Date: December 27, 2024

দৈনিক বজ্রশক্তি

Header
collapse
...
Home / আন্তর্জাতিক / মাথায় গুলিতে হামাস নেতার মৃত্যু, আঙুল কেটে ডিএনএ পরীক্ষা

মাথায় গুলিতে হামাস নেতার মৃত্যু, আঙুল কেটে ডিএনএ পরীক্ষা

October 19, 2024 06:03:19 AM   আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মাথায় গুলিতে হামাস নেতার মৃত্যু, আঙুল কেটে ডিএনএ পরীক্ষা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ইসমাইল হানিয়ার পর ফিলিস্তিনি মুক্তিকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের হাল ধরা ইয়াহিয়া সিনওয়ার নিহত হয়েছেন বন্দুকের গুলিতে। আর গুলিটি লেগেছিল তার মাথায়।
সিনওয়ারের মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করা চিকিৎসকের বরাত দিয়ে এমন তথ্য দিয়েছে সিএনএন।
গত বুধবার দক্ষিণ গাজার একটি ভবনে ইসরায়েলি সেনাদের অভিযানে নিহত হন সিনওয়ার। প্রথম নিশ্চিত না করলেও মৃতদেহের ডিএনএ পরীক্ষার পর ইসরায়েল এই হামাস নেতার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে।
ডিএনএ পরীক্ষার জন্য সিনওয়ারের হাতের একটি আঙুলও কাটতে হয়েছিল।
তেল আবিবে অবস্থিত ইসরায়েলের ন্যাশনাল সেন্টার অব ফরেনসিক মেডিসিনের চিকিৎসক শেন কুগেল বলেছেন, সিনওয়ারের শরীরে ট্যাংকের গোলা কিংবা অন্য কোনো ক্ষেপনাস্ত্রে মারাত্মক আঘাতও ছিল।
কিন্তু মাথায় লাগা গুলিতেই হামাস নেতার মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এই চিকিৎসক।
এর আগে অবশ্য ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছিল, ঘটনার সময় সিনওয়ার যে ভবনটিতে অবস্থান করছিলেন, সেটি লক্ষ্য করে দাগানো ট্যাংকের গোলার আঘাতে আহত হয়েছিলেন তিনি। সেখানে সেনারা গুলি। চালিয়েছিল কি না তা জানায়নি সেনাবাহিনী।
সিনওয়ারের মৃত্যুসনদে সই করা ডা. কুগেল বলেছেন, “(সিনওয়ারের) মৃত্যুর কারণ মাথায় গুলির আঘাত। তার মাথায় একটি বুলেট ছিল এবং এতে মারাত্মক রক্তক্ষরণ হয়েছিল।”
চিকিৎসকের এমন ভাষ্যের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) মুখপাত্র ঘটনাস্থলে গোলাগুলি হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
তার দাবি, ট্যাংক থেকে গোলা ছোড়ার মাধ্যমে সেখানে বন্দুকযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।
ডা. কুগেল বলেছেন, সিনওয়ারের মৃতদেহ পরীক্ষায় যেসব তথ্য পেয়ছেন, সে ব্যাপারে তিনি আত্মবিশ্বাসী। ময়নাতদন্তের পরই তিনি সিনওয়ারের মৃত্যুর বিষয়ে ইসরায়েল সেনাবাহিনীর বক্তব্য জানতে পেরেছেন বলে দাবি করেছেন।
“আমি মৃতেদেহে কী কী পেয়েছি তার ওপর ভিত্তি করেই এটি (ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন) তৈরি করা হয়েছে। তার শরীরে আরও অনেক ধরনের আঘাত ছিল, যেমন ডান বাহুতে গোলার আঘাত, বাম পা কিংবা উরুর ওপর ইট-পাথরের আঘাত, পুরো শরীরে অনেক শার্পনেলের ক্ষত ছিল, কিন্তু বুকে শুধু একটি শার্পনেল ছিল। এসব আঘাতে তার পুরো শরীর বিধ্বস্ত হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু মৃত্যুর কারণ মাথায় লাগা ওই গুলিটিই।”
সিনওয়ারের মৃত্যুর সম্ভাব্য সময় জানতে চাইলে এই চিকিৎসক বলেছেন, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে মৃতদেহ যখন হাসপাতালে নেওয়া হয়, তার অন্তত ২৪ ঘণ্টা আগে বুধবার শেষ বিকালের দিকে তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে।
ডিএনএ পরীক্ষার জন্য কাটা হয় আঙুল
বুধবার যখন ইসরায়েলি বাহিনী সিনওয়ারের মতো দেখতে একটি মৃতদেহ খুঁজে পায়, তখন তার আঙুল কেটে শনাক্ত করার জন্য ডিএনএ পরীক্ষায় পাঠায়।
সিনওয়ার ইসরায়েলের কারাগারে বন্দী থাকার সময় তার যে প্রোফাইল ছিল তার প্রসঙ্গ টেনে ডা. শেন কুগেল বলেন, “ল্যাবরেটরি প্রোফাইল তৈরি করার পরে, আমরা সেটিকে সিনওয়ারের আগের প্রোফাইলের সঙ্গে তুলনা করেছি। আমরা শেষ পর্যন্ত ডিএনএ দ্বারা তাকে শনাক্ত করতে পারি।"
২০১১ সালে বন্দী বিনিময়ের অংশ হিসেবে মুক্তি পাওয়ার আগে সিনওয়ার ইসরায়েলি কারাগারে দুই দশকেরও বেশি সময় আটক ছিলেন।
কুগেল বলেছেন, তারা প্রথমে সেনাদের তোলা ছবিগুলোর সাথে তার দাঁতের মিল খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তা পরিচয় শনাক্তে যথেষ্ট ছিল না।
পরিচয় শনাক্ত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে সিনওয়ারের মৃতদেহ ফরেনসিক সেন্টারে নেওয়া হয়, যেখানে সম্পূর্ণ ডিএনএ পরীক্ষা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তারা শতভাগ নিশ্চিত ছিল যে লাশটি হামাস নেতার, বলেন কুগেল।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সিনওয়ারের মৃতদেহের যেসব ছবি ও ভিডিও আগে-পরে এসেছে সিএনএন সেসব যাচাই করে দেখেছে, প্রথমে তার বাম হাতে পাঁচটি আঙুল দেখা গেলেও পরে একটি অনুপস্থিত দেখা গেছে।
যেখানে অভিযান চালিয়ে সিনওয়ারকে হত্যা করা হয়, প্রাথমিকভাবে পাওয়া সেখানকার কিছু ছবি সিএনএন বিশ্লেষণ করে সামরিক পোশাক পরা একজন মৃত ব্যক্তির বাম হাতে ঘড়ি ও মাথায় স্কার্ফ পরা অবস্থায় দেখতে পেয়েছে। যা সিনওয়ার সম্পর্কে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দেওয়া বর্ণনার সাথে মিলে যায়। ওই ব্যক্তির মাথায় আঘাত এবং ডান হাতও ক্ষতবিক্ষত দেখা গেছে।
পরবর্তীতে আবার যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, তখন ওই ব্যক্তির হাত ঘড়ি, সামরিক পোশাক আর স্কার্ফ আর দেখা যায়নি। বাম হাতের একটি আঙুলও ছিল না।
মৃতদেহ নিয়ে দর কষাকষি?
হামাসের হাত থেকে বন্দী জিম্মিদের মুক্ত করতে ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃতদেহ ‘দর কষাকষির’ একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে বলে ইসরায়েলের সূত্র নিশ্চিত করেছে সিএনএনকে।
সিনওয়ারের দেহাবশেষ বর্তমানে ইসরায়েলের একটি গোপন স্থানে রাখা হয়েছে।
অন্তত দুটি সূত্র সিএনএনকে বলেছে, সিনওয়ারের মৃতদেহের বিনিময়ে কীভাবে জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করা যায়, সেটিই সম্ভবত এখন ইসরায়েলে অগ্রাধিকার দেবে।
গত বছর ইসরায়েলের হামলা চালিয়ে হামাসের যোদ্ধারা ১২০০ মানুষ হত্যার পর ২৫০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে গিয়েছিল। ওই হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে মনে করা হতো সিনওয়ারকে।
হামাসের হাতে এখনো শতাধিক জিম্মি আটক রয়েছে বলে ধারণা ইসরায়েলের।

একটি ইসরায়েলি সূত্র জানিয়েছে, দেশটির কর্তৃপক্ষ জিম্মিদেরকে মুক্ত করতে হামাসের ওপর কীভাবে ‘দ্রুত চাপ তৈরি’ করা যায় তা বিবেচনা করছে।
"যদি হামাস তার (সিনওয়ার) মৃতদেহের বিনিময়ে তাদেরকে (জিম্মি) মৃত বা জীবিত ফেরত দিতে চায়, তাহলে ভালো,” ভাষ্য একটি ইসরায়েলি কূটনৈতিক সূত্রের।
হামাস নেতা সিনওয়ারের মৃতদেহ জিমির মুক্তির ক্ষেত্রে দর কষাকসষির ভালো একটি উপায় হতে পারে বলে মনে করে দুটি সূত্রই।
জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়েই শুধু সিনওয়ারের মৃতদেহ গাজায় ফেরত দেওয়া হবে, অন্যথ্যায় নয়, এমনটাই দাবি করেছে একটি সূত্র।
তবে আরেকটি কূটনৈতিক সূত্রের মতে, সিনওয়ারের মৃতদেহ গাজায় ফেরত দিলে হামাস সমর্থকদের সেখানে জড়ো হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তাছাড়া সিনওয়ারকে গাজায় সমাধিস্থ করা হলেও সেটিও তার অনুসারীদের জন্য তীর্থে পরিণত হতে পারে।
সিনওয়ারকে হত্যার পর ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্ত করার যে সুযোগ এসেছে, তার বিভিন্ন সম্ভাব্য উপায় নিয়ে শুক্রবার বৈঠকও করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবয় প্রেসডেন্ট আইজ্যাক হারজগ।
এর আগের দিন নেতানিয়াহু জিম্মিদের মুক্তি দিয়ে অস্ত্র সমর্পণ করতে হামাস সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, যারা এটি করবে তাদের ‘সরে যেতে যেতে এবং বাঁচার সুযোগ’ দেওয়া হবে।
সিনওয়ারের দেহরক্ষীও নিহত
সিনওয়ারের দেহরক্ষী মাহমুদ হামদান আবু ইউসুফ শুক্রবার নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে হামাস এবং ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
আবু ইউসুফ গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহর তাল-আল সুলতান ব্রিগেডের কমান্ডার ছিলেন।
শুক্রবার আবু ইউসুফকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে আইডিএফ।
সিনওয়ারকে যেখানে হত্যা করা হয়েছে তার থেকে ২০০ মিটার দূরত্বের একটি স্থানে সেনাদের সঙ্গে গোলাগুলিতে তিনি নিহত হন বলে দাবি করেছে আইডিএফ।
তবে কখন ঘটনাটি ঘটেছে তা জানায়নি ইসরায়েল।