উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন রাশিয়ায় পৌঁছেছেন ওয়াশিংটনের সতর্কতার মধ্যে। গতকাল(১২ সেপ্টেম্বর) জাপানি মিডিয়া এই তথ্য জানিয়েছে। ক্রেমলিন বলেছে, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে (কিমের বৈঠকে) ব্যাপক আলোচনা হবে।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, এই দুই দেশের অস্ত্র চুক্তিতে একমত হওয়া উচিত নয়। মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিম জং উন গত রোববার তার ব্যক্তিগত ট্রেনে রাশিয়ার উদ্দেশ্যে পিয়ংইয়ং ত্যাগ করেন বলে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম মঙ্গলবার জানিয়েছে। কিমের এই সফরে অস্ত্র শিল্প ও সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীও রয়েছেন।
জাপানের কিয়োডো নিউজ এজেন্সি মঙ্গলবার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাশিয়ান সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, কিমকে বহনকারী ট্রেনটি উত্তর কোরিয়া থেকে রাশিয়ার সুদূর পূর্বের প্রধান রেল গেটওয়ে খাসান স্টেশনে পৌঁছেছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, কিম জং উন মঙ্গলবার ভোরে রাশিয়ায় প্রবেশ করেছেন বলে তারা বিশ্বাস করেন।
রয়টার্স বলছে, কিম ঘন ঘন বিদেশ ভ্রমণ করেন না। নিজের ১২ বছরের ক্ষমতায় কিম তার দেশ থেকে মাত্র সাতবার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন এবং দুইবার আন্তঃকোরিয়ান সীমান্ত অতিক্রম করেছেন। এর মধ্যে চারটি সফর ছিল উত্তর কোরিয়ার প্রধান রাজনৈতিক মিত্র চীনে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ‘এটি পূর্ণাঙ্গ সফর হবে। দুটি প্রতিনিধি দলের মধ্যে আলোচনা হবে এবং এরপরে প্রয়োজনে নেতারা একের পর এক ফরম্যাটে তাদের যোগাযোগ অব্যাহত রাখবেন।’
এদিকে খাসান প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা কিমের সেখানে পৌঁছানোর খবরে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য কিমের এই ধরনের সফরকে আসন্ন বলেছিল এবং মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে অস্ত্র আলোচনা সক্রিয়ভাবে অগ্রসর হচ্ছে। এছাড়া কিম এবং পুতিন সম্ভবত ইউক্রেনের যুদ্ধের জন্য রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করার বিষয়েও আলোচনা করবেন।
রাশিয়ার বার্তাসংস্থা তাস জানিয়েছে, পুতিন সোমবার ভ্লাদিভোস্তক শহরে পৌঁছেছেন। সেখানে চলমান ইস্টার্ন ইকোনমিক ফোরামের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে তার।
পেসকভ বলেছেন, কিমের সাথে পুতিনের বৈঠক ফোরামের পরে অনুষ্ঠিত হবে।
অন্যদিকে বৈঠকের পর এই দুই নেতার সংবাদ সম্মেলনের কোনও পরিকল্পনা নেই বলে একাধিক রুশ বার্তাসংস্থা জানিয়েছে। অবশ্য বৈঠকের স্থান বা কিম অর্থনৈতিক ফোরামের বৈঠকে যোগ দেবেন কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ইউক্রেনে ১৮ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলমান যুদ্ধে রাশিয়া তার মজুত অস্ত্রের বিশাল অংশ ব্যয় করে ফেলেছে এবং অস্ত্রের পর্যাপ্ত সরবরাহ ঠিক রাখতে মস্কো উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র নিতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছ।
এছাড়া রাশিয়া এবং উত্তর কোরিয়ার মধ্যে ঘনিষ্ঠ সামরিক সহযোগিতার সাম্প্রতিক যেসব লক্ষণ দেখা যাচ্ছে তাতে ওয়াশিংটন এবং তার মিত্ররা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
তবে পেসকভ বলেছেন, রাশিয়ার জাতীয় স্বার্থ নির্ধারিত হয় মস্কোর নীতির মাধ্যমে। তার ভাষায়, ‘উত্তর কোরিয়াসহ প্রতিবেশীদের সাথে আমাদের সম্পর্ক বাস্তবায়নের সময় দুই দেশের স্বার্থ আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ, ওয়াশিংটনের সতর্কতা নয়।’
উল্লেখ্য, রাশিয়ার কাছে অস্ত্র বিক্রি করলে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের পাশাপাশি বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞাগুলো ‘আক্রমণাত্মকভাবে’ কার্যকর করার হুমকিও দিয়েছে দেশটি।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা করতে উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন রাশিয়া সফরে গেছেন এবং এর মধ্যেই এই হুমকি দেয় ওয়াশিংটন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার সোমবার বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানে সহায়তাকারী সকলকে ‘জবাবদিহি’ করতে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র।
মিলার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি উভয় দেশকেই মনে করিয়ে দেবো- উত্তর কোরিয়া থেকে রাশিয়ায় অস্ত্র হস্তান্তর করা হবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একাধিক প্রস্তাবের লঙ্ঘন। অবশ্যই, আমরা আক্রমণাত্মকভাবে রাশিয়ার যুদ্ধ প্রচেষ্টায় অর্থায়নকারী সকল পক্ষের বিরুদ্ধে আমাদের নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রয়োগ করেছি এবং আমরা সেই নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রয়োগ করতে থাকব এবং প্রয়োজন হলে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতেও দ্বিধা করব না।