জাতিসংঘের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর সংস্থা নিরাপত্তা পরিষদে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ফের যুদ্ধবিরতি ঘোষণার প্রস্তাব উত্থাপন করেছে সংস্থার অন্যতম অস্থায়ী সদস্য সংযুক্ত আরব আমিরাত। শুক্রবার প্রস্তাবটির খসড়া উত্থাপন করা হয়েছে।
নিরাপত্তা পরিষদে কোনো খসড়া প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার ক্ষেত্রে স্থায়ী সদস্যগুলোর ভোটের প্রয়োজন পড়ে না। তবে পাস হওয়ার ক্ষেত্রে পড়ে।
এই মুহূর্তে আমিরাতের খসড়া প্রস্তাব গৃহীত হলেও তা পাস হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। কারণ শুক্রবারের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি বলেছে, এই মুহূর্তে গাজা উপত্যকায় নিরাপত্তা পরিষদের কোনো পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করবে না।
প্রসঙ্গত নিরাপত্তা পরিষদের ৫ স্থায়ী সদস্যের মধ্যে চীন ও রাশিয়া গাজায় যুদ্ধবিরতির পক্ষে থাকলেও অপর তিন রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স তার বিরুদ্ধে। এই তিন দেশের বক্তব্য, গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হলে তা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের জন্য লাভজনক হবে।
তবে শুক্রবারের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র আমিরাতকে পরামর্শ দিয়ে বলেছে, দেশটি যদি তার প্রস্তাবে গাজায় যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার নিন্দা জানায়, সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এই প্রস্তাবকে সমর্থনের ব্যাপারটি বিবেচনা করবে।
শুক্রবারের প্রস্তাবে মূলত দুটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করেছে আমিরাত— (১) আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সব বেসামরিক লোকজনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং (২) শিগগির এবং শর্তহীনভাবে সব জিম্মিকে মুক্ত করতে হবে।
গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েলের ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালানোর পর ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। পরে ১৬ অক্টোবর থেকে অভিযানে যোগ দেয় স্থল বাহিনী।
ইসরায়েলি বাহিনীর টানা দেড় মাসের অভিযানে কার্যত ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা, নিহত হয়েছেন ১৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। নিহত এই ফিলিস্তিনিদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা ১২ হাজারেরও বেশি।
অন্যদিকে, হামাস যোদ্ধাদের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছিলেন ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিক। পাশাপাশি, ইসরায়েলের ভূখণ্ড থেকে ২৪২ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিকদের ধরে নিয়ে গিয়েছিল হামাস যোদ্ধারা।
দেড় মাসেরও বেশি সময় যুদ্ধের পর অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে নতি স্বীকার করে গত ২৫ নভেম্বর অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ এবং হামাস। গত নভেম্বরের মাঝামাঝি যুদ্ধের অন্যতম মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতারের মাধ্যমে ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা বরাবর একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছিল হামাসের হাইকমান্ড।
সেই প্রস্তাবে গোষ্ঠীটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ইসরায়েল যদি গাজা উপত্যকায় চার দিনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে, রাফাহ ক্রসিংয়ে অপেক্ষারত ত্রাণ, জ্বালানি ও মানবিক সহায়তা পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে প্রবেশ করতে দেয় এবং ইসরায়েলি কারাগারগুলো থেকে অন্তত ১৫০ জন বন্দিকে মুক্তি দেয়, তাহলে নিজেদের হাতে থাকা জিম্মিদের মধ্যে থেকে ৫০ জনকে ছেড়ে দেবে হামাস।
সেই প্রস্তাব মেনে নিয়ে ২৫ নভেম্বর চার দিনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে ইসরায়েল। পরে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার, মিসর, ইউরোপ ও অন্যান্য মধ্যস্থতাকারীদের তৎপরতায় যুদ্ধবিরতির মেয়াদ আরও তিন দিন বাড়ানো হয়।
যুদ্ধবিরতির ৭ দিন ২৫-৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ৯৪ জন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। বিপরীতে ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগার থেকে ১৮০ জনকে ছেড়ে দিয়েছে ইসরায়েলও।
১ ডিসে্বের ভোর থেকে হামাস ও ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা-পাল্টা হামলার মধ্যে দিয়ে শেষ হয় এক সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি।