পাকিস্তানে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার জেরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান বিরোধী নেতা ইমরান খানকে তলব করেছে দেশটির পার্লামেন্ট। মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী বুধবার এক বিশেষ অধিবেশন বসবে পার্লামেন্টে এবং তাতে উপস্থিত থাকতে হবে ইমরান খানকে।
রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস অব পাকিস্তানের (এপিপি) বরাত দিয়ে মঙ্গলবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছে রয়টার্স।
এপিপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার এক বৈঠক হয়েছে। সেখানে ইমরান খানের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের (পিটিআই) কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘাতের ব্যাপারটি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনাও হয়েছে।
বৈঠকে পার্লামেন্টে একটি বিশেষ সেশন আয়োজনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে এপিপি। এ প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘(বৈঠকে) উপস্থিত সবাই এই মর্মে একমত হয়েছেন যে, দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি ঘটার পাশাপাশি অরাজকতার উত্থান ঘটছে এবং এজন্য প্রধানত দায়ী পিটিআই। দলের চেয়ারম্যান হিসেবে ইমরান খানকে অবশ্যই জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত বলে মনে করছেন মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা।’
‘বিশেষ সেশনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে পিটিআইয়ের কর্মী-সমর্থকদের সাম্প্রতিক সংঘাতের ব্যাপারে পার্লামেন্টের পক্ষ থেকে ইমরান খানের কাছে জবাবদিহিতা চাওয়া হবে।’
সফল ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া ইমরান খান নিয়ে ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন। তবে তারপর থেকে দেশটির ক্ষমতাকাঠামোর শীর্ষে থাকা সামরিক বাহিনীর সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে তার।
এর মধ্যেই ২০২২ সালে পার্লামেন্টের বিরোধী আইনপ্রণেতাদের অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হন ইমরান খান, নতুন প্রধানমন্ত্রী হন সাবেক বিরোধী নেতা শেহবাজ শরিফ। প্রধানমন্ত্রীর পদ হারানোর পর থেকে আগাম নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন ইমরান।
এদিকে, ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ইমরানের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত তোশাখানা দুর্নীতি মামলা। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে যেসব দামী উপহার তিনি পেয়েছিলেন, সেসব রাষ্ট্রীয় তোশাখানায় জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়মের আশ্রয় নেওয়ায় পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খানের বিরুদ্ধে এই মামলাটি করেছে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন।
মামলার শুনানিতে উপস্থিত না থাকায় ইমরান খানকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। সেই অনুযায়ী, পুলিশ গত ১৪ মার্চ পিটিআই চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তারে তার লাহোরের বাসভবনেও গিয়েছিল। কিন্তু দলের কর্মী-সমর্থকদের ব্যাপক বাধা ও সংঘাতের জেরে পিটিআই চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার না করেই ফিরে যেতে বাধ্য হয় পুলিশ।
ইমরান খানের অভিযোগ, নির্বাচন থেকে দূরে রাখতেই তাকে একের পর এক মামলায় ফাঁসাচ্ছে শেহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন সরকার।
পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী, কোনো রাজনীতিকের বিরুদ্ধে যদি দুর্নীতি বা ফৌজদারি মামলা চলমান থাকে কিংবা প্রমাণিত হয়, সেক্ষেত্রে ওই রাজনীতিক নির্বাচনে দাঁড়ানোর যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেন।