শীত আসছে তার আগমনী বার্তা নিয়ে। দেশের কিছু কিছু এলাকায় জেঁকে বসতে শুরু করেছে শীত। শীত আসার সাথে সাথে বেড়ে যায় ঠাণ্ডা, সর্দি জ্বর। ঠাণ্ডাজনিত সর্দি-কাশিতে জ্বর জ্বর ভাব বা জ্বর থাকে, শরীর ম্যাজ ম্যাজ করে, নাক দিয়ে পানি ঝরে, নাক বন্ধ থাকে, মাংসপেশিতে ব্যথা থাকে, গলায় থাকে খুশখুশ ভাব বা ব্যথা এবং থাকে হাঁচি ও শুকনা কাশি। সাধারণত ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণে এটি হয়ে থাকে। ৫-১০ দিন পর আপনা-আপনি ভালো হয়ে যায়। তবে শুকনো কাশি অনেকদিন পর্যন্ত থাকতে পারে।
সর্দি-কাশি প্রতিরোধে হাঁচি-কাশি এলে টিস্যু বা রুমাল দিয়ে মুখ ঢেকে নিন। ব্যবহৃত টিস্যু যেখানে-সেখানে না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলুন। হাঁচি-কাশির পর সাবান-পানি দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে ফেলুন। হাত না ধুয়ে চোখ, নাক, মুখ স্পর্শ করবেন না। শুধু বারবার সাবন দিয়ে হাত ধুলে কিন্তু এ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব সহজেই। বাইরে থেকে এসে হাত-মুখ ভালো করে পরিষ্কার করুন। আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকুন। কারোও সাথে কথা বলার সময় কমপক্ষে এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখুন।
যদি সর্দি-কাশি হয়েই যায় তাহলে কুসুম গরম পানির সাথে লেবু, মধু মিশিয়ে পান করুন। তুলসী পাতার রস ও কালিজিরা রোগের উপসর্গ কমাতে পারে। শুকনো কাশি বেশি দিন থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করুন।
বাতাসে আর্দ্রতা কম ফলে আবহাওয়া হয়ে উঠেছে শুষ্ক ও রুক্ষ। এই শুষ্ক আবহাওয়ার প্রভাব পড়ে আমাদের ত্বকের উপর। ত্বকের আর্দ্রতা শুষে নেয় শীতের বাতাস। ত্বক শুষ্ক হয়ে খস খসে ভাব হয় এবং চামড়া মরে ফেটে যায়। মাথায় খুশকির উপদ্রব বাড়ে। ত্বককে শুষ্কতার হাত থেকে রেহাই পাবার জন্য শীতের শুরু থেকেই ত্বকের যত্নে সচেতন হতে হবে। ত্বক সুরক্ষার জন্য প্রয়োজন বাড়তি যত্ন।
শীতে ত্বকের শুষ্কতা দূর করার জন্য দরকার ভালো ময়শ্চারাইজার বা কোল্ড ক্রিম, গ্লিসারিন বা পেট্রোলিয়াম জেলি। শীতকালের জন্য ভালো ময়শ্চারাইজার যা ত্বককে শুষ্কতর হাত থেকে রক্ষা করে কোমল ও মসৃণ রাখে। ত্বকে তেলের প্রলেপ দিলেও ভালো হয় তবে অলিভ অয়েল সবচেয়ে ভালো। গোসলের পর গায়ে মাখতে হবে, গোসলের আগে নয়। গোসল সারার পর তোয়ালে দিয়ে গায়ের পানিটুকু মুছে নিতে হবে এরপর গ্লিসারিনের সাথে পানি মিশিয়ে শরীরে মেখে নিতে হবে।
গোসলের সময় কিছু পানি ত্বক শুষে নেয়, এই পানিটুকু দীর্ঘ সময় ত্বকে আটকে রাখতে পারলে ত্বকের সজীবতা রক্ষা পায়। আটকে রাখার কাজটি করে এই ময়শ্চারাইজার। গোসলের পর দেরীতে ময়শ্চারাইজার লাগালে ত্বকের শুষে নেয়া পানিটুকু বাতাসে উড়ে যাবে, ত্বক আবার শুষে হয়ে পড়বে। শিশুদের ক্ষেত্রেও গোসলের পরই বেবী অয়েল, গ্লিসারিন বা ভেসলিন দিয়ে ম্যাসেজ করা ত্বকের জন্য উপকারী এবং আরামদায়কও বটে।
শীতকালে ত্বকে সাবান কম ব্যবহার করা উচিত কারণ শীতকালে এমনিতেই ত্বক শুষ্ক থাকে, সাবান ব্যবহারের ফলে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব কমে গিয়ে আরো শুষ্ক হয়ে পড়ে। যদি সাবান ব্যবহার করতেই হয় তবে গ্লিসারিনযুক্ত বা অধিক চর্বিযুক্ত সাবান ব্যবহার করাই উত্তম।
শীতের শুরু থেকেই রাত্রে ঘুমানোর পূর্বে ত্বকে নিয়মিত অলিভ ওয়েল ম্যাসেজ করে নিলে ত্বক থাকবে মসৃণ ও নমনীয়।
শীতকালে ঠোঁটও দ্রুত শুষ্ক হয়ে পড়ে। ঠোঁট ফেটে যাওয়ায় হাসতে বা খাবার খেতেও কষ্ট হয়। এ অবস্থায় বারবার জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজানো বা ঠোঁটের চামড়া উঠানো উচিত নয় এতে ঠোঁট আরো বেশি শুষ্ক হবে।
যাদের ঠোঁট ফেটে যায় বা ঠোঁটের শুষ্কতা রোধে খাবার পরই ঠোঁটে লিপজেল, ভেসলিন বা গ্লিসারিন লাগাতে হবে। শীতকালে যাদের পায়ের গোড়ালী ফাটে তাদের পায়ের জন্য অবশ্যই আলাদা যত্ন নিতে হবে। সপ্তাহ দু’একদিন একটি গামলায় হালকা গরম পানি নিয়ে তাতে একটু শ্যাম্পু মিশিয়ে পা দু’টো ভিজিয়ে রাখতে হবে আধ ঘণ্টার মতো। তারপর ঘষে পরিষ্কার করে ধুয়ে শুকানোর সাথে সাথে ভেসলিন বা গ্লিসারিন লাগিয়ে রাখতে হবে।
রাত্রে ঘুমানোর আগে পা ধুয়ে মুছে গ্লিসারিন বা পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে তারপর জেলি লাগিয়ে মোজা পরে নিতে হবে। এতে পায়ের চামড়া নরম ও কোমল থাকবে। তবে খালি পায়ে হাঁটা যাবে না। পায়ের গোড়ালী বেশি ফেটে গেলে এবং হাটাহাটিতে কষ্টকর হলে চর্ম বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
বাইরে বেরোলে গরম কাপড় পরিধান করুন। মাথা ও কান ভালো করে মাফলারে ঢেকে নিন। শীতকালের শাকসবজি বেশি করে খান। মাঝে মাঝে কুসুম গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করুন। কুসুম গরম পানি, চা-কফি পান করতে পারেন। ঠাণ্ডা খাবার ও পানীয় বাদ দিন। ঘরে আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করুন।
ঘরের মধ্যে বসে না থেকে ব্যায়াম, হাঁটা-চলা করুন। ধুলাবালি এড়িয়ে চলুন, প্রয়োজনে মাস্ক ব্যবহার করুন। হাঁপানি ও দীর্ঘদিনের শ্বাসকষ্টে আক্রান্তরা শীতের শুরুতে চিকিৎসকের পরামর্শমতো ইনহেলার বা অন্যান্য ওষুধ সেবন করুন।