ইউক্রেনের জন্য মার্কিন সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। শাটডাউন এড়াতে দেশটির কংগ্রেসে পাস হওয়া বাজেট চুক্তিতে ইউক্রেনকে আরও সামরিক তহবিল দেওয়ার বিষয়টি বাদ দেওয়ার পর তিনি এই প্রতিশ্রুতি দেন।
এমনকি মার্কিন মিত্ররা তার এই প্রতিশ্রুতির ওপর ভরসা রাখতে পারে বলেও জানিয়েছেন বাইডেন। সোমবার (২ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কংগ্রেসে শেষ মুহূর্তের বাজেট চুক্তি থেকে কিয়েভের জন্য আরও সামরিক তহবিল বরাদ্দের বিষয়টি বাদ দেওয়ার পর ইউক্রেনে মার্কিন সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
দিন দু’য়েক আগে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোর কার্যক্রম আরও ৪৫ দিনের জন্য চালু রাখতে ও শাটডাউন এড়াতে একেবারে শেষ মুহূর্তে মার্কিন কংগ্রেসের উভয় কক্ষে তহবিল বিল পাস হয়। তবে সেখানে কিয়েভের জন্য সামরিক সহায়তার ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার অন্তর্ভুক্ত ছিল না। যদিও এটিই ছিল হোয়াইট হাউসের অন্যতম শীর্ষ অগ্রাধিকার।
বিবিসি বলছে, কট্টরপন্থি রিপাবলিকানরা ইউক্রেনে আরও সামরিক সহায়তা দেওয়ার বিরোধিতা করে আসছেন। অনেকে আবার এ বিষয়ে প্রকাশ্যে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বিরোধিতাও করছেন। এই পরিস্থিতিতেই রোববার ইউক্রেনে মার্কিন সহায়তা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেন বাইডেন।
এদিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ইউক্রেন মার্কিন সহায়তার ওপর ‘বিশ্বাস রাখতে পারে’। তার ভাষায়, ‘আমরা কোনও অবস্থাতেই ইউক্রেনে মার্কিন সহায়তাকে বাধাগ্রস্ত হতে দিতে পারি না।’
ইউক্রেন যুদ্ধের তহবিল পুনরুদ্ধারের বিষয়ে মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক এই প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি (ইউক্রেনকে) আশ্বস্ত করতে পারি আমরা তাদের পাশে থাকব। আমরা সেখানে আমাদের কাজ সম্পন্ন করব। আমি আমাদের আমেরিকান মিত্রদের আশ্বস্ত করতে চাই... আপনারা আমাদের সহায়তার ওপর ভরসা করতে পারেন, আমরা সরে যাব না।’
টানা দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। রুশ এই আগ্রাসনের শুরু থেকেই পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিকে অস্ত্রসহ সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো।
অপরদিকে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানে সহায়তা না করতে চীনসহ প্রতিদ্বন্দ্বী ও প্রতিপক্ষ দেশগুলোকে সতর্ক করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।
বিবিসি বলছে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসন শুরু করার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই ইউক্রেনে প্রায় ৪ হাজার ৬০০ কোটি মার্কিন ডলারের সামরিক সহায়তা দিয়েছে। তবে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইউক্রেনের জন্য আরও ২৪০০ কোটি ডলার ছাড় করার অনুরোধ করেছেন।
এছাড়া সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইউক্রেনে অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যার মধ্যে রয়েছে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এবং আব্রামস ট্যাংক। বর্তমানে এসব সরঞ্জাম দিয়েই রাশিয়ার দখলে চলে যাওয়া ইউক্রেনের দক্ষিণের বিভিন্ন অঞ্চলে ধীর গতিতে পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেনীয় বাহিনী।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ইউক্রেনের জন্য ‘মার্কিন সহায়তার প্রবাহ পরিবর্তন হবে না’ এবং ৩০০ কোটি ডলারের মানবিক ও সামরিক সহায়তা শিগগিরই আসতে চলেছে। তবে কংগ্রেসের সিদ্ধান্তে ‘চলমান কর্মসূচি’ প্রভাবিত হতে পারে বলে ইউক্রেনীয় এই মন্ত্রণালয় স্বীকার করে নিয়েছে।
এছাড়া ইউক্রেনের এমপি ওলেক্সি গনচারেঙ্কো স্বীকার করেছেন, স্থগিত তহবিল কিয়েভের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।