‘কাউন্টার অফেন্সিভ’ যুদ্ধকৌশলের জেরে নিজেদের সব সম্পদ হারিয়ে সর্বস্বান্ত হওয়ার পরই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির নেতৃত্বাধীন সরকার রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি সংলাপের জন্য আসবে বলে মনে করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
মঙ্গলবার রাশিয়ার দূরপ্রাচ্যের শহর ভ্লাদিভস্তকে শুরু হওয়া ইস্টার্ন ইকোনমিক ফোরামের সম্মেলনে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে এ কথা বলেন তিনি। পুতিন বলেন, ‘ইউক্রেন এখনও আশা করছে যে পশ্চিমাদের দেওয়া অস্ত্র-গোলাবারুদ-সাঁজোয়া যান দিয়ে যে কাউন্টার অফেন্সিভ তারা শুরু করেছে, তা রাশিয়ার বিপুল ক্ষয়ক্ষতি করতে সক্ষম হবে। কিন্তু বাস্তব সত্য হলো, কাউন্টার অফেন্সিভ কৌশল শুরুর পর থেকে গত ৩ মাসে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর ৭১ হাজারেরও বেশি সেনাসদস্য ও কর্মকর্তা প্রাণ হারিয়েছেন।’
রুশ বাহিনীকে পরাজিত ও উচ্ছেদ করতে গত ৪ জুন থেকে ‘কাউন্টার অফেন্সিভ’ কৌশল নিয়েছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। এই কৌশল মেনে যুক্তরাজ্যের চ্যালেঞ্জার-২ ট্যাংক, মার্ডার সাঁজোয়া যান, যুক্তরাষ্ট্রের আব্রাহাম ও স্ট্রাইকার ট্যাংক- ব্র্যাডলি সাঁজোয়া যান, জার্মানির লিওপার্ড ট্যাংকে সুসজ্জিত সুসজ্জিত ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী সর্বশক্তি দিয়ে দিয়ে আক্রমণ করছে রুশ বাহিনী।
কিন্তু যুদ্ধের ময়দানে এই কৌশল যে তেমন কাজে আসছে না, তা ইতোমধ্য প্রমাণিত। এমনকি ইউক্রেনকে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সামরিক ও আর্থিক সহায়তা প্রদানকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্রর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদরদপ্তর পেন্টাগনও কাউন্টার অফেন্সিভের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় জানিয়েছে।
কিয়েভ অবশ্য এখনও এই কৌশলের ভবিষ্যত নিয়ে ব্যাপকভাবে আশাবাদী। কিছুদিন আগে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি রীতিমতো আদেশ জারি করে দেশের ভেতর কাউন্টার অফেন্সিভ সংক্রান্ত যাবতীয় প্রকাশ্য সমালোচনা নিষিদ্ধ করেছেন।
গত ৩ মাসে ৭১ হাজার ৫০০ জন সেনাসদস্য ও কর্মকর্তা নিহতের পাশপাশি ইউক্রেনীয় বাহিনীর ৫৪৩টি ট্যাঙ্ক এবং প্রায় ১ হাজার ৮০০ সাঁজোয়া যান ধ্বংস হয়েছে—উল্লেখ করে মঙ্গলবারের বক্তব্যে পুতিন বলেন, ‘এই কাউন্টার অফেন্সিভের কোনো ফলাফল নেই। এটি সম্পূর্ণ ব্যর্থ। এই কৌশলের কারণে যত দিন যাবে, ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি আরও বাড়তে থাকবে।’
‘আর (কাউন্টার অফেন্সিভ কৌশলের কারণে) যখন নিজেদের মানবসম্পদ, সামরিক সাজ-সরঞ্জাম, গোলাবারুদ— সবকিছু শূন্যের কোঠায় এসে পৌঁছাবে, তখন কিয়েভ বলা শুরু করবে— ‘আমরা বহুদিন ধরে রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরু করতে চাইছি, কিন্তু তারা (রাশিয়া) কিছুতেই রাজি হচ্ছে না।’
‘কাউন্টার অফেন্সিভ এবং ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ এটাই,’ মঙ্গলবারের বক্তব্যে বলেন পুতিন।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ বাহিনী ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে কিয়েভের সঙ্গে শান্তি সংলাপ শুরু করতে রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ।
মঙ্গলবার ইস্টার্ন ইকোনমিক ফোরামের সম্মেলনে পুতিন বলেন, ‘রাশিয়া যে কোনো সময়ে শান্তি আলোচনায় অংশ নিতে প্রস্তুত। কিন্তু তার আগে ইউক্রেনকে দু’টি কাজ করতে হবে— (১) মস্কোর সঙ্গে যে কোনো প্রকার আলোচনায় কিয়েভ যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তা প্রত্যাহার এবং (২) তারা যে আলোচনায় বসতে ইচ্ছুক— আনুষ্ঠানিকভাবে তার ঘোষণা দেওয়া।’
‘কিয়েভ যদি এই দুই কাজ করে, সেক্ষেত্রে বাকিটা আমরা দেখব।’