অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হামাসের সাথে যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্ত এলাকায় হামলার পরিমাণ বৃদ্ধি করেছে ইরান-সমর্থিত লেবাননের শক্তিশালী সশস্ত্রগোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে দ্বিতীয় যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে ওঠার শঙ্কা তৈরি হয়েছে লেবানন-ইসরায়েল সীমান্ত। লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের সীমান্ত এলাকা থেকে প্রত্যেক দিনই উত্তর ইসরায়েলে রকেট, ক্ষেপণাস্ত্র এবং গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে।
শনিবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভাষা, ধর্ম এবং সুরক্ষিত বেড়ায় বিভক্ত হওয়া সত্ত্বেও ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তের উভয়পাশের বাসিন্দারা ব্যাপক অস্থিতিশীলতার মুখোমুখি হয়েছেন। সীমান্ত এলাকায় ক্রমবর্ধমান সহিংসতার কারণে উভয়পাশের হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক তাদের বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় খুঁজতে বাধ্য হয়েছেন।
হামাস নিয়ন্ত্রিত ইসরায়েলের দক্ষিণে অবস্থিত গাজা উপত্যকার চারপাশে দুই সপ্তাহ আগে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে সীমান্তে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এবং লেবাননের হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদের মাঝে টানা সংঘর্ষ চলছে। এখন পর্যন্ত সীমান্তের পার্শ্ববর্তী কিছু এলাকায় হামলা-পাল্টা হামলা সীমিত থাকলেও শিগগিরই তা বিস্তৃত রূপ ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলেছে, উত্তর ইসরায়েলে লেবানন থেকে প্রতিনিয়ত রকেট, ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর সদস্যরা পাল্টা হামলা চালিয়ে এর জবাব দিচ্ছে। স্থানীয় সময় শনিবার বিকেলের দিকে উত্তর ইসরায়েলের মারগালিওট এলাকায় লেবানন থেকে ট্যাংক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।
লেবাননের যে স্থান থেকে এই ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে, সেই স্থান লক্ষ্য করে আইডিএফ ড্রোন হামলা চালানোর দাবি করেছে। আইডিএফ বলছে, পৃথক এক ঘটনায় লেবানন থেকে ইসরায়েলের হানিতা এলাকায় আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে।
এছাড়া লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্ত থেকে ইসরায়েলের মাউন্ট ডোভ এলাকায় একটি রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছে শনিবার। ইসরায়েলি বাহিনী পাল্টা গোলাবর্ষণ করে রকেট হামলার জবাব দিয়েছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।
তবে লেবানন থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেটের আঘাতে ইসরায়েলে কোনও হতাহত কিংবা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কি না তাৎক্ষণিকভাবে তা জানায়নি ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী। আইডিএফের প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী লেবাননের ভেতরের একটি এলাকায় ড্রোন হামলা চালিয়ে সেখানকার স্থাপনা ধ্বংস করে দিচ্ছে।
এদিকে, শনিবার উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্ত পরিদর্শনে গিয়ে সৈন্যদের সাথে আলাপকালে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত বলেছেন, যুদ্ধে যোগদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে হিজবুল্লাহ এবং এ জন্য চড়া মূল্য দিচ্ছে লেবাননের সশস্ত্র এই গোষ্ঠী। তবে আমাদের যেকোনো সম্ভাবনার জন্য অবশ্যই প্রস্তুত থাকতে হবে। সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।
গত ৭ অক্টোবর অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। দুই সপ্তাহ ধরে চলমান এই যুদ্ধে ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৩৮৫ ফিলিস্তিনি নিহত ও আরও ১৩ হাজার ৫৬১ জন আহত হয়েছেন। আর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে প্রাণহানির সংখ্যা ১ হাজার ৪০০ জনে পৌঁছেছে। এছাড়া এই যুদ্ধে ইসরায়েলের ৩০৭ সৈন্য নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আইডিএফ।
যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে প্রত্যেকদিন হামলা চালিয়ে আসছে ইরান-সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্রগোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর সাথে সংঘাতে গত দুই সপ্তাহে হিজবুল্লাহর অন্তত ১৩ সদস্য নিহত হয়েছেন। হামাসের সাথে ইসরায়েলের যুদ্ধে হিজবুল্লাহ যোগ দিলে তা ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে যুদ্ধের নতুন ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা।