সেই ১৯৭০-এর দশক থেকে শুরু! অধিকার আদায়ে তখন থেকেই নিয়ম করে ভোটে দাঁড়িয়ে চলেছেন ভারতের রাজস্থান রাজ্যের বাসিন্দা তিতার সিং। কিন্তু ৫০ বছর পার করেও জয়ের মুখ দেখেননি একবারও। ভোটে দাঁড়ালেই হারতে হবে, এটাই যেন নিয়ম হয়ে গেছে।
এমনকি শুধু হার নয়, প্রতিবারই তার জামানতও জব্দ হয়েছে। তবু হাল ছাড়তে নারাজ ৭৮ বছরের এই বৃদ্ধ। রাজস্থানের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে আবারও অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। চলতি নভেম্বর মাসের ২৫ তারিখে রাজ্যটিতে এই নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।
ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআইয়ের বরাত দিয়ে মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, তিতার সিং পেশায় একজন দিনমজুর। আগামী ২৫ নভেম্বর রাজস্থান বিধানসভা নির্বাচনে করণপুর বিধানসভা আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তিনি। গত ৫০ বছর ধরে পঞ্চায়েত স্তর থেকে লোকসভা পর্যন্ত ২০টি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন তিতার। প্রতিটিতেই হেরেছেন তিনি।
তিতার সিং জানিয়েছেন, তিনি অর্থের লোভে কিংবা জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য ভোটে দাঁড়ান না। তবে বারবার পরাজয়ের পরও আবারও কেন ভোটে দাঁড়াবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলছেন, ‘কেন লড়বো না? সরকারের দায়িত্ব হলো মানুষের জন্য কাজ করা। জমি, খাবার এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দেওয়া। নির্বাচন সেই অধিকার আদায়ের লড়াই।’
৭৮ বছরের এই বৃদ্ধের কাছে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা অধিকার অর্জনের একটি অস্ত্র, যে অস্ত্র বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ভোঁতা হয়ে যায়নি।
সংবাদমাধ্যম বলছে, রাজস্থানের ‘২৫এফ’ গ্রামের বাসিন্দা তিতার দলিত সম্প্রদায়ভুক্ত। ১৯৭০ সালে তিতার দেখেন, ক্যানাল কমান্ড এলাকায় সাধারণ মানুষের জন্য সরকার যে জমি বরাদ্দ করছে, তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দলিতরা। আর তারপরই প্রথমবার ভোটে দাঁড়াবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন তিতার।
সেসময় তার দাবি ছিল, সরকার যেন ভূমিহীন ও দরিদ্র শ্রমিকদের জন্য জমি বরাদ্দ করে। সেই থেকে শুরু করে এরপর যতবার সুযোগ এসেছে, একবারও সুযোগ ছাড়েননি তিতার। প্রতিবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন এবং যথারীতি হেরেছেন।
তিতার জানিয়েছেন, গরিব শ্রমিকদের জমি বরাদ্দের জন্য তার যে দাবি ছিল তা এখনও পূরণ হয়নি এবং তার ছেলেরাও এখন দিনমজুর হিসাবে কাজ করেন। তিতার সিংয়ের তিন মেয়ে এবং দুই ছেলে রয়েছে। তার নাতি-নাতনিরাও বিয়ে করেছেন। এই মুহূর্তে আমানত মূলধন হিসাবে তার কাছে মাত্র ২ হাজার ৫০০ রুপি নগদ অর্থ রয়েছে। তবে কোনও জমি, সম্পত্তি বা যানবাহন নেই।
এর আগে ২০০৮, ২০১৩ এবং ২০১৮ সালে রাজস্থান বিধানসভা নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন তিতার। ২০০৮ সালে ভোট পেয়েছিলেন ৯৩৮টি। পরের বিধানসভা নির্বাচনে সেই সংখ্যা আরও কমে হয় দাঁড়ায় ৪২৭টিতে। আর ২০১৮ সালে ৬৫৮টি ভোট পেয়ে হেরে যান তিতার।
এমনিতে মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান গ্যারান্টি আইন (এমজিএনআরইজিএ)- এর অধীনে দিনমজুর হিসাবে কাজ করেন তিতার। তবে নির্বাচন এলেই পুরোদমে প্রচারণার কাজে নেমে পড়েন। এবারও সেটির ব্যতিক্রম হয়নি।
আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে অংশ নিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তিতার। আর জয় নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যেই শুরু করেছেন প্রচারণাও।