পোলিশ জনগণকে আর কখনও ‘অপমান’ না করতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে সতর্ক করে দিয়েছেন পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, পোলদের আর কখনও ‘অপমান’ করবেন না।
ইউক্রেনীয় শস্য আমদানি ঘিরে কূটনৈতিক বিরোধের মধ্যেই এই মন্তব্য করলেন পোলিশ প্রধানমন্ত্রী। অবশ্য এই দুই দেশের মধ্যকার উত্তপ্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করছেন পোলিশ প্রেসিডেন্ট।
শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স এবং সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
টানা দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালাচ্ছে রাশিয়া। রুশ এই আগ্রাসন মোকাবিলায় এবং একইসঙ্গে মস্কোর সেনাদের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলা চালাতে কিয়েভকে অস্ত্র সরবরাহ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্রসহ মিত্র ইউরোপীয় দেশগুলো। এমনকি প্রতিবেশী পোল্যান্ডও ছিল ইউক্রেনকে অস্ত্র সরকরাহকারী দেশের তালিকায়।
তবে ইউক্রেনের অন্যতম কট্টর মিত্র বলে পরিচিত এই দেশটির সঙ্গে ইউক্রেনীয় শস্য আমদানির ইস্যুতে পোল্যান্ডের উত্তেজনা চলছে। এমনকি দিন দু’য়েক আগে কিয়েভকে আর অস্ত্র সরবরাহ না করার ঘোষণাও দিয়েছে দেশটি।
রয়টার্স বলছে, পোল্যান্ড গত সপ্তাহে ইউক্রেনের শস্য আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। আর এটিই ওই প্রতিবেশীর সাথে কিয়েভের সম্পর্ককে তলানিতে নিয়ে যায়। এছাড়া নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে জেলেনস্কি বলেন, ইউরোপে ইউক্রেনের কিছু বন্ধু যেভাবে (রাশিয়ার সঙ্গে) সংহতি প্রদর্শন করছে তা উদ্বেগজনক। তারা ‘রাজনৈতিক মঞ্চে- শস্য নিয়ে একটি রোমাঞ্চকর নাটক তৈরি করেছে’।
ওয়ারশ তার এই মন্তব্যের ক্ষুব্ধ হয় এবং নিন্দা জানিয়ে বলে, ‘পোল্যান্ডকে নিয়ে অযৌক্তিক মন্তব্য করা হয়েছে যারা কিনা যুদ্ধের প্রথম দিন থেকে ইউক্রেনকে সমর্থন করে আসছে।’
পরে ওয়ারশতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূতকে তলব করার পাশাপাশি এখন থেকে আর অস্ত্র না পাঠানোর ঘোষণা দেওয়া হয়।
এই পরিস্থিতিতে পোলিশ প্রধানমন্ত্রী মাতেউস মোরাউইকি শুক্রবার একটি নির্বাচনী সমাবেশে বলেন, ‘আমি... প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে বলতে চাই, যেন তিনি আর কখনও পোলিশ জনগণকে অপমান না করেন, যেমনটি তিনি সম্প্রতি জাতিসংঘে তার বক্তৃতার সময় করেছিলেন।’
রয়টার্স বলছে, পোল্যান্ডে আগামী ১৫ অক্টোবর সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং সেই নির্বাচনের আগে নিজেদের ইউক্রেন নীতি নিয়ে মোরাউইকির ক্ষমতাসীন জাতীয়তাবাদী আইন ও বিচার (পিআইএস) পার্টি ডানপন্থিদের কাছ থেকে সমালোচনার মুখে পড়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পিআইএস আগামী নির্বাচনে সবচেয়ে বড় দল হিসেবে টিকে থাকতে পারলেও হয়তো বা সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারবে না। আর এটিই আসন্ন নির্বাচনী লড়াইয়ের আগে কিয়েভ ইস্যুতে আরও কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে পিআইএসকে বাধ্য করেছে।
এর আগে শুক্রবার পোলিশ প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ ডুডা বলেন, পোল্যান্ড এবং ইউক্রেনের মধ্যে শস্য আমদানি নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ উভয় দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে না। তার এই কথায় উত্তেজনা কমার আভাস পাওয়া গিয়েছিল।
উল্লেখ্য, কিয়েভ থেকে ইউক্রেনীয় খাদ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের অভিযোগে প্রতিবেশী তিনটি দেশের বিরুদ্ধে গত সপ্তাহে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) কাছে মামলা দায়ের করে ইউক্রেন। ওই তিনটি দেশ হচ্ছে- স্লোভাকিয়া, পোল্যান্ড এবং হাঙ্গেরি।
রুশ আগ্রসনের শিকার কিয়েভের অভিযোগ, ইউক্রেনের ইইউ প্রতিবেশীদের এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতার লঙ্ঘন। অন্যদিকে আমদানি বন্ধ রাখা এসব দেশ বলছে, সস্তায় শস্য আমদানির প্রভাব থেকে নিজেদের কৃষকদের রক্ষা করতে এই নিষেধাজ্ঞার প্রয়োজন ছিল।
মূলত গত বছর ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসনের পর থেকে কৃষ্ণসাগরে জাহাজ চলাচলের প্রধান লেন বন্ধ হয়ে যায় এবং এর জেরে স্থলপথে বিকল্প রুট খুঁজতে বাধ্য হয় ইউক্রেন। এর ফলে মধ্য ইউরোপে প্রচুর পরিমাণে শস্য ঢুকতে থাকে।
আর এর জেরে সেসব দেশের কৃষকরা তখন থেকেই প্রতিবাদ-সমাবেশ করে আসছেন। তাদের অভিযোগ, ইউক্রেনীয় শস্যের চালান তাদের ক্ষতি করছে এবং স্থানীয় বাজারকে ক্ষতির মুখে ফেলে দিয়েছে। এছাড়া নিজেরা আমদানি না করলেও পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি এবং স্লোভাকিয়া এখনও ইউক্রেনীয় শস্য তাদের দেশের ভেতর দিয়ে অন্যান্য বাজারে পরিবহনের অনুমতি দিচ্ছে।
প্রসঙ্গত, রাশিয়ার আগ্রাসন মোকাবিলায় ইউক্রেনকে অনেক সহায়তা দিয়েছে পোল্যান্ড। পোল্যান্ড এরইমধ্যে ইউক্রেনকে ৩২০টি সোভিয়েত যুগের ট্যাংক এবং ১৪টি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান দিয়েছে। মূলত দেশটির কাছে দেওয়ার মতো এখন আর খুব বেশি অস্ত্র নেই।
এছাড়া রুশ আগ্রাসনের জেরে ইউক্রেন থেকে পালিয়ে আসা ১৫ লাখেরও বেশি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে পোল্যান্ড।