ইসরায়েলের কাছ থেকে ‘অ্যারো থ্রি’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা কেনার লক্ষ্যে চুক্তি স্বাক্ষর করতে চলেছে জার্মানি। ওয়াশিংটনের কাছ থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার পর সম্ভবত বৃহস্পতিবারই এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) তথা সামরিক জোট ন্যাটোর আকাশসীমার সুরক্ষায় এটি হবে বড় পদক্ষেপ।
প্রায় ২০ মাস ধরে চলে আসা ইউক্রেন যুদ্ধ ইউরোপের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতির মূলে আঘাত করেছে। স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী শান্তিপূর্ণ আন্তর্জাতিক পরিবেশের বদলে রাশিয়ার মতো পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতের আশঙ্কা আবার বাস্তব হয়ে উঠেছে।
অন্যদিকে বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুনরুত্থানের সম্ভাবনার মুখে ইউরোপের সুরক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আর আগের মতো নির্ভর করাও অবাস্তব হয়ে উঠছে। তাই বাধ্য হয়ে সামরিক প্রস্তুতি ও ক্ষমতা বাড়ানোর পথে এগোচ্ছে জার্মানিসহ ইউরোপের অনেক দেশ।
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস গত বছরই ইউরোপের আকাশে ক্ষেপণাস্ত্র বা বিমান হামলা প্রতিরোধ করতে নিরাপত্তা বলয় প্রস্তুত করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। অনেক সামরিক বিশেষজ্ঞ রায় দিয়েছিলেন, ইসরায়েলের ‘অ্যারো থ্রি’ মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম এমন রক্ষাকবচ হিসেবে উপযুক্ত। গত জুন মাসে জার্মান পার্লামেন্টের এক কমিটি এই ব্যবস্থা কেনার পক্ষে রায় দেয়।
সেই পরিকল্পনা এবার বাস্তব রূপ পেতে চলেছে। বৃহস্পতিবার বার্লিনে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইওয়াভ গালান্ট ও জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিউস ‘অ্যারো থ্রি’ মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম কেনার লক্ষ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করবেন বলে শোনা যাচ্ছে। গালান্টের মুখপাত্র মঙ্গলবার এ কথা জানিয়েছেন।
৩৫০ থেকে ৪০০ কোটি ইউরোর এই চুক্তি ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অস্ত্র বিক্রির নজির গড়তে চলেছে বলে দেশটি জানিয়েছে। সবকিছু পরিকল্পনামতো চললে জার্মানিসহ প্রতিবেশী দেশগুলো দুই বছরের মধ্যে ‘অ্যারো থ্রি’-র ছত্রছায়ায় চলে আসবে।
সে ক্ষেত্রে শত্রুপক্ষের দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র থেকে সুরক্ষার মাত্রা আরও বেড়ে যাবে। এই ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরেই শত্রুর ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত করে ধ্বংস করে দেবে।
গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে এই অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা বিক্রির অনুমতি দিয়েছিল। দুই দেশ যৌথভাবে এই ব্যবস্থা প্রস্তুত করায় জার্মানিকে বিক্রির প্রশ্নে ছাড়পত্রের প্রয়োজন ছিল। ইসরায়েল এয়ারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিস এবং আমেরিকার বোয়িং কোম্পানি এই প্রকল্প কার্যকর করেছে।
ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার হামলা শুরুর পর জার্মান চ্যান্সেলর শলৎস প্রতিরক্ষা খাতের জন্য ১০০ কোটি ইউরো এককালীন ব্যয়ের যে ঘোষণা করেছিলেন, সেই অর্থও এই ব্যবস্থা কেনার কাজে লাগানো হবে।
এছাড়া ইইউ তথা ন্যাটোর বেশ কিছু দেশ জার্মানির উদ্যোগে এই রক্ষাকবচের আওতায় আসার আগ্রহ দেখানোর ফলে প্রকল্পের আর্থিক ভার কিছুটা হলেও বণ্টন করা হবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিউস জানিয়েছেন, ন্যাটোর আকাশসীমা সুরক্ষা কাঠামোর মধ্যেই এই ব্যবস্থা স্থান পাবে।
ইসরায়েলের সঙ্গে জার্মানির এই সামরিক সহযোগিতা ঐতিহাসিক কারণেও বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা মোশে প্যাটেল বলেন, হলোকাস্ট বা ইহুদি নিধনযজ্ঞের ৭৮ বছর পর ইসরায়েল জার্মানির বাসিন্দাদের সুরক্ষার জন্য এক ব্যবস্থা বিক্রি করছে, এমন ঘটনা সত্যি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।