ষিণাঞ্চলীয় কমাণ্ডের কার্যালয়ে গিয়ে সেনা কর্মকর্তা ও সদস্যদের বন্দি ও জিম্মি করার পাশাপাশি ওই কমান্ডের সঙ্গে সেনাবাহিনীর মূল কমান্ড ও অন্যান্য শাখার কার্যালয়ের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। তার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মোটরসাইকেল ও জীপে করে সীমান্ত পেরিয়ে ইসরায়েলে প্রবেশ করেন হামাসের আরও কয়েক শ’ যোদ্ধা।
গোয়েন্দা তথ্যের ঘাটতি ও পূর্বপ্রস্তুতি না থাকার কারণে হামাসের হামলার পর প্রথম দিকে খানিকটা অপ্রস্তুত অবস্থায় ছিল ইসরায়েল। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই যুদ্ধে পূর্ণ শক্তিতে ফিরে আসে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
১৯৫৩ সালের পর এই প্রথম এত বড় মাত্রার যুদ্ধ হচ্ছে আল আকসা অঞ্চলে। ইসরায়েলের সরকার ইতোমধ্যে হামাসকে চিরতরে ধ্বংস করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আইডিএফ জানিয়েছে, গত চার দিনে গাজা ভূখণ্ডের অন্তত ২০০ টি ‘লক্ষ্যবস্তু’ ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরায়েলের বিমানবাহিনী। রকেট ও বিস্ফোরক ছোড়ার জন্য এসব লক্ষ্যবস্তু ব্যবহার করত হামাস।
শনিবার ভোররাত থেকে শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত যুদ্ধে উভয়পক্ষে নিহত হয়েছেন অন্তত ২ হাজার ৩০০ জন এবং আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৮ হাজারেরও বেশি। নিহত ও আহতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী, শিশু ও বেসামরিক লোকজন রয়েছেন।