ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য সিকিমে প্রবল বৃষ্টিতে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় নিখোঁজ ভারতীয় সেনাদের একজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে নিখোঁজ অন্য ২২ জন সেনার এখনও কোনও হদিস মেলেনি।
এছাড়া হিমালয়ার ছোট এই রাজ্যে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ জনে। নিখোঁজ মানুষের সংখ্যাও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০২ জনে। নিখোঁজ এই শতাধিক মানুষের মধ্যে হারিয়ে যাওয়া ২২ জন ভারতীয় সেনাও রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিকিমের লাচেন উপত্যকার লোনাক হ্রদের ওপরে মেঘভাঙ্গা বৃষ্টি হয় গত মঙ্গলবার ও বুধবার মাঝরাতের পরে। তার সঙ্গে গত কয়েকদিনের একটানা বৃষ্টিপাতও ছিল। মেঘভাঙা বৃষ্টি বলতে সাধারণত অতি ভারী বৃষ্টি, যা একটি নির্দিষ্ট এলাকায় হয় তাকে বোঝায়।
আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের মতে, এক ঘণ্টায় ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ১০ সেন্টিমিটার অথবা আধঘণ্টায় পাঁচ সেন্টিমিটার বা তার বেশি বৃষ্টি হলে সেটাকেই মেঘভাঙ্গা বৃষ্টি বা ক্লাউড বার্স্ট বলা হয়।
ভারতের একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেছেন, বন্যায় ১৪টি সেতু ভেঙে পড়েছে এবং রাজ্যের বিভিন্ন অংশে ৩ হাজারেরও বেশি পর্যটক আটকা পড়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে সিকিম সরকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনের অধীনে এই বিপর্যয়কে দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এর আগে সেনাবাহিনী বুধবার জানায়, সিংটাম শহরের কাছে বারডাং থেকে নিখোঁজ হওয়া ২৩ জন সৈন্যের মধ্যে একজনকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং তার অবস্থা স্থিতিশীল।
একজন কর্মকর্তা বলেছেন, সীমান্ত সড়ক সংস্থার অধীনে নয়টি এবং রাজ্য সরকারের অধীনে পাঁচটিসহ মোট ১৪টি সেতু ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ভেঙে পড়েছে। চুংথাংয়ের তিস্তা বাঁধে কাজ করা প্রায় ১৪ জন শ্রমিক এখনও টানেলে আটকা পড়ে আছেন।
মাঙ্গান জেলার চুংথাং, গ্যাংটক জেলার ডিকচু ও সিংটাম এবং পাকিয়ং জেলার রাংপো থেকে আহত ও নিখোঁজদের খবর পাওয়া গেছে। ২৫ জনেরও বেশি লোককে বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
মাঙ্গান জেলার সাংকালান ও টুং-এ আকস্মিক বন্যায় ফাইবার ক্যাবল লাইন ধ্বংস হওয়ার কারণে চুংথাং এবং উত্তর সিকিমের বেশিরভাগ অংশে মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ব্রডব্যান্ড সংযোগ বিঘ্নিত হয়েছে। চুংথাংয়ের পুলিশ স্টেশনটিও ধ্বংস হয়ে গেছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন সেনা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘ভারতীয় সেনাবাহিনীর ত্রিশক্তি কর্পস-এর সৈন্যরা নিখোঁজ ২৩ সৈন্যকে খুঁজে বের করতে ব্যাপক অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে। অবিরাম বর্ষণ এবং রাস্তা ও সেতুসহ তিস্তা নদীর উত্তাল পানি বয়ে যাওয়ার মধ্যেও অনুসন্ধান অভিযান চালানো হচ্ছে। সন্ধ্যা নাগাদ একজন সৈন্যকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং বাকি ২২ জনের জন্য অনুসন্ধান অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
সেনাবাহিনী বলেছে, নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে এবং পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে।