রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য ফাঁসের অভিযোগে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এবং তার রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের (পিটিআই) ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মেহমুদ কুরেশিকে অভিযুক্ত করেছেন পাকিস্তানের একটি বিশেষ আদালত।
বুধবার রাজধানী ইসলামাবাদের ওই বিশেষ আদালতের বিচারক আবু আল হাসনাত জুলকারনাইন পিটিআইয়ের শীর্ষ দুই নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ।
তবে আদালতের শুনানিতে ইমরান ও কুরেশির আইনজীবীরা দাবি করেছেন, তাদের মক্কেলরা নির্দোষ এবং ‘বিশেষ মহলের’ চক্রান্তের শিকার।
গোপন তথ্য ফাঁস (সাইফারগেট) মামলা
ইমরানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় তথ্য ফাঁস সংক্রান্ত বিতর্ক শুরু হয় ২০২২ সালের ২৭ মার্চ, তার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদ হারানের প্রায় ২ সপ্তাহ আগে। ওই দিন একটি জনসভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় একটি চিঠি দেখিয়ে ইমরান খান বলেছিলেন, তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা বাইরের দেশের সরকারের সঙ্গে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে মেতেছেন এবং এই চিঠিতে তার প্রমাণ রয়েছে।
জনসভায় চিঠিটি পড়েননি ইমরান, কিংবা চিঠিতে কী রয়েছে— সে সম্পর্কিত কোনো ইঙ্গিতও দেননি।
কিন্তু এপ্রিলের ১০ তারিখ বিরোধী এমপিদের অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার কয়েকদিন পর এক জনসভায় ইমরান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিভাগের প্রধান ডোনাল্ড লু’র সঙ্গে সেই দেশের পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের একটি বৈঠক হয়েছিল এবং সেই বৈঠকে ইমরান খানকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতকে প্রস্তাব করেছিলেন তিনি।
ইমরানের ভাষ্যমতে, লু বলেছিলেন— ইমরান খানকে যদি ক্ষমতাচ্যুত করা হয়, তাহলে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএলএন) চেয়ারম্যান নওয়াজ শরিফসহ দলের অন্যান্য জেষ্ঠ্য নেতাদের বিরুদ্ধে যেসব দুর্নীতির অপরাধ আদালতে বিচারধীন রয়েছে, সেগুলো মিটিয়ে দেওয়া হবে।
তবে যুক্তরাষ্ট্র এই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করায় ব্যাপারটি সেখানেই থেমে গিয়েছিল।
ইমরান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন পিএমএলএনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং নওয়াজ শরিফের ছোটভাই শেহবাজ শরিফ। তিনিও দীর্ঘ সময় ব্যাপারটিতে গুরুত্ব দেননি।
কিন্তু ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেয় চলতি বছর সেপ্টেম্বরে, ইমরান খান, পিটিআইয়ের ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মুহম্মদ কুরেশি এবং সেক্রেটারি জেনারেল আসাদ ওমরের দু’টি অডিও টেপ ফাঁসের পর। সেই অডিও টেপে এই তিনজনকে এই মর্মে আলোচনা করতে শোনা যায় যে, ওই চিঠিটি থেকে পিটিআই কীভাবে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে পারে।
তারপর ৩০ সেপ্টেম্বর তত্ত্বাবধায়ক মন্ত্রিসভা বিষয়টি তদন্তে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সিকে (এফআইএ) নির্দেশ দেয়। গত অক্টোবরে ইমরান ও কুরেশিকে অপরাধী সাব্যস্ত করে প্রতিবেদন জমা দেয় এফআইএ।
সেই প্রতিবেদন আমলে নিয়ে ওই মাসেই এফআইএকে বিশেষ আদালতে ইমরান খানের বিরুদ্ধে মামলা করার অনুমতি দেয় নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক মন্ত্রিসভা।
তোশাখানা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে বর্তমানে পাঞ্জাবের আদিয়ালা কারাগারে রয়েছেন ইমরান খান। গত নভেম্বরে এফআইএর কর্মকর্তারা সেই কারাগারে গিয়ে ইমরান খানের সাক্ষ্যও সংগ্রহ করেছেন।