আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলীয় হেরাত প্রদেশে আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে প্রায় আড়াই হাজারে পৌঁছেছে। এছাড়া ভূমিকম্পে আহত ব্যক্তিদের আগের সংখ্যা কমিয়ে সংশোধনী দেওয়া হয়েছে।
গত শনিবার দেশটিতে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার শক্তিশালী ওই ভূমিকম্প আঘাত হানে। সোমবার (৯ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পশ্চিম আফগানিস্তানের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ধারাবাহিক কয়েকটি ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২ হাজার ৪৪৫ জনে দাঁড়িয়েছে বলে দেশটির ক্ষমতাসীন তালেবান প্রশাসন রোববার জানিয়েছে।
গত শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ১১টার দিকে দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় হেরাত প্রদেশে ওই ভূমিকম্প আঘাত হানে। ভূমিকম্পের পর পাঁচটি বড় ধরনের আফটারশক হয়েছে; যার কেন্দ্রস্থল ছিল ওই অঞ্চলের বৃহত্তম শহরের কাছে।
কর্মকর্তাদের মতে, জিন্দা জান ও ঘোরিয়ান জেলার ১২টি গ্রাম সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস)-এর তথ্য অনুসারে, পশ্চিম আফগানিস্তানে ছয়টি ভূমিকম্প হয়েছে এবং যার মধ্যে সবচেয়ে বড়টি ছিল ৬.৩ মাত্রার। সংস্থাটি বলছে, শনিবার আঘাত হানা ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল হেরাত শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে। এই ভূমিকম্পের পর দেশটিতে ৫ দশমিক ৫, ৪ দশমিক ৭, ৬ দশমিক ৩, ৫ দশমিক ৯ ও ৪ দশমিক ৬ মাত্রার পাঁচটি শক্তিশালী আফটারশক অনুভূত হয়।
আফগানিস্তানের দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জনান সায়েক রয়টার্সকে দেওয়া এক বার্তায় বলেছেন, ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২ হাজার ৪৪৫ জনে পৌঁছেছে। তবে আহত ব্যক্তিদের ব্যাপারে আগের দেওয়া সংখ্যা সংশোধন করে তিনি বলেন, ভূমিকম্পে দুই হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
এর আগে আহত ব্যক্তির সংখ্যা ৯২৪০ বলে উল্লেখ করেছিলেন তিনি। সায়েক আরও বলেন, ভূমিকম্পে ১ হাজার ৩২০টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। অবশ্য রেড ক্রিসেন্ট বলেছিল, শনিবারের শক্তিশালী ওই ভূমিকম্পে ৫০০ জন নিহত হয়েছেন। সেখান থেকে তালেবানের দেওয়া এই পরিসংখ্যান অনেকটাই বেশি।
হেরাতের পূর্বাঞ্চলে ১২০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে ইরানের সাথে। এই শহরটিকে আফগানিস্তানের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে মনে করা হয়। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, হেরাত প্রদেশের রাজধানী হেরাত শহরে ১৯ লাখ মানুষ বসবাস করেন।
রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে সায়েক বলেন, ভূমিকম্পের পর দশটি উদ্ধারকারী দল ইরানের সীমান্তবর্তী ওই এলাকায় অবস্থান করছে।
এছাড়া সিনিয়র তালেবান নেতা ও তালেবানের কাতারভিত্তিক মুখপাত্র সুহেল শাহীন আল জাজিরাকে বলেছেন, এখনও অনেক লোক নিখোঁজ রয়েছেন এবং ধ্বংসাবশেষে আটকে পড়া লোকদের উদ্ধারে অভিযান চলছে। দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে খাবার পানীয়, ওষুধ, কাপড়, তাঁবু, চিকিৎসা এবং খাদ্য সামগ্রীর জরুরি প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।
আর এ কারণে তিনি স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং এনজিওগুলোকে সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
রয়টার্স বলছে, পাহাড়ে ঘেরা আফগানিস্তানে শক্তিশালী ভূমিকম্পের ইতিহাস রয়েছে। এর আগে গত বছরের জুনে আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশে ৫ দশমিক ৯ মাত্রার এক ভূমিকম্পে এক হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে। গত কয়েক দশকের মধ্যে আফগানিস্তানে সেটিই সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্প ছিল বলে সেই সময় জানায় দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া চলতি বছরের মার্চে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্ত এলাকায় সাড়ে ৬ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এই ভূমিকম্পে দুই দেশে অন্তত ১৩ জন নিহত হন।
মূলত হিন্দুকুশ পর্বতমালা ও ইউরেশীয়-ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলের কাছে অবস্থান হওয়ায় প্রায়ই ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে আফগানিস্তান।