ডেস্ক রিপোর্ট:
ভোটার তালিকায় সেই মুশতাকের নাম
সভাপতির মতামত চাইবে আইডিয়াল কলেজ কর্তৃপক্ষ
মুশতাককে নির্বাচনে অযোগ্য করতে পথ খুঁজছে আইডিয়াল
ছাত্রীকে বিয়ে করে আলোচিত রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদকে পর্ষদের কোনো কার্যক্রম বা সভায় অংশ নেওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে তিনি যেন আইডিয়াল স্কুলের আঙ্গিনায় যেতে না পারেন সেজন্য স্কুল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়। তবু আসন্ন গভর্নিং বডির নির্বাচনের ভোটার তালিকায় মুশতাকের নাম এসেছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, আপিল বিভাগের রায়ের আগেই এই ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়া তার নাম ভোটার তালিকায় রাখা যাবে কি না সে ব্যাপারে আপিল বিভাগ স্পষ্ট কিছু বলেনি। কোর্টে রায় পযালোচনা করে তাকে ভোটার তালিকায় রাখা না রাখার বিষয়ে গভর্নিং বডির সভাপতির মতামত চাওয়া হবে। একই সঙ্গে লিগ্যাল বিষয়ে আইজীবীর মতামত নেওয়ার চেষ্টা করা হবে।
এ বিষয়ে কলেজের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. মিজানুর রহমান জানান, মুশতাক আহমেদ ডোনার সদস্য। তার সদস্য পদ বাতিল করার এখতিয়ার আমারে নেই। তার সদস্য পদ বা ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিতে পারেন শুধুমাত্র গভর্নিং বডি কিংবা ঢাকা শিক্ষাবোর্ড। তার সদস্যপদ আদালতও বাতিল করেনি। তবে বিষয়টি নিয়ে যেহেতু আপত্তি এসেছে, এটা পরিচালনা পর্ষদকে অবহিত করে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানতে চাইলে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের একজন সহকারি প্রধান শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা পোস্টকে বলেন, মুশতাকের নাম আসা আমাদের জন্য বিব্রতকর। কিন্তু আইনিভাবে আমাদের কিছু করা নেই। এখন যেহেতু আদালতের পর্যালোচনা রয়েছে, সেটাকে কাজে লাগিয়ে তার নাম বাদ দেওয়া হবে। এটা পরিচালনা পর্ষদের সবোর্চ্চ ফোরামের সিদ্ধান্তের বিষয়। এ জন্য সভাপতির কাছে মতামত চাওয়া হবে।
তিনি জানান, ভোটার তালিকা থেকে তার নাম বাদ দেওয়ার জন্য অভিভাবক ও শিক্ষকদের প্রচুর চাপ রয়েছে। তাই বিষয়টি সবোর্চ্চ গুরুত্ব দিয়ে আমরা বিবেচনা করছি। সামনে নির্বাচনে মুশতাক যেন অংশ নিতে না পারে সেই পথ খুঁজছি।
গভর্নিং বডির একজন প্রভাবশালী সদস্য ঢাকা পোস্টকে জানান, মুশতাক প্রভাবশালী ও বর্তমান অধ্যক্ষের বন্ধু। তাকে সামনে নির্বাচনে অযোগ্য করতে গণমাধ্যমে আসা সংবাদ, আদালতের রায়কে কাজে লাগাতে চাই। সে জন্য লিগ্যাগ বডির পরামর্শ নেওয়া হবে। নৈতিক স্খলন জনিত ইস্যুতে তাকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব যাবে গভর্নিং বডির কাছে। এছাড়া ঢাকা জেলা ও শিক্ষাবোর্ড আলাদাভাবে ঘটনার তদন্ত করছে। আদালতের মতো তদন্ত কমিটিও যেন এক মতামত দেন সেই চেষ্টা চলছে।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার কলেজের সভাপতি আবু হেনা মোরশেদ জামান স্বাক্ষরিত ভোটার তালিকায় সেই মুশতাকের নাম দেখা যায়। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
অভিভাবকরা জানান, সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালত যেখানে মুশতাককে কলেজের আঙিনায় যেতে পারবে না বলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তারপরও কলেজ কর্তৃপক্ষ কীভাবে তাকে গভর্নিং বডির ভোটার তালিকায় রাখলো?
কলেজটির একাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে বিয়ে করে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন ৬০ বছর বয়সী গভর্নিং বডির সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদ। এমন অপ্রীতিকর ঘটনার পর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে খন্দকার মুশতাকের গভর্নিং বডির সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে বলে গত কদিন আগে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার। অপরদিকে ছাত্রীর বাবার দায়ের করা এক মামলায় হাইকোর্ট মুশতাককে বলেছিলেন, আপনি নৈতিকভাবে কাজটি ঠিক করেননি।
এছাড়াও ছাত্রীকে বিয়ে করা রাজধানীর মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির দাতা সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদ যেন স্কুলের সীমানায় যেতে না পারেন, সেজন্য স্কুল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে গত ২০ আগস্ট আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম আদেশ দেন।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ও আদালতের নির্দেশনা না মেনেই আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির নির্বাচন-২০২৩ ভোটার তালিকায় খন্দকার মুশতাক আহমেদকে রাখা হয়েছে। ভোটার তালিকা দেখার পর থেকেই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্ক ও উদ্বেগে আছেন।