রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর সহযোগী ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনারকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করতে চলেছে যুক্তরাজ্য। এমনকি ওয়াগনারকে হিংস্র ও ধ্বংসাত্মক হিসেবে উল্লেখ করে তাদের কর্মকাণ্ড বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলেও উল্লেখ করেছে দেশটি।
বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ান ভাড়াটে গোষ্ঠী ওয়াগনারকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসাবে আখ্যায়িত করে এটিকে নিষিদ্ধ করতে চলেছে যুক্তরাজ্য সরকার। যার অর্থ এই সংস্থার সদস্য হওয়া বা সমর্থন করা হবে অবৈধ। এছাড়া একটি খসড়া আদেশ সংসদে পেশ করা হলে ওয়াগনারের সম্পদকে সন্ত্রাসী সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা এবং বাজেয়াপ্ত করা যাবে।
যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ওয়াগনার ‘হিংস্র এবং ধ্বংসাত্মক... এই বাহিনী ভ্লাদিমির পুতিনের রাশিয়ার একটি সামরিক হাতিয়ার’। তিনি বলেন, ইউক্রেন এবং আফ্রিকায় ওয়াগনারের কর্মকাণ্ড ‘বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি’।
সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান আরও বলেছেন: ‘ওয়াগনারের অব্যাহত অস্থিতিশীল কর্মকাণ্ড কেবল ক্রেমলিনের রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণের জন্যই চলছে। সোজা কথায় তারা সন্ত্রাসী এবং যুক্তরাজ্যের আইনেও এই নিষেধাজ্ঞার আদেশটি স্পষ্ট।’
বিবিসি বলছে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে চলমান আগ্রাসনে ওয়াগনার বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এছাড়া ইউক্রেনের পাশাপাশি সিরিয়া এবং লিবিয়া ও মালিসহ আফ্রিকার দেশগুলোতে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে ওয়াগনার।
ওয়াগনারের যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের নাগরিকদের হত্যা ও নির্যাতনসহ একাধিক অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ওয়াগনার সৈন্যরা লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলির চারপাশে ল্যান্ডমাইন স্থাপন করেছিল বলে ২০২০ সালে জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।
এবং গত জুলাই মাসে যুক্তরাজ্য জানায়, রুশ ভাড়াটে এই গোষ্ঠীটি ‘মালি এবং মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতন চালিয়েছে’।
তবে গত জুন মাসে ওয়াগনারের নেতা ইয়েভগেনি প্রিগোজিন রাশিয়ার সামরিক নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যর্থ বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেওয়ার পর ভাড়াটে এই বাহিনীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যায়। আর এরই একপর্যায়ে গত ২৩ আগস্ট অন্যান্য ওয়াগনার কর্মকর্তার সঙ্গে সন্দেহজনক বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান প্রিগোজিন।
পরে তাকে সেন্ট পিটার্সবার্গে সমাহিত করা হয়। প্রিগোজিন ২০১৪ সালে ওয়াগনার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং এই গোষ্ঠীটি নাম এখন যুক্তরাজ্যে অন্যান্য নিষিদ্ধ সংগঠন যেমন হামাস ও বোকো হারামের সাথে যুক্ত করা হবে।
বিবিসি বলছে, কোনও সংগঠনকে সন্ত্রাসবাদের সাথে জড়িত মনে করলে ২০০০ সালের সন্ত্রাস আইনের অধীনে তাকে নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা রয়েছে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। এই আইনের আগে শুধুমাত্র উত্তর আয়ারল্যান্ডে সন্ত্রাসবাদের সাথে যুক্ত সংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ করতে পারত দেশটি।