মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন সামরিক জান্তা সরকার যুদ্ধে হারছে বলে মন্তব্য করেছেন পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট হোসে রামোস-হোর্তা। তিনি বলেছেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির সরকার বর্তমানে দেশটির মাত্র ৩০ শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে।
একইসঙ্গে মিয়ানমারের সামরিক সরকারবিরোধী ছায়া সরকার বলে পরিচিত ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টকেও (এনইউজি) স্বীকৃতি দিয়েছেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতী।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেসামরিক জাতীয় ঐক্য সরকারকে (এনইউজি) মিয়ানমারের সরকারি প্রশাসন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট হোসে রামোস-হোর্তা বলেছেন, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এই যুদ্ধে জিতছে না।
সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে তিনি বলেছেন, ‘মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এই যুদ্ধে জিতছে না। তারা দেশের মাত্র ৩০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। জনগণ এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে লড়াই চলছে। এবং সামরিক বাহিনী এই যুদ্ধে জিতবে না।’
এর আগে গত জুলাই মাসে রাজধানী দিলিতে এনইউজি-এর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড জিন মার অং-এর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন প্রেসিডেন্ট হোসে রামোস-হোর্তা। আর সেই বৈঠকের পর মিয়ানমারের জান্তা গত মাসে দেশ থেকে পূর্ব তিমুরের শীর্ষ কূটনীতিককে বহিষ্কার করে।
এছাড়া পূর্ব তিমুর গত বছর অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান) এ যোগ দিতে নীতিগতভাবে সম্মত হয়। যদিও ব্লকের অন্য নয়টি বিদ্যমান সদস্যের কেউই আনুষ্ঠানিকভাবে এনইউজিকে স্বীকৃতি দেয়নি।
পূর্ব তিমুরের প্রধানমন্ত্রী জানানা গুসমাও বলেছেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ৯টি দেশের এই জোট যদি মিয়ানমারে চলমান সংঘাত অবসানের প্রচেষ্টা নতুন করে শুরু না করে তবে আসিয়ানে যোগদানের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে পারে পূর্ব তিমুর।
এর আগে অবশ্য মিয়ানমার সংকটের অবসান ও দেশটিতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় পাঁচ দফা প্রস্তাবে একমত হয়েছিল আসিয়ান জোটভুক্ত দেশগুলো। প্রেসিডেন্ট রামোস-হোর্তা বলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে পাঁচ দফা ঐকমত্যের মধ্যে থাকা অঙ্গীকার পূরণে আসিয়ান দেশ ও বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যর্থতার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী গুসমাও তার এবং আমাদের হতাশা প্রকাশ করছেন।
কাতারভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম আল জাজিরাকে প্রেসিডেন্ট রামোস-হোর্তা বলেন, ‘মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী তাদের নিজের দেশ, তাদের নিজস্ব জনগণ এবং আসিয়ানের বিশ্বাসযোগ্যতার যে বিশাল ক্ষতি করছে, তা (মিয়ানমারের জান্তা) এখনও অনুধাবন করতে পারছে না।’
তিনি বলেন, পূর্ব তিমুর মিয়ানমারের সমস্যা মোকাবিলায় ব্লককে সহায়তা করার জন্য আসিয়ানের সাথে কাজ করবে। কারণ আসিয়ান নেতারা অতীতে এই অঞ্চলে সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা আনতে সক্ষম হয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘আমি আত্মবিশ্বাসী, তারা শেষ পর্যন্ত মিয়ানমারে চলমান পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে সক্ষম হবে।’
উল্লেখ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমার ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে অশান্তির মধ্যে রয়েছে। সেসময় দেশটির সামরিক বাহিনী সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে এবং সামরিক শাসনের বিরোধীদের ওপর ভয়াবহ দমনপীড়ন চালায়। এতে বহু মানুষ নিহত হয় এবং আরও হাজার হাজার মানুষকে বন্দি করা হয়।
মূলত সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অং সান সুচির নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করার পর গণতন্ত্রের দাবিতে রক্তাক্ত সংগ্রামে লিপ্ত হয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী।
এর আগে গত আগস্ট মাসে মিয়ানমারের ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি) জানিয়েছিল, ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে নিজেদের সশস্ত্র শাখা এবং বিদ্রোহী মিত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সংঘর্ষের সময় মিয়ানমারের ৩ হাজার ১২ জন জান্তা সৈন্য নিহত এবং আরও ৪ হাজার ২১ জন সেনা আহত হয়েছেন।
দ্য ইরাবতী সেসময় জানায়, পিডিএফ এবং ইএও গোষ্ঠীগুলো সরকারি লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ অব্যাহত রাখার কারণে জান্তা সরকার ও বাহিনী এখন প্রতিদিনই ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এছাড়া গত জুনের শেষের দিক থেকে শান এবং কাচিন প্রদেশে আরও অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টায় ক্রমবর্ধমান হামলাও চালিয়ে যাচ্ছে এসব গোষ্ঠী।