টানা দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালাচ্ছে রাশিয়া। রুশ এই আগ্রাসন প্রতিরোধে পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিকে তহবিল বরাদ্দসহ সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন এই সহায়তা ইউক্রেনকে বেশ সহায়তাও করছে।
তবে ইউক্রেনে মার্কিন সামরিক সহায়তার কঠোর সমালোচনা করেছেন মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাডোর। এমনকি এই সহায়তাকে তিনি ‘অযৌক্তিক’ বলেও আখ্যা দিয়েছেন। মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেক্সিকান প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাডোর সোমবার ইউক্রেনে মার্কিন সামরিক সহায়তার তীব্র সমালোচনা করেছেন। এটিকে ‘অযৌক্তিক’ আখ্যা দিয়ে পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে যুদ্ধ প্রচেষ্টার সমালোচনাও করেছেন তিনি।
এছাড়া কিয়েভের পরিবর্তে লাতিন আমেরিকার দেশগুলোকে সাহায্য করার জন্য ওয়াশিংটনকে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন লোপেজ ওব্রাডোর।
রয়টার্স বলছে, প্রেসিডেন্ট লোপেজ ওব্রাডোর দীর্ঘদিন ধরে অভিবাসী চাপ কমাতে মধ্য আমেরিকা এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলে অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে আরও তহবিল বরাদ্দ করার আহ্বান জানিয়ে আসছেন।
সোমবার নিজের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে লোপেজ ওব্রাডোর ইউক্রেনকে সহায়তায় বাঁধা সৃষ্টি করা স্টপগ্যাপ তহবিল বিল নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘আমি শুধু দেখছিলাম কিভাবে তারা এখন ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য সাহায্য অনুমোদন করছে না। কিন্তু এতোদিন ইউক্রেন যুদ্ধে জন্য তারা কতটা অর্থ সেখানে পাঠিয়েছে? ৩০ থেকে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। কোনটি আপনার কাছে সবচেয়ে অযৌক্তিক এবং ক্ষতিকর জিনিস।’
তিনি আরও বলেন, ‘সুতরাং তাদেরকে নিজেদের কৌশল পরিবর্তন করতে হবে এবং অন্যদের সম্মান করা শিখতে হবে। এখন মেক্সিকান কর্তৃপক্ষকে উপেক্ষা করা উচিত নয় তাদের।’
মেক্সিকোতে অবস্থিত ইউক্রেনের দূতাবাস এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। এছাড়া মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টও তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।
রয়টার্স বলছে, ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু থেকেই বামপন্থি লোপেজ ওব্রাডোর মেক্সিকোকে নিরপেক্ষ রাখতে চেয়েছেন এবং কিয়েভে পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক সহায়তার সমালোচনা করেছেন। এছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের অবসান ঘটাতে শান্তি আলোচনারও প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।
অবশ্য ইউক্রেন সংঘাতে রাশিয়ার ভূমিকার সমালোচনা করে জাতিসংঘের কিছু বড় প্রস্তাব সমর্থনও করেছে লোপেজ ওব্রাডোরের সরকার।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক অতীতে একাধিকবার যুক্তরাষ্ট্র-বিরোধী বক্তব্য রেখেছেন মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট লোপেজ ওব্রাডোর। চলতি বছরের মার্চ মাসে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে মেক্সিকো নিরাপদ দেশ বলে দাবি করেছিলেন।
মূলত মেক্সিকো সীমান্তের কাছে মারাত্মক এক অপহরণের ঘটনায় দুই আমেরিকান নাগরিকের প্রাণহানি এবং এর জেরে সৃষ্ট সমালোচনার জবাবে মেক্সিকান প্রেসিডেন্ট সেসময় একথা বলেন।
এছাড়া ওই ঘটনার সপ্তাহখানেক পর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরকে ‘মিথ্যাবাদী’ আখ্যা দেন প্রেসিডেন্ট ওব্রাডোর। মেক্সিকান সরকারের মানবাধিকার রেকর্ড ইস্যুতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের রেকর্ড সামনে আসার পর তিনি এই দাবি করেছিলেন।
এরপর চলতি বছরের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগও এনেছিলেন মেক্সিকান এই প্রেসিডেন্ট।
অবশ্য মেক্সিকোর সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে গুম এবং হত্যাসহ বছরের পর বছর ধরে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে এবং এই কারণে সামরিক বাহিনীকে জবাবদিহি করার জন্য চাপের মুখে রয়েছেন লোপেজ ওব্রাডোর।