চলতি সপ্তাহেই দ্রুঝবা পাইপলাইন দিয়ে জার্মানিতে তেল পাঠিয়েছে কাজাখস্তান। এই তেল যাচ্ছে পূর্ব জার্মানির একটি প্রধান তেল শোধনাগারে। এই বছরের আগ পর্যন্ত শোধনাগারটিতে শুধু রাশিয়া থেকে আসা অশোধিত তেলই পরিশোধন করা হতো।
কাজাখস্তান থেকে ২০ হাজার টন বা এক লাখ ৪৫ হাজার ব্যারেল তেল এসেছে জার্মানিতে। এভাবেই কাজাখস্তান থেকে তেল নিয়ে রাশিয়ার ওপর থেকে নির্ভরতা কমাবার চেষ্টা করছে জার্মানি।
রাশিয়া থেকে পাইপলাইনে তেল আনার ক্ষেত্রে ইইউর কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল না। তা সত্ত্বেও জার্মানি সিদ্ধান্ত নেয়, তারা রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনবে না। কাজাখস্তান এ বছর জার্মানিকে ১২ লাখ টন তেল দেবে।
কাজাখস্তান আবার রাশিয়ারও বন্ধু দেশ। তাদের পাইপলাইন অপারেটর কাজট্রানসঅয়েল আগামী তিন মাসে তিন লাখ টন তেল পাঠানোর জন্য রাশিয়ার সংস্থা ট্রানসনেফটের অনুমোদন পেয়ে গেছে।
কাজাখস্তান থেকে তেল আসছে বার্লিনের ১২০ কিলোমটার উত্তরপূর্বে পিসিকে শোধনাগারে। এই শোধনাগারটি তুলনামূলকভাবে আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া এলাকায়। এতে প্রচুর মানুষ এখানে কাজ করে। বার্লিনের প্রয়োজনের ৯০ শতাংশ জ্বালানি এখান থেকে যায়। রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ করে দেওয়ার পর এই শোধনাগারের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।
ইউক্রেন যুদ্ধের আগে জার্মানির এক তৃতীয়াংশ তেল আসত রাশিয়া থেকে। ২০২১ সালের নভেম্বরে প্রতিদিন ছয় লাখ ৮৭ হাজার ব্যারেল তেল রাশিয়া থেকে এসেছে। যে শোধনাগারে রাশিয়া থেকে তেল আসত বা এখন কাজাখস্তান থেকে আসবে, তা পশ্চিম জার্মানির পাইপলাইনের সঙ্গে যুক্ত নয়। তাই এই শোধনাগারটি তার ক্ষমতার তুলনায় মাত্র ৬০ শতাংশ কাজ করতে পারছিল।
কাজাখস্তানের তেল আসার পর এই শোধনাগার পুরো ক্ষমতা নিয়ে কাজ করতে পারবে এবং লাভজনকও হবে।
যে পাইপলাইন দিয়ে কাজাখস্তান থেকে তেল আসবে তা রাশিয়ার মধ্যে দিয়ে গেছে। ফলে এখান থেকে তেল আনা হলে রাশিয়াও অর্থ পাবে। পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার ওপর প্রচুর কড়াকড়ি আরোপ করেছে। দামের সীমাও বেঁধে দিয়েছে। এই অবস্থায় অর্থ তাদের কাছে খুবই জরুরি।
এই তেল রাশিয়ার মধ্যে কয়েক হাজার কিলোমিটার পাইপলাইনের মধ্যে দিয়ে আসবে। ফলে বলা যায়, রাশিয়ার সম্মতি ও ইচ্ছের ওপর জার্মানিতে তেল আসা নির্ভর করছে।
কিন্তু এর চেয়েও বড় কথা, কাজাখস্তান থেকে তেল প্রথমে রাশিয়ায় আসবে। সেখানে রাশিয়ার তেলও তার সঙ্গে মিশবে। তারপর তা জার্মানিতে আসবে। এই ব্লেন্ডিং বন্ধ করা সম্ভব নয়।
জার্মানির অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাশিয়ার কিছু তেলও জার্মানিতে এসে পৌঁছবে। তা ঠেকানো যাবে না। কিন্তু বড় কথা হলো, কোনো অর্থ সরাসরি রাশিয়াকে দেওয়া হচ্ছে না। তেল কাজাখস্তান থেকে কেনা হচ্ছে, অর্থও তারা পাচ্ছে।