ভারতের ১৪ জন টিভি উপস্থাপককে বয়কট করার ঘোষণা দিয়েছে বিরোধী দলগুলোর ‘ইন্ডিয়া জোট’। রাজনৈতিক জোটের একসঙ্গে এত সংবাদ উপস্থাপকের অনুষ্ঠান বয়কট ভারতের ইতিহাসে বিরল। কিন্তু কেন এই বয়কট? জোটের দাবি ওই ১৪ জন উপস্থাপক তাদের সংবাদ-ভিত্তিক বিতর্ক অনুষ্ঠানগুলোতে ‘ঘৃণা’ ছড়াচ্ছেন।
‘ইন্ডিয়া জোট’ যাদের বয়কট করেছে তাদের ‘গোদী মিডিয়া’ বলে চিহ্নিত করেছে বিরোধীদলগুলো। তারা মনে করে ওইসব উপস্থাপকরা ও তাদের চ্যানেলগুলো প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমর্থক।
এদিকে এ ঘটনায় বিজেপি ও সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এছাড়া যারা বয়কটের শিকার হয়েছেন তাদের অনেকেও সামাজিক মাধ্যমে এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তবে বেশ কয়েকজন উপস্থাপক ও সিনিয়র সাংবাদিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসিকে বলেন, ‘ওই ১৪ জন সংবাদ উপস্থাপকের অনুষ্ঠানগুলো দেখলে মনে হয়—তারা ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ নিয়েই কথা বলছেন। এছাড়া বিরোধীদলের প্রতিনিধিদের হেনস্থা করার জন্যই সেখানে ডাকা হয়। তবু এভাবে আনুষ্ঠানিক বয়কট কোনও রাজনৈতিক জোটের অনুচিত।’
১৪ উপস্থাপককে বয়কটের নেপথ্যে?
‘ইন্ডিয়া’ জোটের পক্ষ থেকে ১৪ জন উপস্থাপকের অনুষ্ঠান বয়কট করার ঘোষণা দিয়ে কংগ্রেস নেতা পবন খেরা বলেন, ‘প্রতিদিন সন্ধ্যা হলেই কয়েকটি চ্যানেলে ঘৃণা ছড়ানোর বাজার বসে যায়। গত নয় বছর ধরে এটাই চলে আসছে। বিভিন্ন দলের কয়েকজন মুখপাত্র ওই বাজারে যান, কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষকও থাকেন। সত্যটা হলো আমরা সবাই ওই ঘৃণার বাজারের ক্রেতা হয়ে হাজির হই।’
সাংবাদিক ও সংগঠনগুলোর কড়া প্রতিক্রিয়া
দেশটির টিভি চ্যানেলগুলোর সংগঠন নিউজ ব্রডকাস্টার্স অ্যান্ড ডিজিটাল এসোসিয়েশন (এনবিডিএ) এর সভাপতি ও এবিপি নেটওয়ার্কের মুখ্য কার্যনির্বাহী অবিনাশ পাণ্ডে বলেন, ‘এমন সিদ্ধান্ত সংবাদমাধ্যমের গলা টিপে ধরার মতো। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলে তারাই আবার সেগুলো ধ্বংস করছে। তবে আমরা সব অনুষ্ঠানে সবাইকেই আমন্ত্রণ জানাবো।’
এছাড়া বিরোধী জোটের এমন সিদ্ধান্ত বিপজ্জনক নজির বলে আখ্যা দিয়েছে এনবিডিএ। সাংবাদিকদের এ সংগঠনটি বলছে, বিরোধী জোট নিজেদের বহুত্ববাদ ও মুক্ত সংবাদপত্রের সমর্থক হিসাবে বর্ণনা করে। কিন্তু তাদের এই সিদ্ধান্ত গণতন্ত্রের মৌলিক নীতিকেই আঘাত করল।
বয়কটের শিকার উপস্থাপক সুধীর চৌধুরী তার এক্স (পুরনো টুইটার) লিখেন, ‘ইন্ডিয়া জোটকে যে সাংবাদিক ও উপস্থাপকরা নির্ভয়ে মোকাবিলা করেছেন, যারা পায়ে চুম্বন দিতে অস্বীকার করেছেন, এখন তাদের বয়কট করা হবে। প্রায় অর্ধেক ভারতে এই জোটের সরকার রয়েছে। যখন লোভ, পুরস্কার আর মামলা দিয়েও কাজ হলো না তখন বয়কট। ভারতের সব সংবাদমাধ্যমের সর্বশক্তি দিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এর জবাব দেওয়া উচিৎ। এটা খুব বিপজ্জনক পরিস্থিতি।’
কী বলছে বিজেপি
‘ইন্ডিয়া’ জোটের এমন বয়কটকে ‘নাৎসিদের মতো কাজ’ বলে মন্তব্য করেছে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বিজেপি। দলের সভাপতি জেপি নাড্ডা ‘ইন্ডিয়া’ জোটের এই সিদ্ধান্তের কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘সংবাদ উপস্থাপকদের বয়কটের যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তা মূলত নাৎসিদের মতো কাজ। জোটের দলগুলোর মধ্যে এখনও জরুরি অবস্থার মানসিকতা কাজ করছে।’
যে ১৪ জন উপস্থাপককে বয়কট
রিপাবলিক টিভির অর্ণব গোস্বামী, টাইমস নাও নবভারতের নাভিকা কুমার, সুশান্ত সিনহা, আজ তকের সুধীর চৌধুরী ও চিত্রা ত্রিপাঠি, নিউজ ১৮ নেটওয়ার্কের আমন চোপড়া, আমিশ দেবগান, আনন্দ নরসিং, ভারত ২৪ এর রুবিকা লিয়াকত, ইন্ডিয়া টুডের গৌরব সাওয়ান্ত ও শিব আরুর, ইন্ডিয়া টিভির প্রাচি পরাশর, ভারত এক্সপ্রেসের অদিতি ত্যাগী ও ডিডি নিউজের অশোক শ্রীবাস্তব।