ফের হিমালয় অঞ্চলের দেশ নেপালে রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে । সোমবার স্থানীয় সময় বিকেল সোয়া ৪টার দিকে দেশটির পশ্চিমাঞ্চল এই ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে। তিন দিন আগে শক্তিশালী এক ভূমিকম্পে ১৫৭ জনের প্রাণহানির ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই সোমবার আবারও কেঁপে উঠেছে নেপাল। নেপালে আঘাত হানা এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে প্রতিবেশী ভারতেও।
নেপালের জাতীয় ভূমিকম্প কেন্দ্র বলছে, গত শুক্রবার চলতি সপ্তাহের প্রথম ভূমিকম্প আঘাত হানে নেপালের পশ্চিমাঞ্চলে। ওই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ৪। তবে জার্মান রিসার্চ সেন্টার ফর জিওসায়েন্সেস নেপালে আঘাত হানা ভূমিকম্পের মাত্রা ৫ দশমিক ৭ ছিল বলে জানায়। যদিও মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস বলছে, নেপালে গত শুক্রবার যে ভূমিকম্পটি আঘাত হেনেছিল, তার মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৬।
শুক্রবার নেপালে আঘাত হানা ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল দেশটির পশ্চিমাঞ্চলের পার্বত্য জেলা জাজারকোট। জাজারকোটে শুক্রবারের ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন দেশটির কর্মকর্তারা। রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার (৩০০ মাইল) পশ্চিমে ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছাকাছি পার্বত্য এলাকায় এখনও উদ্ধারকারীরা পৌঁছাতে পারেননি বলে জানিয়েছেন তারা।
যে কারণে ওই এলাকায় ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া লোকজনকে জীবিত উদ্ধার করা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। জাজারকোট জেলায় এক লাখ ৯০ হাজার মানুষের বসবাস রয়েছে। দেশটির কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রত্যন্ত এই পাহাড়ি এলাকায় এখনও পুরোপুরি যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।
নেপালের পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ভূমিকম্পে জাজারকোট জেলায় ব্যাপক ভূমিধস হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এই এলাকায় পৌঁছানোর রাস্তাগুলো ধসে গেছে। এর ফলে ওই এলাকায় তল্লাশি ও উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা যাচ্ছে না।
শুক্রবারের ভূমিকম্পে জাজারকোট এবং এর পার্শ্ববর্তী রুকুম জেলায় হাজার হাজার ভবন ধসে পড়েছে। এ ছাড়া আরও অসংখ্য ভবনে ফাটল সৃষ্টি হওয়ায় সেগুলো বসবাসের অনুপযোগী ঘোষণা করা হয়েছে। ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়া লোকজন বলেছেন, ভূমিকম্পের পরপরই তারা ভবন ধসে পড়ার বিকট শব্দ শুনতে পেয়েছিলেন।
স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে জাজারকোটে ইটের তৈরি শত শত বহুতল ভবন ধসে পড়তে দেখা গেছে। অনেক বাড়িঘরের আসবাবপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতেও দেখা যায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে শেয়ার করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কিছু ভবন থেকে বেরিয়ে রাস্তার দিকে ছুটছেন লোকজন।
নেপালে ২০১৫ সালে শক্তিশালী এক ভূমিকম্পে প্রায় ৯ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে। ওই ভূমিকম্পের পর গত শুক্রবার আঘাত হানা ভূমিকম্পটি ছিল সবচেয়ে প্রাণঘাতী। আট বছর আগের ওই ভূমিকম্পে দেশটিতে শতাব্দী প্রাচীন বহু মন্দির, অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থাপনার পাশাপাশি দশ লাখেরও বেশি বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে যায়। নেপালে আঘাত হানা ওই ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমান বলে জানিয়েছিল দেশটির সরকার।