অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হামাসের সাথে তীব্র যুদ্ধের মাঝে লেবাননে ইসরায়েলের হামলায় তিন শিশুসহ অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন। লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলীয় এক এলাকায় ইসরায়েলি হামলায় প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটেছে। বেসামরিক নাগরিকদের প্রাণহানির ঘটনায় ইসরায়েলকে কঠিন জবাব দেওয়ার হুমকি দিয়েছে ইরান-সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ।
মঙ্গলবার লেবাননে হিজবুল্লাহর একজন আইনপ্রণেতা বলেছেন, বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ইসরায়েলি হামলার ‘দ্বিগুণ’ জবাব দেবে হিজবুল্লাহ। তার এই মন্তব্যে ইসরায়েল-লেবাননের সীমান্তের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে; যা হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে ইসরায়েলের জন্য যুদ্ধের নতুন ফ্রন্টের ঝুঁকি তৈরি করেছে।
গত ৭ অক্টোবর হামাস-ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই প্রত্যেক দিন ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর সাথে হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদের প্রাণঘাতী সংঘর্ষ চলছে। গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধ আঞ্চলিক সংঘাতে রূপ নিতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
রোববার দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলের হামলায় নিহত চার লেবানিজের দাফনে অংশ নিয়ে হিজবুল্লাহর আইনপ্রণেতা আলী ফাইয়াদ বলেন, ‘‘বেসামরিকদের লক্ষ্য করে যে কোনো আগ্রাসনের দ্বিগুণ জবাব দেবে প্রতিরোধ বাহিনী।’’ ইসরায়েলের সাথে হামাসের যুদ্ধে হিজবুল্লাহ এখনও ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে পূর্ণ শক্তি প্রদর্শন করেনি বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন আলী ফাইয়াদ। তবে এই বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য জানাননি তিনি।
লেবাননের কর্তৃপক্ষ বলছে, গত রোববার দক্ষিণ লেবাননে একটি গাড়িতে হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, তাদের সৈন্যরা লেবাননের দক্ষিণে একটি গাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। ওই গাড়িতে করে হিজবুল্লাহর সদস্যদের জন্য অস্ত্র পরিবহন করা হচ্ছে সন্দেহে হামলা চালানো হয়। তবে হামলায় গাড়িতে থাকা বেসামরিক নাগরিকের প্রাণহানির ঘটনায় ইসরায়েল তদন্ত করছে বলে জানিয়েছে।
হামাসের সাথে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে উত্তর সীমান্তে লেবাননের হিজবুল্লাহর সাথে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, ইসরায়েলি সীমান্ত এলাকায় এবারের এই সংঘাত ২০০৬ সালের ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধের চেয়েও ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।
ইসরায়েল বলছে, সোমবার উত্তর ইসরায়েলের একাধিক শহরে হিজবুল্লাহর হামলার জবাবে দক্ষিণ লেবাননে গোষ্ঠীটির অবস্থান লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে।
লেবাননের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বলেছেন, লেবানন সীমান্তে ইসরায়েলি বাহিনীর সাথে সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ৬০ জনেরও বেশি হিজবুল্লাহ যোদ্ধা এবং ১০ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। আর হিজবুল্লাহর সাথে সংঘর্ষে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর অন্তত সাত সদস্য এবং এক বেসামরিক নিহত হয়েছেন।
গত ৭ অক্টোবর হামাস-ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের হামলায় ফিলিস্তিনিদের প্রাণহানির সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়েছে। ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় আহত হয়েছেন আরও হাজার হাজার ফিলিস্তিনি। আর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন এক হাজার ৪০০ জনের বেশি।
হামাসকে গাজা উপত্যকা থেকে নির্মুল করার লক্ষ্যে স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাসকে ক্ষমতাচ্যুত এবং ২৪০ জনের বেশি জিম্মিকে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী উপত্যকায় লড়াই করছে।